ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শখের জীবন, জীবন শখের

প্রকাশিত: ০৬:৪২ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

মাইকসন দম্পতিকে আমি কমবেশি এক যুগ ধরে চিনি। প্রতি ক’ মাস অন্তর কোনো না কোনো কারণে তাঁদের কে আমার অফিসে আসতে হয়। অনেক সময় তারা আসেন কোনো কারণ ছাড়াই। কোনো ওষুধের দরকার নেই, ভালোই চলছে সব কিছু। আমি বলি, `কি করতে পারি তোমাদের জন্য?` এক গাল হেসে তারা বলেন, “ডাক্তার তোমাকে দেখতে এসেছি। ভাবলাম খানিকটা গল্প করে যাই।”

তারা মনে করেন আমি একজন আকর্ষণীয় মানুষ। আমি সারা দুনিয়া ঘুরে কেমন করে এখানে এসেছি তা তাঁদের আগ্রহের ব্যাপার। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁদের অনেক আগ্রহ। তারা মনে করেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। তাঁদের কথা শুনে আমার চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে। তারা তাতে আনন্দ পান। তারা জানে যে আমি একজন স্বপ্নচারী মানুষ।

আমার কাছে এই দম্পতিও বড় আকর্ষণীয়। জেমস আর টারা মাইকসন গত ৪৫ বছর ধরে বিবাহিত। হাই স্কুল থেকে একজন আরেকজনকে জানে-চেনে। বয়সের খুব একটা হের ফেরও নেই। এদেশে যাকে বলে একজন আরেক জনের ‘সুইট হার্ট’। বেড়ে উঠেছেন কলোরাডোর ছোট্ট এক শহর ‘এসপেনে’। ছবির মতো শহর। গল্পের মতো জীবন।

Doctoreজেমস হাইস্কুল শেষ করে চলে আসেন নিউ ইয়র্কে। সাথে আসে টারা। একজন সাংবাদিক হিসেবে জীবন শুরু। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় টাইম স্কয়ারে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে মারাত্মক আহত হন। অনেক দিন থাকতে হয় বিছানা বন্দী। সে সময় টারা তাঁর পাশে ছিল সর্বক্ষণ। ছায়ার মতো। একটা ছোট চাকরি করে সে সংসার চালিয়েছে, জেমসকে দেখে রেখেছে। জেমস ভালো হয়ে ওঠার পর `রচেসটার` নামের এক শহরে এসে `কোডাক` কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। সেই থেকে আলোকচিত্রের প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক।

মাইকসনদের জীবনে অনেক শখ

সারা দুনিয়া ঘুরে ছবি তোলার ভীষণ সখ তাঁর। কিন্তু, শারীরিক কারণে খুব বেশি ভ্রমণ করতে পারেন না জেমস। এ শহরে আছেন প্রায় দু যুগ। জীবনটা এ শহরে শেষ হবে বলে তাঁর বিশ্বাস।

অবসর জীবন বলে কোনো কিছু এ দম্পতির অভিধানে লেখা নেই। দু’জনেই পাল্লা দিয়ে বই পড়েন। জেমস কাঠের খেলনা বানান সময় পেলেই। তাঁদের নিজেদের কোনো সন্তান নেই। তারা  কাঠের চমৎকার খেলনা গুলো শিশুদের হাসপাতালে দিয়ে আসেন অসুস্থ বাচ্চাদের জন্য। টারা খুব চমৎকার উলের কাজ করেন। উল দিয়ে কত কিছু যে সে বানাতে পারে সে এক বিধাতাই জানেন। উলে বোনা ছোট ছোট কাজ অশুস্থ শিশুদের জন্য দান করে দেন।

মাইকসনদের জীবনে অনেক শখ। অবসর কাটানোর জন্য কোনো চিন্তা নেই তাঁদের। তাঁদের জীবন ছোট ছোট শখে ভরা। এ সব ছোট ছোট শখগুলো তাঁদের এক স্বর্গীয় সুখে ভরে রাখে। কত ভাগ্যবান তারা!

( আজ টারা মাইকসন আমার জন্য ছোট একটা উপহার নিয়ে এসেছেন। আমিও একজন ভাগ্যবান মানুষ।)

লেখক : ডা. বিএম আতিকুজ্জামান, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিভাগীয় প্রধান, ফ্লোরিডা হাসপাতাল, ফ্যাকাল্টি, কলেজ অব মেডিসিন, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন