মাগফিরাতের চাদরে আবৃত করে নাও
আজ পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের প্রথম রোজা। এ মাগফিরাতের দশকে প্রতিটি মুমিনের কামনা থাকে আল্লাহপাক যেন তাকে মাগফিরাত দান করেন এবং জান্নাতের স্বাদ গ্রহণ করান। এছাড়া প্রতিটি মুমিন হৃদয় এ মাসে যেমন লাভ করে আল্লাহপাকের জান্নাতের প্রশান্তি তেমনি তার আধ্যাত্মিক বাগান এ মাসে নানান ধরণের ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে ওঠে।
আমরা যদি আমাদের পরিবারগুলোকে জান্নাত সদৃশ বানাতে চাই তাহলে পবিত্র এ রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে।
পরিবারের কর্তা বলে শুধু নিজে রোজা রাখলেই চলবে না বরং পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে যেমন রমজানের রোজা রাখতে হবে তেমনি অন্যান্য ইবাদতের প্রতিও দৃষ্টি দিতে হবে। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে বাঁচাও’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬)।
তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য সে যেন কেবল নিজেই মুত্তাকি না হয় বরং সে নিজে এবং পরিবারের সকলকে পুণ্যবান-মুত্তাকি করে গড়ে তোলে। সব ধরনের পাপ ও খারাপ থেকে রক্ষা পেতে পুরো পরিবারকে সঠিক ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। আমরা যদি আমাদের সন্তানদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় লালিত-পালিত করি তাহলে পরিবার, সমাজ, জাতি, দেশ সর্বত্রই যে শান্তি বিরাজ করবে এটা নিশ্চিত, এছাড়া প্রতিটি ঘরই জান্নাতে পরিণত হবে এবং থাকবে না কোনো নৈরাজ্য আর অশান্তি।
বর্তমান যেদিকে তাকাই শুধু অশান্তি আর অশান্তি। এমনটি সামান্য কারণে কাউকে হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না। এসব অস্থিরতার মূল কারণ আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা। এর মূল কারণ হল আমরা মহান সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে বসেছি আর এ কারণেই সমাজে এত অস্থিরতা বিরাজ করছে। সব ধরনের পাপ থেকে দূরে থাকতে রমজানের ইবাদত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা রমজান প্রকৃত রোজাদরাকে নিষ্পাপ করে দেয়। তাই আমাদের উচিত হবে রমজানের দিনগুলোকে ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করা।
মুসলিম জাহানের প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-সবল নর-নারী এ পবিত্র মাসে ইবাদতের নিয়তে ছোবহে ছাদেক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার পানাহার এবং স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলন হতে বিরত থেকে রোজা পালন করে থাকেন। রমজান হলো একজন মুমিনের ফসল তোলার মাস। সারা বছর সে যে ইবাদত করে তার চূড়ান্ত ফল লাভ করে এই রমজানে।
পবিত্র রমজান লাভের যাদের সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে, তাদের উচিত, অবজ্ঞা অবহেলা আর কোন প্রকার বাহানার আশ্রয় না নিয়ে রোজা রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। কেননা, মানুষ মরণশীল, অতএব যে রমজান আমরা লাভ করেছি তা হয়তো জীবনে দ্বিতীয়বার ফিরে না আসার সম্ভাবনাই বেশি।
রমজান এমন একটি মাস, যে মাসের সাথে অন্য কোন মাসের তুলনা চলে না। পবিত্র কোরআন করিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘রমজান সেই মাস যে মাসে নাযিল হয়েছে কোরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান অথার্ৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদিস্বরূপ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসকে পায় সে যেন এতে রোজা রাখে’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।
প্রত্যেক রোজাদারকে গভীরভাবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা আদায়ের অর্থ কতগুলো বিষয় থেকে বেঁচে থাকা ও কতগুলো বিষয়কে বর্জন করা। এর মাঝে বাহ্যিকতার কোন আমল নেই। অন্য যে কোন ইবাদত মানব দৃষ্টে ধরা পড়ে কিন্তু রোজা এমন এক ইবাদত যা শুধু আল্লাহই দেখতে পান, যার মূল শিকড় রোজাদার ব্যক্তির হৃদয়ে লুকায়িত তাকওয়ার সাথে সংযুক্ত। আমরা যদি আল্লাহপাকের আদেশ নিশেধ পরিপূর্ণভাবে প্রথমে নিজেরা পালন করে জীবন অতিবাহিত করি এবং পরিবারের সবাইকে সেভাবে গড়ে তুলি তাহলে আমাদের ঘর জান্নাতি ঘরে পরিণত হতে পারে। নিজেদের পরিবারগুলোকে জান্নাতি পরিবারের অন্তর্ভূক্ত করাতে চাইলে পবিত্র রমজানের বিকল্প নেই।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে মাগফিরাতের দশক থেকে পরিপূর্ণ লাভবান হওয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।
এইচআর/জেআইএম