ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

স্ফুলিঙ্গ থেকে কেন দাবানল?

প্রকাশিত: ০৫:২৪ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

ছোট্ট একটি ঘটনা। মীমাংসাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই স্ফুলিঙ্গ নিভেনি। তা থেকে সৃষ্টি হয়েছে দাবানল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি আসলে এতদূর নাও যেতে পারতো। তাহলে বেঁচে যেত একটি প্রাণ। রক্ষা পেত দোকাপাট, গাড়ি, সরকারি সম্পদ। দুর্ভোগে পড়তোনা হাজার হাজার মানুষ। কেন ছোট্ট ঘটনাটি এত বড় হল সেটি খতিয়ে দেখা  অত্যন্ত জরুরি।

ঘটনার শুরু সোমবার। এদিন বিকেলে শহরের জেলা পরিষদ মার্কেট এলাকায় একজন বয়স্ক ইজিবাইকচালকের সঙ্গে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্রের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক দোকানি এগিয়ে গেলে তার সঙ্গেও ওই ছাত্রের  বিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে পরে মাদ্রাসার ছাত্ররা এসে ওই দোকান ভাঙচুর করে। তখন মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। ওই সংঘর্ষে আহত মাসুদুর রহমান (২০)  গতকাল ভোররাতে মারা যান।  মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ার ছাত্র ছিলেন তিনি।

মৃত্যুর খবর জানার পর গতকাল সকালে ওই মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা সকাল সাড়ে আটটার দিকে শহরের মঠের গোড়া এলাকায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে তারা বিভিন্ন সড়কে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ করেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের প্যানেল বোর্ডও ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসার ছাত্ররা শহরের হালদারপাড়া এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, পুরাতন জেল রোড এলাকায় সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন, পুরাতন কাচারি পুকুর এলাকার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে থাকা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহমুদুল হক ভূঁইয়ার বাড়িতে হামলা করে। পুলিশের গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। এমনকি মাদ্রাসার ছাত্ররা শহরের ফকিরাপুলের ওপর ব্যারিকেড দিয়ে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সদর থানার পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রাণহানি এবং সম্পদ ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ড ঘটে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শুরুতেই যদি ঘটনাটির মীমাংসা হতো তাহলে এতদূর গড়াতো না। মাদ্রাসা ছাত্রের সাথে কোনো অন্যায় হয়ে থাকলে সেটির মীমাংসা করার জন্য তো শান্তিপূর্ণ উপায় ছিল। তা না করে দোকানে দোকানে মাদ্রাসা ছাত্রদের একজোট হয়ে হামলা করাটা কি ঠিক হয়েছে? এর জের ধরেই পাল্টা হামলা হয়েছে। এবং ঘটেছে বিয়োগান্তক ঘটনা। রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কিন্তু সরকারি সম্পদ, বিশেষ করে উপমহাদেশের বিখ্যাত সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন, পুরাতন কাচারি পুকুর এলাকার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে থাকা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় কেন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হল সেটিও বোধগম্য নয়। আমাদের দেশে মাদ্রাসা ছাত্রদের মানুষ অন্য চোখে দেখে। তাদের কাছ থেকে শান্তিপূর্ণ, সহনশীল আচরণই কাম্য।  ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু ক্ষোভ প্রকাশের শীলিত ভাষা প্রয়োগ করা হলে ঘটনা এ পর্যন্ত গড়াতোনা সেটি নিশ্চিত করেই বলা যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এর আগেও আমরা উগ্রবাদী তৎপরতা দেখেছি। মাদ্রাসা ছাত্রের সাথে ওই ঘটনা ঘটার পর পুলিশ কেন আঁচ করতে পারলোনা এটি অনেকদূর যেতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশকে আরও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে নানাভাবেই পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলার অপপ্রয়াস রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর আপিল রিভিউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ইতিপূর্বে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাঈদীকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে কেন্ত্র করে দেশব্যাপী এক অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়। ঝরে যায় অনেক প্রাণ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটি কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে পুলিশকে। স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টি হওয়ার আগেই তা নিভিয়ে ফেলার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা সতর্ক থাকতে হবে।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন