‘আমি নারী, আমি পারি’
৮ মার্চ নারী দিবস আসে প্রতি বছর। তবে কেবল একটি দিন হয়ে। ১৮৫৭ সালের নারী শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিনটি এখন বেগুনি রঙের উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে এ দিন আর উৎসব সকল নারীদের জন্য কি- কথাটা ভাবলে একদিনের জন্য নারীর রাজত্ব অফিস পরিবেশগুলোকে বড় হেয়ালিপনা মনে হয়। নারী দিবসের রং নির্ধারিত হয়েছে বেগুনি ও সাদা, যা নারী অধিকারের প্রতীক। বেগুনি ও সাদা রং সুবিচার ও মর্যাদা নির্দেশ করে। ১৯৮৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ লেখক ও নারীবাদী অ্যালিস ওয়াকারের প্রশংসিত উপন্যাস ‘দ্য কালার পারপল’ বইটি এই রং নির্ধারণে অনুপ্রেরণা জোগায়। এ বইতে তিনি নারীদের অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন। ধারণা করা হয়, সেখান থেকেই নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে গেছে বেগুনি-সাদা রং। এ দিবসকে ঘিরে সভা, সমাবেশ ও সেমিনারে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়। কিন্তু নারীর অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা কতটুকু প্রতিষ্ঠিত তা নারীর ক্ষমতায়ন দিয়ে প্রমাণ করা অনেকটা দুরুহ ব্যাপার।
নারী এগিয়ে যাচ্ছে, একথা যেমন ঠিক, তেমনি প্রযুক্তির এ যুগে এসেও অনেক নারীকে পরনির্ভরশীল জীবনযাপন করতে হচ্ছে, এটাও ঠিক। আমাদের চারপাশে বহু নারী রয়েছেন, যারা নিজের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। নারীর উন্নয়ন আর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আবার এর বিপরীত চিত্রও আছে। কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে নারীর আত্মবিশ্বাসের অভাব ‘আমি নারী তাই এ কাজ আমার দ্বারা হবে না।’ এ ধরনের মানসিকতা নারীকে পিছিয়ে দেয়, যদিও আজকাল এ মানসিকতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারী বড় ধরনের ভূমিকা রাখলেও অনেক ক্ষেত্রেই নারীর অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। কর্মক্ষেত্রে, চলারপথে, এমনকি ঘরের মধ্যেও নারীরা নির্যাতিত এবং বৈষম্যেরও শিকার হচ্ছে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নারীর অবস্থান বর্তমানে উজ্জ্বল ও সদৃশ্যমান। অতীতের থেকে আমরা নারী অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি।
একদিকে নারীর অগ্রযাত্রা অপরদিকে নারীরা এখনও পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একটি জরিপে দেখা গেছে দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ নারী তাঁরা স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক এবং ৫৩ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
নারী নির্যাতন যে শুধু বাংলাদেশে হয় এমন নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে নারীর সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বাড়লেও নির্যাতন রোধ চোখে পড়ার মতো সম্ভব হয়নি।বর্তমান সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে কাজ চলছে। তবে নারী নির্যাতন বন্ধে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা বাড়াতে হবে। যাতে করে নারীর আত্মসম্মান বাড়ে এবং নিজের অধিকার বুঝতে পারেন। তবে সবার আগে প্রয়োজন আমাদের সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। তাহলেই নারী নির্যাতন হ্রাস পাবে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে।
তাই মেধা মননে প্রজ্ঞাবান নারীরা বেগুনি সাজে আয়নাতে দাঁড়িয়ে নিজের জায়গায় সাধারণ নারীকে দেখুন।অধিকার আদায়ে নারীর নিজেকে জানান দিতে হবে।জানান দিতে হবে, 'আমি নারী আমি পারি/শুধু সৃষ্টিই নয় জানি ধ্বংস/আমি যে মহাশক্তির অংশ /আমি পারি প্রেমে বাঁধতে /পারি ভবিষ্যৎকে মুঠোয় ধরতে /হতে পারি,ক্ষুদ্র কিন্তু উচ্চ আমার আশা/আমি স্বাধীন/ আমি মুক্ত তাই আকাশে ভাসা।'
লেখক: শিক্ষার্থী।
এইচআর/জেআইএম