এখনো গেল না পে-স্কেলের অসন্তোষ
পে-স্কেল নিয়ে এখনো অসন্তোষ রয়ে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু অসন্তোষই নয় রীতিমত আন্দোলনে আছেন ২৬ ক্যাডারের পেশাজীবীরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কলেজ শিক্ষকসহ শিক্ষাঙ্গনের আন্দোলনের কারণে চাপের মুখে আছে ৫৬ লাখ শিক্ষার্থী। অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ১৫ জানুয়ারি থেকে গণছুটিতে যাওয়ার কর্মসূচিও দিয়েছেন তারা। সত্যি বলতে কি একমাত্র প্রশাসন ক্যাডার বাদে বাকি কেউই এই পে-স্কেল নিয়ে সন্তোষ্ট হতে পারেননি। ফলে বেতন বাড়িয়েও আখেরে কোনো লাভ হবে কিনা এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে। অবিলম্বে এ সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে পে-স্কেলকে।
পে-স্কেল নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেও এ বিষয়ে আলোকপাত করেছি। ইতিমধ্যে পে-স্কেলের গেজেটও প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু এরপরও সমস্যার সমাধান হয়নি। বৈষম্যের অভিযোগ এনে প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ ২৬ ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারা আন্দোলনে আছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আন্দোলন করছেন। এ অবস্থায় বর্তমান পে-স্কেল যে সুবিধাভোগী একটি বিরাট অংশের অসন্তোষ দূর করতে পারেনি সেটি পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে দ্রুত এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াই হবে সমীচীন।
নতুন বেতন কাঠামোতে প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে যে বৈষম্য দেখা দিয়েছে তা নিরসন করতে না পারলে বেতন বাড়িয়েও কোনো ফল পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলার যে দাবি জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা সেটিও অত্যন্ত যৌক্তিক। এছাড়া বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল, সরকারি চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার বৈষম্যের সিদ্ধান্ত বাতিল, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল, ইউএনওকে কর্তৃত্ব দেওয়ার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত বাতিল, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ অন্যান্য যে সকল দাবি রয়েছে সরকারি কর্মকমর্তাদের সেগুলোর ব্যাপারেও আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।
আন্দোলনে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন বেতন বাড়লেও বর্তমান বেতন কাঠামোতে তাদের অবনমন করা হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশ নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটিতে যেভাবে আলোচনা হয়েছে তার প্রতিফলন নতুন পে স্কেলের গেজেটে নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোদ মন্ত্রীরা এ অভিযোগ করেছেন । আইনমন্ত্রীও বলেছেন ভেটিং যেভাবে হয়েছে সেভাবে গেজেট প্রকাশ হয়নি। নতুন বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেড-১-এ যাওয়ার সুযোগ কমবে। সরকারি কলেজের শিক্ষকদের পদ অবনমন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যরাও নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। হয়েছেন বৈষম্যের শিকার।
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় হবে মোটা অংকের অর্থ। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বেতন ভাতা পাবেন অথচ এক্ষেত্রে কেউ বেশি সুবিধা আবার কেউ কম সুবিধা পাবেন এটা হতে পারে না। আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্যের কথা এক্ষেত্রে সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। এই বিষয়টিও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। শুধু আমলা দিয়ে সবকিছু চলবে না। বেতন বাড়ানোর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে প্রশাসনে গতি আনা। কাউকে বেশি দিয়ে, কাউকে বঞ্চিত করে সেটি হবে না।
নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতাদি বাড়বে। ঢাকঢোল পিটিয়ে বেতন বাড়ালে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মওকা বুঝে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যেই বাজারে পে-স্কেলের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বলা যায় এটা শুরু হয়েছে পে-কমিশন গঠন করার পর থেকেই। এছাড়া নতুন পে-স্কেল ঘোষণার পর বেসরকারি খাতেও চরম বেতন বৈষম্য দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রেও একটি সমতা আনা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের দেখতে হবে।
এইচআর/এমএস