ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ফিরে দেখা এবং সামনে চলা

প্রকাশিত: ০২:৪২ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০১৬

৩৬৫ দিনের একটি বছর যখন শেষ হয়ে আসে তখন প্রতিটি মানুষই তার নিজের দিকে একবার হলেও তাকায়, কিছুটা হলেও ব্যক্তিজীবনের হিসাব মেলাতে চেষ্টা করে এই সময়ের সাফল্য আর ব্যর্থতার তালিকা দেখে। কারো জন্যে সেই সাফল্যের তালিকা হয়তো বেশ বড় হয়, কারো কাছে ছেড়ে যাওয়া বছরটিতে হয়তো প্রত্যাশিত সাফল্য আসেনি-এমনটিই মনে হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি যখন একটি রাষ্ট্রের জন্যে হয় তখন এর সালাতামামি করা মোটেও চারটেখানি কথা নয়। তারপরও বছর শেষে মিডিয়ায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে গোটা বছরের মূল্যায়ন করার একটি রেওয়াজ সর্বত্র চলে আসছে। আমরা যারা মিডিয়ায় দীর্ঘদিন থেকে লিখে আসছি আমাদের কারো কারো জন্যে সুযোগ আসে বছরের একটি মূল্যায়ন পাঠকদের সম্মুখে তুলে ধরার। যদিও পাঠক মোটেও আমাদের চাইতে বছরটি সম্পর্কে কম জানেন না, তারপরও অনেকেই তেমন লেখার ওপর চোখ বুলিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ও ভাবনাগুলোকে মিলিয়ে দেখেন হয়তো। এ মুহূর্তে ২০১৫ সালের ৩৬৫ দিনের কথা স্মরণ করলে অসংখ্য ঘটনার কথা সবারই মনে পড়বে- যা বছরের মূল্যায়নে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হবে। সব ঘটনার হয়তো জায়গা এই লেখায় দেওয়া সম্ভব হবে না। তারপরও মোটা দাগে বছরের উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার কথা আমরা স্মরণ করতে পারি এই লেখায়।

২০১৫ সালটি আমাদের জাতীয় জীবনে শুরু হয়েছিল প্রচণ্ড রাজনৈতিক সংঘাতকে সম্মুখে রেখেই। আমরা কেউই তখন ভাবতে পারিনি পরিস্থিতি কতোটা গুরুতর হতে পারে। তখন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে ২০ দলীয় জোট ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচির ঘোষণা করে। ঢাকাবাসী বুঝতে পেরেছিল এমন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকা সংঘাতময় হয়ে উঠবে, দেশের পরিস্থিতিও হয়তো খারাপই হবে। ৫ তারিখ ঢাকায় একটি বড় ধরনের অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নিয়ে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। লন্ডন থেকে তারেক রহমানের প্রেরিত ভিডিও বার্তা থেকে পরে জানা গেছে যে সেই আগমন এবং অবস্থানের পেছনে ঢাকা দখলসহ আরও কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ছিল নেতৃত্বের মূল লক্ষ্য। তবে সরকার বেশ কৌঁসুলি এবং শক্ত অবস্থানে থাকায় ঢাকায় তেমন কোনো কর্মসূচি পালনের সুযোগই তাদের হয় নি। এর প্রতিবাদে বিএনপির চেয়ারপার্সন গুলশান দলীয় কার্যালয় থেকে আকস্মিকভাবেই অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন, তিনি নিজেও দলীয় কার্যালয়েই অবস্থান নিলেন। অবশ্য তিনি কেন এভাবে নিজের বাসভবন ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিলেন তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া না হলেও ধারণা করা হচ্ছিল যে, তার এমন অবস্থানটি দেশি-বিদেশি সকলকে তার প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলবে এমন ভরসাই হয়তো করা হয়েছিল। বাস্তবে কিন্তু তা হয়নি। অধিকন্তু তার ডাকা ৯৩ দিনের টানা অবরোধ ও হরতাল ক্রমেই অর্থহীন হয়ে পড়ে, যদিও পেট্রোল বোমা এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগে সাধারণ যাত্রীর পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ২০১৩ সালের মতোই অব্যাহত ছিল।

মানুষ আতঙ্ক ও মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েও রুটি-রুজির জন্যে ঘর থেকে বের হতে থাকে। দেশে-বিদেশে বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থান সমালোচিত হতে থাকে, দলীয় নেতারা গোপন স্থান থেকে বিপ্লব সংঘটিত করার মতো বার্তা প্রেরণ করতে থাকেন- যা মোটেও সমর্থনযোগ্য হচ্ছিল না। তেমন পরিস্থিতিতে ৯৩ দিন দলীয় অফিস থেকে বের হয়ে আদালতে হাজিরা শেষে বেগম খালেদা জিয়া ব্যর্থ আন্দোলনের গ্লানি নিয়ে নিজ বাসভবনে ফিরে যান। ৯৩ দিনের অবরোধ ও হরতাল আপনাআপনিই থেমে যায়,  আন্দোলন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়, তবে ৯৩ দিনের  অবরোধ ও হরতালে সব চাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের পরিবহন সেক্টর এবং সাধারণ কর্মজীবী মানুষ। দেশে তিন মাস স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকায় গোটা অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে আসে তখন অর্থনীতিতে নতুনভাবে গতিবেগ সৃষ্টি হতে থাকে, জনজীবনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে, রাজনৈতিকভাবে বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট মস্তবড় সংকটে পড়ে। তাদের দলীয় কর্মীগণ নানা ধরনের মামলায় জড়িয়ে পড়েন, অনেকেই পালিয়ে বেড়াতে থাকেন, বার বার ব্যর্থ আন্দোলনে হতাশ হয়ে পড়েন, দল গঠনের কাজে বিএনপি বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করতে পারে নি। মূলত নিয়মতান্ত্রিক ধারার আন্দোলন ছেড়ে যখন কোনো দল বা জোট চোরাগোপ্তা হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত বা যুক্ত হয়ে পড়ে তখন এর বহুমাত্রিক বিপর্যয় ঠেকানো সেই দল বা জোটের জন্যে মোটেও সহজ কাজ নয়। বিএনপি গোটা ২০১৫ সাল জুড়ে সেই সংকটেই থেকেছে।

একই অবস্থা ঘটেছে জামায়াতের ক্ষেত্রেও। জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে ২০১১ সাল থেকে যে সব গোপন প্রস্তুতি নিয়ে তাদের তরুণদের মাঠে নামিয়েছিল তাতে দেশে নানা সংঘাত ও হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা জড়িয়ে পড়ার ফলে তাদের সম্পর্কে যে ধারণা দেশব্যাপী সৃষ্টি হয়েছিল তাতে রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের ভাবমূর্তির সংকট নতুনভাবে সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এরাই এক সময় দেশে ‘গৃহযুদ্ধ শুরুর’ হুমকি দিয়েছিল। ২০১৩ সালে সে ধরনের ঘটনা যথেষ্ট ঘটানোও হয়েছিল তাদের পক্ষ থেকে। ২০১৫ সালের ৯৩ দিনের তথাকথিত আন্দোলনেও সেগুলোর পুনরাবৃত্তি তারা ঘটিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কোনোভাবেই বন্ধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় নি। ফলে কর্মীরা গোটা ২০১৫ সালে তাদের আগের বিশ্বাসও ভরসা খুঁজে পায় নি। তবে তাদের বিরাটসংখ্যক নেতাকর্মী এখন আত্মগোপনে থেকে নানা ধরনের কাজ করছে, ভিন্ন কোনো প্রস্তুতি তারা নিচ্ছে কিনা-তা ভবিষ্যতে হয়তো জানা যাবে। তাদের মুখে ২০১৫ সালে আগের মতো হুমকি-ধামকি শোনা যায় নি। তবে সাকা চৌধুরী এবং আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার বিষয়টি জামায়াত এবং বিএনপির কাছে আকাশ ভেঙ্গে পড়ার ঘটনার মতোই অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। ২০১৫ সালের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির বেহাল অবস্থা। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুই মাসের অধিক সময় লন্ডনে গিয়ে অবস্থান করেছেন, তার দেশে ফেরা না-ফেরা নিয়ে নানা কথা তখন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এর অবসান ঘটিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন, বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট স্বস্তি প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে সবল অবস্থানে থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে দলকে গোছানোর কোনো উদ্যোগ দলটি নেয়নি। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন স্থানে জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেককে দলে গ্রহণ করে নেয়ার। বিষয়টি নিয়ে দেশে বিস্তর সমালোচনা  শুরু হলে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এ ধরনের দলত্যাগীদের আওয়ামী লীগে না নেওয়ার কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেন।

২০১৫ সালের অন্যতম বড় অর্জন হচ্ছে এই সময়ে বাংলাদেশের নিন্ম-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বীকৃতি লাভ করা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উর্ধ্বমুখী সামাজিক বিভিন্ন সূচক, আমদানি-রফতানির ধারা অব্যাহত থাকা, বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিটেন্সের প্রবাহ অব্যাহত থাকা ইত্যাদি সকল সূচকে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, ডিজিটাল ইত্যাদিতে অধিকতর উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ এর বছর শুরুতে যে আশঙ্কায় ছিল, বছরের শেষ দিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি বড় ধরনের স্বস্তির জায়গা এসেছে-এটি প্রমাণিত হয়েছে। তেমনটি না ঘটলে এ বছর ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল প্রদান করা সরকারের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হতো না। ৭ম বেতন স্কেল থেকে ৮ম জাতীয় বেতন স্কেলের তফাৎটাও সকলে স্বীকার করছেন। দেশের বাজেটের আকার এবং পরিধিও ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এ বছর পদ্মা সেতুর মতো এতো বিশাল কর্মযজ্ঞ নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করা সম্ভব হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সকল অপবাদ ঘুচিয়ে বাংলাদেশ আত্মমর্যাদার একটি আসন সৃষ্টি করতে পেরেছে এটি গর্বের বিষয়। এমন একটি মেগা প্রকল্প চালু করার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেশের আর্থ-সামাজিক জীবনে পড়তে দেখা যায়নি, দ্রব্যমূল্য বাড়েনি, কোথাও লেভিও বসানো হয় নি। শুধু পদ্মা সেতুই নয়, ঢাকা শহরে বেশ কিছু উড়ন্ত সেতু, মেট্রোরেল, চট্টগ্রামে টানেল তৈরি, বেশ কিছু সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, রূপপুর আণবিক বিদ্যুৎ, প্রকল্প তৈরির কাজ- সবই ২০১৫ সালে শুরু করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিষয়টি ভাববার মতো ঘটনা হিসাবেই চিহ্নিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এসব মেগা প্রকল্পের কাজ যতো দ্রুত এগিয়ে চলবে ততো দেশে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে চলবে, বাংলাদেশ ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটানোর যে আশাবাদ ব্যক্ত করছে তার বাস্তবভিত্তি ২০১৫ সালের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প থেকেই ধরে নিতে হবে।

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে অনেকটা সফল হয়েছে। প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ চুক্তি, ৬৮ বছরের ছিটমহলের মতো ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান করা গেছে। এতো বড় সমস্যার সমাধান ২০১৫ সালের বিশাল অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ একটি। লাখ লাখ মানুষ তাদের ছিটমহল জীবনের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশের নাগরিকত্ব লাভ করেছে। একই সঙ্গে মায়ানমারের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের অগ্রগতি ঘটেছে। যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে পাকিস্তানের জামায়াত এবং কতিপয় প্রতিক্রিয়াশীল দলের উগ্র আচরণের কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতল অবস্থায় এখন চলছে। এর জন্য পাকিস্তানের আইএসআই, রাজনৈতিক দল ও দূতাবাসের কোনো কোনো মহলের কর্মকাণ্ড দায়ী। বাংলাদেশ পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে নয়, গণতান্ত্রিক পাকিস্তানেরই পক্ষে। পাকিস্তান সেই ধারায় ফিরে আসলে অবশ্যই দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে, সেজন্যে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের তৎকালীন সামরিক সরকার ও বাহিনীর গণহত্যার বিষয়টি স্বীকার করে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।

২০১৫ সালে জঙ্গিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অক্রোশ প্রকাশ করতে গিয়ে বেশ কিছু মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশককে হত্যা করেছে, দুইজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে সরকারকে ‘বন্ধুহীন’ করতে চেয়েছে। তাদের আক্রমণে এই সময়ে নানা মাত্রিকতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও হামলা করার কিছু ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে জঙ্গিদের উগ্র ও বেপরোয়াভাব  পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হচ্ছে বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর পেছনে দেশি এবং বিদেশি নানা শক্তির মদদ রয়েছে, তাদের আর্থিক, কারিগরি, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি প্রণোদনায় সরকারকে সারাক্ষণ তটস্থ এবং ব্যস্ত রাখার লক্ষ্যেই এসব করা হচ্ছে। বিষয়টি সকলকেই ভাবতে হবে।

তবে বছর শেষে যে বিষয়টি সকলকে আশাবাদী করেছে তা হচ্ছে ২৩৪টি পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। দেশে যখন রাজনীতিতে ভাটা চলছিল তখন পৌর নির্বাচনের উদ্যোগ ভীষণভাবে প্রশংসা পাওয়ার দাবি করার মতো ঘটনা। বিএনপি এতোদিন অভিযোগ করে আসছিল যে, সরকার রাজনীতিতে তাদের কোনো স্পেস দিচ্ছে না। এই অভিযোগ অনেকের কাছে সহানুভূতি, সমর্থন বাড়ালেও বাস্তবে অতীতে বিএনপির নির্বাচন বিরোধী অবস্থানের কারণেই পরিস্থিতির এমনটি ঘটেছিল। স্পেস কমে যাওয়ার কারণ সেখানেই নিহিত রয়েছে। বিএনপি যদিও বিষয়টি সেভাবে দেখছে না, স্বীকারও করছে না, দোষটা এককভাবে সরকারের ওপর চাপাচ্ছে। তবে সেই স্পেসের সংস্থান এখন বোধ হয় সরকার পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করে দিয়েছে।

নির্বাচনের ফলাফল ইতিমধ্যেই সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিএনপি নির্বাচনে তেমন ভালো করতে পারেনি। কেন পারে নি তার বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের জন্যে সব তথ্য উপাত্ত পেতে আরও কিছুদিন সময় নিতে হবে, তবেই বোঝা যাবে তাদের সমস্যা কোথায় ছিল। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচানটি অংশগ্রহণমূলকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ভোটারের উপস্থিতিও ভালো ছিল, নির্বাচনটি সকলকে আশাবাদী করবে বলে মনে হয়। আওয়ামী লীগ প্রত্যাশার চাইতে বেশি ভালো করেছে এটি ভালো সংবাদ। তবে আওয়ামী লীগের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। সম্মুখে জাতীয় নির্বাচন, সেই প্রস্তুতি নিতে অনেক কিছু করার বাকি রয়ে গেছে। পৌর নির্বাচনের ফলাফল যে যেভাবেই নিক, এই নির্বাচন রাজনীতির জন্যে ২০১৫ সালের শেষে এক ধরনের স্তস্তির আবহ তৈরি করেছে। এখন সকল দলের উচিত হবে ২০১৬ সালে রাজনীতিতে স্বস্তির পরিবেশ যেন আরও বৃদ্ধি পায় সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখা। নতুন বছরের শুভেচ্ছা সকলকে।

patoary

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন