ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

পায়রা সেতু: বদলে যাবে দক্ষিণের জনপদ

সম্পাদকীয় ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:০৮ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০২১

সজীব ওয়াফি

এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেইড প্রযুক্তিতে দেশের দ্বিতীয় পায়রা সেতু। মেগা প্রকল্পের অন্তর্গত পটুয়াখালীর পায়রা নদীর উপর নির্মিত এই সেতু ইতিমধ্যে যুক্ত করেছে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা। বড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে অর্থনীতিতে। এটি চালু হওয়ায় দেশের যে কোন স্থান থেকে সর্বদক্ষিণে উপকূলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ হয়ে গেছে। সড়ক পথের যাত্রী ও যানবাহন চালকদের ঘন্টার পর ঘন্টা আর অপেক্ষা করতে হবে না। ভোগান্তি কমবে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের। সামগ্রিক প্রভাব ফেলবে জিডিপিতে।

১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট সেতুটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। যার উভয় দিকে ৭ কিলোমিটার জুড়ে আছে অ্যাপ্রোচ সড়ক। আছে রেল যোগাযোগের সুবিধা। নদীর মধ্যে মূল ব্রিজ মূলত ৬৩০ মিটার। যা তৈরি হয়েছে ইস্পাত ও কংক্রিট দিয়ে। কুয়েত সরকারের অর্থায়নে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে চায়নার লংজিয়ান চাইনিজ রোড এ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন সেতুটি নির্মাণ করছে। পায়রা নদীর লেবুখালী নামক স্থানে লেবুখালী-পটুয়াখালী যুক্ত করায় সেতুটি লেবুখালী সেতু হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে। অন্যদিকে গুণীজনেরা সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ঊনসত্তরের শহিদ আলাউদ্দিনের নামে সেতুটির নামকরণ দাবি করে ছিলেন। যদিও সেই নামকরণ আর শেষ পর্যন্ত হয়নি।

পায়রা নদীর উপরের চারলেনের এই সেতু কেবল দিয়ে দুইপাশে সংযুক্ত। মাঝখানে আছে একটি মাত্র পিলারের ব্যবহার। বসানো হয়েছে পদ্মা সেতু থেকেও বড় দু'টি স্প্যান। জলতল থেকে সেতুর উচ্চতা ১৮ দশমিক ৩০ মিটার। ফলে নৌ চলাচলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেতু আলোকিত করা হবে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উপর শাহ আমানত সেতুও এই এক্সট্রাডোজ ক্যাবল প্রযুক্তিতে নির্মিত। ২০১২ সালের ৮ মে পায়রা সেতু একনেকে পাশ হয়। পরবর্তী বছর ১৯ শে মার্চ পায়রা নদীর দক্ষিণ পাড়ে ফেরিঘাটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর দীর্ঘদিনে আর অগ্রগতি হয়নি মোটেই। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে এসে। উদ্বোধন ঘটায় অর্থনৈতিক পরিবর্তনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রায় চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে বর্তমানের অবস্থান।

সেতু উদ্বোধন হওয়ায় পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার কয়েকটি উপজেলা এবং সাগর কন্যা কুয়াকাটার সাথে বরিশাল তথা সমগ্র বাংলাদেশের সাথে তৈরি হলো সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। আগের চেয়ে ২-৩ ঘন্টা কম সময়ের ভিতরেই সৈকতে পৌছতে পারবে পর্যটকেরা। ব্যবসায়িক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আসবে বড় রকমের পরিবর্তন। নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক ব্যবস্থায় বিভাগীয় শহরের সাথে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে সাধারণ জণগণ।

চিকিৎসা সেবা পেতেও ঝামেলা ঝক্কির মুক্তি মিলবে অবহেলিত দক্ষিণ জনপদের। সেতুর পাশাপাশি লেবুখালী এলাকায় তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। পাশেই চলছে শেখ হাসিনা সেনানিবাসের কাজ। দিনে দিনে সম্প্রসারণ ঘটছে নানান ধরনের ব্যবসায়। রাস্তার পাশে তৈরি হচ্ছে হোটেল, তেলের পাম্প। জমির মালিকেরাও তাদের জমি ঘিরে অর্থনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে জোরেশোরে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

বহুল আকাঙ্ক্ষিত পায়রা বন্দর পুরোদমে চালু হওয়া নির্ভর ছিলো পায়রা সেতুর ওপর। সেতুটি চালু হওয়ায় অত্রাঞ্চলে দ্রুত শিল্পের প্রসার ঘটবে। আগের তুলনায় সময় কম লাগায় কমে আসবে খরচও। কমবে ঢাকামুখী পণ্যের মূল্য। পাওয়া যাবে খুব সহজেই। তৈরি হবে টাইম ভ্যালু মানি। চাঞ্চল্যময় হয়ে উঠবে দক্ষিণের অর্থনীতি। উন্নয়নে রূপান্তর ঘটবে দুর্গম উপকূলবাসীর জীবনযাত্রার মান।

ধান, তরমুজ, বাঙ্গিসহ মৌসুমী কৃষি পণ্য সেতু হয়ে সহজেই বরিশালে এসে দূরদূরান্তের বাজারে পৌঁছতে পারবে। বাজারজাতকরণে শাক সবজি পঁচে যাওয়ার ভয় আর থাকবে না। কৃষকরাও পাবে ন্যায্য দাম। শৃঙ্খলা তৈরি হবে সুষম বন্টনের। মোদ্দাকথা যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণের মাধ্যমে সম্ভাবনা তৈরি হবে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে।

খরস্রোতা পায়রায় সেতুর একটি পিলার ব্যবহারের ফলে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু সার্বিক অবকাঠামোগত কারণে খরস্রোতে ভাঙ্গনের কবল থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে পায়রা পাড়ের মানুষেরা। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা পাবে গ্রামের পর গ্রাম। উদ্বাস্তু হওয়ার চিন্তা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলেছে তাদের।

দীর্ঘ অপেক্ষার সমাপ্তি হয়ে পায়রা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। এখন কেবল চোখের সামনে আলাদীনের চেরাগের মতো দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিবর্তনের অপেক্ষা। জিডিপি'র ১০ শতাংশের ১৫ থেকে ২৫ ভাগ যোগান আসবে এই এক সেতু পুরোদমে ভূমিকা রাখতে পারলেই। যাতায়াত, শিল্প, বাণিজ্য ও পর্যটনে অকল্পনীয় বিপ্লব দক্ষিণের জনপদে অবশ্যম্ভাবী। পায়রায় চলুক দুর্দান্ত সোয়ার!

লেখক : প্রাবন্ধিক।

এইচআর/জিকেএস

আরও পড়ুন