ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নিন্দনীয়

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৪:৩৬ এএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত বিষয়ে তার এমন মন্তব্যে হতবাক হয়েছেন দেশের মানুষ। যিনি এক সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন তার কাছ থেকে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে এ ধরনের ন্যক্কারজনক মন্তব্য ধারণারও অতীত। অথচ অবলীলায় তিনি সেটি করেছেন। শুধু তাই নয় বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও তিনি কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়েও।

সোমবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দলের একটি সহযোগী সংগঠনের সমাবেশে  বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন। তিনি এমন সময়ে এসব কথা বললেন যখন যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার দলের ও মন্ত্রিসভার সাবেক দুইজন সদস্যের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে।  এ নিয়ে পাকিস্তানেও তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কারণ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার পাকিস্তানের জন্য নানা কারণেই অত্যন্ত বিব্রতকর। একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারের কারণে সাক্ষ্য-প্রমাণে পাকিস্তানি বর্বরতার বিষয়টি আবারো বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে। একাত্তরে পাকিস্তান নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে যেভাবে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছিল তা নিয়ে কোনো আলোচনা চায় না পাকিস্তান। এতে তাদের ভেতরটা বেরিয়ে আসে। নতুন প্রজন্ম জেনে যায় পাকিস্তানের বর্বরতার ইতিহাস। এ কারণে বরাবরই পাকিস্তান এবং তাদের এ দেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করতে চায়। বিতর্কিত করকে চায় নানাভাবে। দুঃখজনক যে, একই ধরনের কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কণ্ঠেও। বস্তুত তিনি পাকিস্তান ও জামায়াতের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে।   

বেগম জিয়ার এই ধরনের মন্তব্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর আঘাত। এটা গর্হিত অপরাধ হিসেবেও বিবেচনা করছে দেশের মানুষ। একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনী গোটা বাংলাদেশকেই একটা বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিল। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি এদেশে প্রায় ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামেই রয়েছে ১১৬টি বধ্যভূমি।  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২০ মে খুলনার চুকনগরেই হত্যা করা হয় প্রায় ১০ হাজার মানুষকে।  ভারতীয় সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হবার পর বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়ে সীমান্ত অতিক্রমের জন্য এখানে এসে জড়ো হয়েছিল।

ইউরোপীয় দেশগুলোতে ‘ল অ্যাগেইনস্ট ডিনায়াল অব হলোকাস্ট’ নামে আইন আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাজি বাহিনী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে, তাকে অস্বীকার করার চেষ্টা, এমনকি গণহত্যার তীব্রতা লঘু করে দেখার প্রচেষ্টাও এই আইনে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, হলোকাস্টের তীব্রতা নিয়ে, মৃতদের সংখ্যা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি বা প্রশ্ন তোলা ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি গণহত্যার বিষয়টি  সরকার কর্তৃক স্বীকৃত। এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনোই অবকাশ নেই। যারা তুলছেন তাদের হীন উদ্দেশ্য সম্পর্কেও সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।  আমরা  মুক্তিযুদ্ধকে অবমানকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়ে বিএনপি নেত্রী দেশবাসীর কাছে তার অবস্থান স্পষ্ট করবেন বলেও আশা করি। ভবিষ্যতে যাতে কেউ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করতে না পারে সে জন্য শাস্তির বিধান রেখে ‘ল অ্যাগেইনস্ট ডিনায়াল অব হলোকাস্ট’-এর আদলে আইন করার প্রয়োজনীয়তাও জরুরি হয়ে উঠেছে।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন