ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নিরাপদ রাখতে হবে ভবিষ্যতের রাজনীতি

প্রকাশিত: ০২:৪৪ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

ক্রমাগত বৃষ্টি হতে থাকলে, সহজেই বুঝা যায়, বর্ষা এসেছে। গরম কাপড়কে নির্বাসনে পাঠিয়ে, আবারো গরম আসে। ঋতু পরিবর্তন চট করে ধরা যায়। রাজনীতির বাঁকবদল কিংবা ঋতু পরিবর্তন কি চেনা যায় সহজে? প্রশ্নটা হঠাৎ মাথায় এলো।

রাজনীতির কথা তুললে, এখন অনেকেই বলতে শুরু করবেন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে। সে নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত থাকবে কীনা, জামায়াতের প্রতীকবিহীন ভোটের লড়াইয়ে নামা আওয়ামী লীগকে সুবিধা দেবে কিনা, সেসব আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। বেগম খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনী প্রচারে নামেন, তাহলে তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের কৌশল কি হতে পারে? এটাও দেশের চলমান রাজনীতিতে কথা বলার রসদ দেবে।   

এর বাইরে, বিশ্ব রাজনীতির নানা সিদ্ধান্ত কীভাবে বদলে দিচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতি সেটাও হতে পারে আলোচনার বিষয়। সেসব আলোচনা হয়তো আমাদের ভবিষ্যত স্বার্থ রক্ষায় অনেক কাজে আসবে।   

বিশ্ব এখন অনেক ছোট। নানাভাবেই একেক দেশের স্বার্থের সঙ্গে অন্য দেশের মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে যায়। কিংবা কোন একটি বড় দেশের সিদ্ধান্ত হয়তো প্রভাবিত করে অনেক ছোট দেশকে। বেশ কিছু ঘটনা একসঙ্গে রাজনীতি শব্দের মোড়কে চিন্তাকে নিয়ে যায় দেশের বাইরে। সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্যারিসে, তাতে পেন্ডুলামের মতো ঝুলে অনুন্নত দেশের অগণিত মানুষের ভাগ্য।  

দুটি ঘটনা বলি। তার একটি রাজনীতিবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী আন্ডার সেক্রেটারি টম শেননের বাংলাদেশ সফর। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগেই বুঝতে এলেন বাংলাদেশ। খোলামেলাভাবে বললেন, একাত্তরের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার পরপরই সিনেটর কেনেডি ঢাকা সফরে এসেছিলেন। সিনেটর কেনেডি ওই সময় একটি জরুরি, সরল এবং আন্তরিক বার্তা পৌঁছে দেন। তিনি বলেন, আমেরিকা বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়। তার এই বার্তাকে কালোত্তীর্ণ আখ্যা দিয়ে শেনন বলেন, বাংলাদেশ গুরুত্ব বহন করে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ  আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।


পরে সন্ধ্যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল গণভবনে দেখা করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। টমাস শ্যানন ছাড়াও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্যএশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী- নিশা দেশাই বিসওয়াল, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী- মনপ্রিত সিং আনন্দ, ঢাকায় মার্কিন রাষ্টদূত- স্টিফেন ব্লম বার্নিকাট। মানুষগুলো গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই। বিশেষ করে এই অঞ্চলের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র যাদের হাতে দিয়ে রেখেছে, তাদের অনেকে একসঙ্গে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিধি দলকে জানান, বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন `আইএসে`র কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো `অভ্যন্তরীণ` কারণে ঘটেছে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এই খবর দেয়।

যাহোক, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের এদেশে চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বন, সবই এদেশের মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়েছিলো। এখন বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হলে, এর রাজনৈতিক মূল্যও অবশ্যই আছে। সামনের দিনগুলোতে সেই মূল্যের ফলাফল দেখা যাবে নিশ্চয়ই।   

ভাবনার অপর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের একটি প্রতিবেদন নিয়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে নানা দুর্যোগ হবে। আগামী ত্রিশ বছরে, দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ ঘর-বাড়ি হারাবে, পড়বে খাদ্য সংকটে। একই কারণে, গোটা বিশ্বের সাড়ে সতেরো কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের প্রতিবেদনটি, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে উত্থাপন করা হয়েছে।

আমরা জানি, গত ১০০ বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এমনকী বিশ্বের উষ্ণতম বিশটি বছরের মধ্যে ঊনিশটিই ১৯৮০ থেকে ২০০৯ সাল-এর মধ্যে। ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল বিশ্বের উষ্ণতম দশক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গত বছরটি ছিল ১০ বছরের মধ্যে উষ্ণতম। বিজ্ঞানীদের মতে, তাপ বাড়ায় গত দশ বছরে বেড়েছে ঝড়, বন্যা ও দাবানল। বাংলাদেশও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকছে না। নানা প্রাকৃতিক দুযোর্গে, নদীভাঙ্গনে অনেকেই হারিয়েছেন সর্বস্ব। তাদের কেউ কেউ রাজধানীতে চলে আসেন। তাদের স্থান হয় বস্তিতে। সেখানেও যাদের ঠাঁই হয় না, তারা বসত গাড়েন বাস্তার পাশে। তারা জানে না, জলবায়ু পরিবর্তন কী, এর বিরূপ প্রভাব মানে কী, কিংবা এর জন্য দায়ী কারা।  বস্তিতে যাদের আশ্রয় হয়, তারা বলবেন, নদী ভাঙনে তাদের সব গেছে। এই নদী ভাঙ্গন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফল, তা তারা জানেন না। বলতেও পারেন না।  

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই  বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের ১০ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে বিভিন্ন মাত্রায় লবণ রয়েছে। এতে খাবার পানির উৎস নষ্ট হচ্ছে। এবার বিশেষজ্ঞদের আশংকা সত্যি করে, ত্রিশ বছরে যদি তিনকোটি মানুষ সব হারায়, তারা যাবে কোথায়? তারা প্রথমে যাবে কাছের শহরে। তারপর একটু দূরের শহরে। তারপর ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো মহানগরে। সচ্ছল মানুষদের ঘরের সামনে এসে বসে থাকবে বাচ্চা-কাচ্চাসহ।  তাহলে সামাজিক পরিস্থিতি কিংবা  রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে তখন?

প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে একটা চুক্তি হয়েছে। সব দেশ তা মানবে বলে সম্মত হয়েছে। প্রাক শিল্পায়ন সময়ের চেয়ে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নিচে রাখবে বিশ্ব। উন্নয়নশীল দেশের জন্য জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দ থাকবে। দায়ী না হয়েও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশংকা রয়েছে। জলবায়ু তহবিল থেকে ঋণ নয়, অনুদান পেতে আগ্রহী বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা। অনুদান হোক কিংবা ঋণ হোক, যে তিন কোটি মানুষ সব হারাবেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য এখনই উপায় ভেবে না রাখলে, আগামীর রাজনীতি অরক্ষিত হয়ে পড়তে পারে বলেই ধারণা করা যায়। দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতার বীজ অঙ্কুরোদগমের অপেক্ষায় থেকে যেতে পারে রাজনীতির বুকে।  

লেখক : সিনিয়র নিউজ এডিটর, দীপ্ত টিভি

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন