মাস্ক পরছেন তো?
করোনা সংক্রমণের হার কমতে শুরু করলেও তা এখন অবধি ৫ শতাংশের অনেক উপরে রয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে এটা এখনও বিপদজনক হার হিসেবেই রযে গেছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে কেউ যে কোন সময়ই আক্রান্ত হযে যেতে পারেন। বিশেষ করে হাটবাজার, গণপরিবহন, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি জায়গা থেকে সহজেই সংক্রমিত হয়ে পড়তে পারেন। করোনার ডেল্টা নামক যে ভ্যারিয়েন্ট এখন আমাদের এখানে বিদ্যমান রযেছে সেটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং শারীরিক অবস্থাকে জটিল করে তুলতে পারে বলে নিশ্চয় এতদিনে আমাদের বোধোদয় হয়েছে।
গত দুই মাস যাবৎ হাসপাতালে রোগী ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল। এর বাইরে অধিকাংশ মানুষই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। সার্বিক মৃত্যুর হার কিন্ত ১.৬৯% এর মতো। তার মানে আক্রান্তের হার যত বাড়বে মৃত্যুর তালিকায় তখন নতুন করে বেশি বেশি সংখ্যায় মানুষের নাম যুক্ত হয়ে যাবে। অন্যদিকে, মৃত্যুর এই হার কিন্তু দিন দিন বেড়েই চলেছে। আগে এটা ১.৫০ শতাংশের মতো ছিল। এখন তা বেড়েছে। ফলে নিজের জন্য হলেও মাস্ক পরুন। অন্যকে মাস্ক পরতে উৎসাহিত করুন। না হলে আবার পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যেতে পারে।
করোনা পরিস্থিতি যদি আবার খারাপের দিকে যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই লকডাউন দিতে হবে। লকডাউন দিলে অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েন। ফলে লকডাউন না দিয়ে যখন উপায় থাকে না তখন অনেকে লকডাউন না দেয়ার পক্ষে নানাধরনের যুক্তি তুলে ধরেন। প্রশ্ন হচ্ছে-জীবন নাকি জীবিকা আগে?নিশ্চয় জীবন আগে। কারণ জীবনের জন্যই তো জীবিকা। জীবন না থাকলে কে রোজগার করবে? কার জন্যে রোজগার করবে? ফলে উপায় না থাকলেই তখন কেবল এই লকডাউন নামক কঠোরতার বিষয়টা সামনে চলে আসে।
অথচ আমরা যদি সকলে দায়িত্বশীল হই তাহলে কিন্তু লকডাউনের প্রয়োজনই পড়ে না। দায়িত্বশীল বলতে আমি শুধু মাস্ক পরাকেই প্রথমত গুরুত্ব দিতে বলছি। মাস্ক পরুন, কেবল মাস্ক পরুন। এতে করেই করোনার বিস্তার বন্ধ করা সম্ভব। ভালোমতো যদি আমরা সকলে মাস্ক পরি তাহলেই কেবল এটা সম্ভবপর হবে। নাকের নিচে, থুতনিতে ঝুলিয়ে বা পকেটে মাস্ক রেখে দিলে কিন্তু হবে না। বাস্তবতা হচ্ছে-অধিকাংশ মানুষ জেনে বুঝেও মাস্ক পরতে চান না। ফলে যারা মাস্ক পরছেন না তাদের জন্য আইন প্রয়ো্গ করতে হবে।তাদেরকে মাস্ক পরাতে বাধ্য করতে হবে।
লকডাউনের সময় যেমন সকল কিছু বন্ধ করে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা সফল করতে প্রানান্তকর পরিশ্রম করে চলে তার যদি ২০ ভাগও আমরা বর্তমান সময়ে প্রযোগ করতে পারতাম তাহলে করোনার বাড়বাড়ন্ত অনেকাংশেই হযতো ঠেকাতে পারতাম। শুধুমাত্র হাটবাজার, গণপরিবহন, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল অন্তত এ ৪টি জায়গায় যদি নিয়মিত এবং বিরতিহীনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মনিটরিং করা যেতো তাহলেও হয়তো আমরা করোনার আগ্রাসী বিস্তার অনেকাংশেই ঠেকাতে পারতাম। সেটা না করতে পারলে হয়তো আবারও লকডাউনের গ্যাড়াকলে পড়া লাগতে পারে। তখন সর্বশক্তি দিয়ে রাষ্ট্র করোনা বিস্তার বন্ধে চেষ্টা করবে ঠিকই। অথচ সবসময়ের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মনিটরিং করা গেলে তাতে লোকবল কম লাগে। কষ্টও কমে। জীবন ও জীবিকা তখন ঠিকঠাক সমন্বয়ও করা সহজেই সম্ভবপর হয়ে ওঠে। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নিবেদন থাকবে মাস্ক না পরার যে হিড়িক চলছে সেটার লাগাম টেনে ধরুন এখনই। এ বিষয়ে কোনোরকম ছাড় মোটেই কাম্য নয়।
পরিশেষে বলব, এতদিন ভ্যাকসিন না নেয়ার জন্য নানামহল থেকে নানারকম প্রপাগান্ডা চালিয়েছে। অথচ তারা নিজেরাই এখন ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। ফলে যাদের কথায় বা গুজবে পড়ে এতদিন আপনি টিকা নেননি দয়া করে এখন নিজের, পরিবারের ও দেশের স্বার্থে টিকা নিন। সেই সাথে মাস্ক পরুন। তাহলেই করোনার বিস্তার, করোনাজনিত জটিলতা ও প্রিয়জনের মৃত্যু রোধ করা সম্ভবপর হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা ঠিকাতে মাস্ক পরা এবং টিকা নেয়ার কিন্তু বিকল্প কিছু নেই।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ, সাভার।
এইচআর/জিকেএস