ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

যে মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয়

প্রকাশিত: ০৫:০৫ এএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫

স্যুয়ারেজের খোলা ম্যানহোলে পড়ে ইসমাইল হোসেন নিরব নামের পাঁচ বছরের এক শিশুর করুণ মৃত্যুর ঘটনাটি গোটা দেশবাসীকেই বেদনার্ত করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে যখন নিরবের স্যুয়ারেজে পড়ে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসে তখন থেকেই দেশের মানুষ উৎকণ্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করেছে কখন তাকে উদ্ধার করা হবে। এ রকম আরেকটি রাত পার করেছিল দেশবাসী গত বছর ২৬ ডিসেম্বর। এই রাত তাদের কাছে কালোরাতে পরিণত হয়েছিল। হয়েছিল প্রার্থনার রাত। কোটি মানুষ সারারাত জেগে রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মৈত্রী সংঘ মাঠের পাশে ছয়শ ফুট গভীর নলকূপের মধ্যে পড়ে যাওয়া শিশু জিহাদকে উদ্ধার চেষ্টার দৃশ্য দেখেছিলেন টেলিভিশনের সামনে বসে। সারারাত জিহাদের জন্য দেশের কোটি কোটি মা হাত তুলে প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরব ও জিহাদকে বাঁচানো যায়নি। এর চার বছর আগে শ্যামপুরে শিশু সিহাব খোলা ম্যানহোলে পড়ে করুণ মৃত্যুবরণ করে। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে বার বার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলেও কর্তৃপক্ষের কোনো টনক নড়ছে না। আর এসব মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হলেও বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় কাউকে কোনো শাস্তিও পেতে হয়নি। ফলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে।

মঙ্গলবার পৌনে ৪টার সময় নাগরদোলা দেখতে গিয়ে খোলা ম্যানহলে পড়ে যায় শিশু নিরব। রাত ৮টা ২০ মিনিটে তাকে অচেতন অবস্থায় শ্যামপুর বাজার সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কথা হচ্ছে, কে নেবে এই মৃত্যুর দায়? এটা  কি নিছক দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড? খোলা ম্যানহোলগুলোর মৃত্যুকূপে পড়ে মৃত্যু তো আসলে হত্যাকাণ্ডই। কিন্তু এই হত্যার দায় তো কেউ নিচ্ছে না। ফলে সিহাব, জিহাদ, নিরব- এভাবে মৃত্যুর মিছিল ক্রমাগত দীর্ঘ হচ্ছে।

যে দেশে শিশু রাজন ও রাকিবকে নির্মমভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার বিচার হয় মাত্র ১০ কার্য দিবসে সেই দেশে আবার ম্যানহোলের মৃত্যুকূপে পড়ে মৃত্যুর ঘটনার বিচার হয় না বছরের পর বছর গেলেও। এটা কি স্ববিরোধিতা নয়?
 নানা দিক থেকেই রাজধানী শহর বসবাসের অনুপযোগী। পথে পথে এখানে মৃত্যুর ফাঁদ পাতা। কখন কার যে কিভাবে মৃত্যু হবে কেউ তা বলতে পারবে না। ফুটপাতগুলো দখলে, অধিকাংশ ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা, রাস্তার পাশেই ওয়েলডিং কারখানা, নির্মাণ কাজ চলে পথচারীদের জন্য নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থা না রেখেই। পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গাড়ি রাখা হয় রাস্তায়। বিশেষ করে শিশুবান্ধব করে এই শহর কে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এখানে খেলার মাঠ নেই। হাঁটার পথ নেই। এভাবে আর কতোদিন?
নিরব ছিল পিতামাতার একমাত্র সন্তান। তার স্বজনদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই। আর কোনো নিরবকে যেন এভাবে নিরব হয়ে চলে যেতে না হয় তার জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মধ্যেই কিছুটা সান্ত্বনা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কুম্ভকর্ণের ঘুম কি ভাঙবে?

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন