ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

অগোছালো রক্ষণভাগ

তুষার আবদুল্লাহ | প্রকাশিত: ১০:৪৬ এএম, ২৭ জুন ২০২১

লকডাউনের পরিণতি এখন টাউন সার্ভিস বাসের মতো। ‘ডাইরেক্ট’, বিরতিহীন, সিটিং সার্ভিস বলে যাত্রী ওঠানোর পর দেখা যায়- বাসটি শুধু বাস স্টপেজই নয়, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যেন যাত্রী তুলবে। সিট ভরাট, দাঁড়ানোর রড ভরাট করে, বাসের পাদানি ও হাতল ভরাট করে নেয়। অতএব বাসের এসব ঘোষণায় যাত্রীদের বিশ্বাস নেই। করোনারও পরিণতি একই দিকে গড়িয়েছে।

সাধারণ ছুটি, বিধিনিষেধ, নিষেধাজ্ঞা, সীমিত পরিসর, শহর বিচ্ছিন্নকরণ, সর্বাত্মক, কঠোর লকডাউন, শাটডাউনের ঘোষণায় আমজনতা এখন মুচকি হাসে। কারণ তারা জানে, এসব ঘোষণায় কতিপয় সরকারি দফতর বন্ধ থাকবে। সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘরে বসে থাকবেন। বহুজাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ঘরে বসে অফিস অফিস খেলা করবেন, বাকি সব অতিস্বাভাবিকই থাকবে। পথের যানজট, বিপণিবিতানের ভিড় কমবে না এক চিমটি। শহরের সঙ্গে শহরের সম্পর্কও রয়ে যাবে আগের মতোই, আন্তরিক।

তাই শাটডাউনের ঘোষণা আসতে পারে শোনার পর দেখলাম মানুষের মধ্যে উদ্বেগ কম। কারণ এ ঘোষণা আসার আগ থেকেই দূরপাল্লার বাস চলাচল, কিছু গন্তব্যে ট্রেন-লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। আশপাশের জেলাগুলোর সঙ্গে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করারও ঘোষণা ছিল। বেশ কিছু উপজেলা ছিল নকডাউনের আওতায়।

বিধিনিষেধ আরোপ করা ছিল ১৫ জুলাই পর্যন্ত। ওই ঘোষণাগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন বা অনুসরণ করা গেলে আর শাটডাউন বা সর্বাত্মক লকডাউনের প্রয়োজন পড়তে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে কোথাও মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি। নিজেরা ঘরে থাকার চেষ্টা করলেও জীবনযাপনের অন্যান্য কাজ স্বাভাবিকভাবে চলায়, বাধ্য হয়ে ঘর থেকে মানুষকে বের হতে হয়েছেই।

উন্নত ও কম জনসংখ্যার দেশে দীর্ঘমেয়াদে যেমন লকডাউন বাস্তবায়ন সম্ভব, বাংলাদেশে সেটা অসম্ভব। লকডাউনে কাজ হারানো দিনভিত্তিক রোজগারে শ্রমিকদের অনুদান দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আর্থিক সক্ষমতা যেমন নেই, তেমনি সকলের তথ্য-উপাত্তও হাতে নেই। শুধু দিনভিত্তিক আয়ের শ্রমিক কেন? মাসভিত্তিক মাসিক আয়ের রোজগাররাও তো কাজ হারিয়েছেন। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদের পথ জানে না প্রণোদনা।

লকডাউন কঠোর বা হালকা যেমনই হোক তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যান। দিশাহারা হয়ে শহরে গ্রামে ছুটতে থাকেন। রোজগারের নিশ্চয়তা পেতে। তবে বাস্তবতা হলো কোভিড-১৯ এর বিচিত্ররূপে বারবার যে আবির্ভাব ঘটছে, সেই ফিরে আসাকে প্রতিরোধ করতে হবেই। জীবন রক্ষায় এবং জীবিকা টিকিয়ে রাখতে।

এ জন্য প্রয়োজন ছিল ঝুঁকির পূর্বাভাস পাওয়া মাত্র, যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা। যা শহর-গ্রাম, উচ্চবিত্ত-বিত্তহীন সকলের জন্যই সহজ হবে অনুসরণ করা। সেক্ষেত্রে নির্দেশনার ভাষা সহজ যোগাযোগের হওয়া প্রয়োজন এবং স্বল্প মেয়াদে মানুষকে শতভাগ, কোনো ছাড় না দিয়ে ঘরে রেখে দেয়া।

এতেও কারও কারও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঠিকই, কিন্তু সেটা দীর্ঘমেয়াদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলবে না মানুষকে এবং সামষ্টিক সুরক্ষা বিবেচনায় এই স্বল্পক্ষতি হয়তো হজম করাও সহজ। কিন্তু বিচিত্র নামে কাগুজে বিধিনিষেধ পরিস্থিতিকে শুধু হযবরল করে তুলতে পারছে, পারছে না জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।

এইচআর/বিএ/জিকেএস

আরও পড়ুন