ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বাড়ছে বেকারত্বের হাহাকার কোথায় প্রতিকার?

সম্পাদকীয় ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৫৪ পিএম, ১২ জুন ২০২১

নাজমুল হুদা

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বাংলাদেশকে এক তৃতীয়াংশ যুব জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর সাথে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে জেঁকে বসেছে করোনা ভাইরাস। করোনার ঢেউয়ে হাবুডুবু খাওয়া শিক্ষা কার্যক্রমে দিশেহারা চার কোটি শিক্ষার্থী। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম শঙ্কায় দেশের শিক্ষিত যুব সামজ।

একদিকে শিক্ষার্থীদের কোর্স সম্পন্ন হওয়া নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা, শিক্ষকদের বিরাট অংশের কাজ হারানো আর কর্মসন্ধানী শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্বের চাপ। এই চোরাবালি থেকে তাদেরকে টেনে তুলতে না পারলে তারা দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। গত বছর করোনার শুরুর দিকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা, কোন কোন প্রতিষ্ঠানের ইন্টারন্টে প্যাক থেকে শুরু করে স্মার্টফোন-ল্যাপটপ পর্যন্ত কিনে দেয়ার ঘোষণা, সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্ট জমাসহ নানা তর্জন-গর্জন এবারের ঢেউয়ে কিছুটা ‘মিউ মিউ’ অবস্থায় পতিত হয়েছে। বেসরকারি গবেষণায় উঠে এসেছে ৬৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণ (অনলাইন) প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেনি।

চলতি মে মাসের শেষ সপ্তাহে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বা আগামী জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রমও অনিশ্চয়তার শিকলে আটকে আছে। ইদানিং সব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলক কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা চালুসহ শিক্ষানীতি পরিবর্তনের পাওয়া যাচ্ছে। কর্মসংস্থানবিমুখ এরকম নানামুখী শিক্ষানীতি ও কার্যক্রম নিয়ে অনেকদিন ধরেই খোদ শিক্ষাবিদ, সমাজচিন্তক ও বিশেষজ্ঞদের খেদ শোনা যায়। এগুলো নিয়ে প্রতিবছরই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বহুবছর আগেই অবশ্য প্রমথ চৌধুরী তার ‘যৌবনে দাও রাজটীকা’ প্রবন্ধে মন্তব্য করেছেন ‘আমাদের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে ইচড়ে পাকানো, আমাদের সমাজনীতির উদ্দেশ্য হলো জাগ দিয়ে পাকানো’।

গত এক দশকে দেশের জিডিপি, মাথাপিছু আয়, রেমিটেন্স, রপ্তানি ও রিজার্ভের পরিমাণ বাড়লেও খুব একটা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। বেকারত্ব কমেনি। বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা হাত ধরাধরি করে বেড়েছে। ইকোনোমিস্ট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এদেশের ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করার পরও বেকার থাকে। এদেশের লাখো তরুণ ‘শিক্ষার শিকলে’ বাধা পড়ে ‘সমাজের জাগে’ থিতু হয়ে চাকরির বয়সসীমার শেষ দিন পর্যন্ত ‘শেষ রক্ত বিন্দু’ দিয়ে একটা প্রত্যাশিত চাকরি পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। বয়স শেষ হলে বাধ্য হয়েই বয়স বাড়ানোর আন্দোলনে শামিল হয়।

এবারতো করোনার কারণে চাকরি নামক ‘সোনার হরিণ’ ধরার দৌড়ে আরও বছর খানিক পিছিয়ে পড়েছে তারা। তার প্রতিফলন পড়ছে সাম্প্রতিক আবেদন চিত্রে। সারাদেশের স্কুল কলেজগুলোতে নিবন্ধনধারী ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে প্রায় কোটিখানেক আবেদন জমা পড়েছে। আসন্ন ৪৩তম বিসিএস-এর জন্যেও জুন পর্যন্ত আবেদন পাঁচ লাখ ছাড়াবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব উল্লেখযোগ্য নিয়োগের ক্ষেত্রে একই অবস্থা। এর বাইরে একটা অংশ যারা স্বদেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো কিংবা দেশেই উদ্যোক্তা হয়ে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন তারাও এখন চোখে সরিষার ফুল দেখছেন।

এই বিপুল পরিমাণ কর্মহীন শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে কাজে লাগাতে না পারলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সবক্ষেত্রে। যারা শিক্ষা অর্জন করেও এদশে যোগ্যতানুযায়ী চাকরি বা কাজ পাচ্ছে না, তাদের হতাশা বেড়ে যাচ্ছে। আবার কর্মজীবীদের চাকরি হারানোর শঙ্কাও বাড়ছে। দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজে ফেরা নিয়ে সংশয় কাটছে না। করোনার কারণে কর্মসংস্থানের এ সংকট বৈশ্বিক; সর্বব্যাপী।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী কোভিড-১৯ এর কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তিন মাসের মধ্যে সারাবিশ্বে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষের পূর্ণকালীন চাকরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে। আইএলও-র ভাষ্যমতে ২০০৮-২০০৯ সালের বিশ্ব মন্দার সময় যত মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, এই হার তারচেয়েও বেশি। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে হোটেল-রেস্তোরাঁ, পরিবহন ও নির্মাণ খাতের মতো অনেক অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকরা দীর্ঘদিন কর্মহীন হয়ে আছে। থমকে আছে নিয়োগ পরীক্ষাগুলোও। এ অবস্থায় কর্মবাজারে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা লাখো তরুণের যে করুণ দশা ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান চ্যালেঞ্জ হবে তা মোকাবেলার জন্য কতটুকু প্রস্তুত আমরা?

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও উপপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

এইচআর/এমকেএইচ