ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শুভ উদ্যোগের অপমৃত্যু!

প্রকাশিত: ০৪:৩১ এএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৫

বসবাসের অনুপযোগী শহর হিসেবে ঢাকার অবস্থান তলানীর দিকে। একটি নগর হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিকল্পিত নগর বলতে বুঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি। যার সবকিছু হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। কোথায় স্কুল কলেজ হাসপাতাল হবে, অফিস আদালত কোথায়, কোথায় বসবাসের জায়গা সবকিছুই হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হলে প্রত্যেক নগরেই মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। এতে তার নাগরিক জীবন হয় মর্যাদাপূর্ণ, গ্রাম কিংবা মফঃস্বলের তুলনায় উন্নততর, স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এই নগরই আবার পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়ে উঠলে তাতে নাগরিকদের জীবন অস্বস্তিকর হয়ে হঠে। জনজীবনকে তা বিপর্যস্ত করে ফেলে। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না।

সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, রাজধানী ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে। নাগরিক সুযোগ সুবিধার অনেক কিছুই এখানে অনুপস্থিত। বিশেষ করে নগরজুড়ে অবৈধ স্থাপনা, পার্কিং না থাকা, ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া, বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ডগুলোর শহরের ভেতরে অবস্থান- এসব কারণে যানজট এক নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী থেকে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদের দাবি দীর্ঘ দিনের। বিশেষ করে ব্যস্ততম তেজগাঁওয়ের ট্রাকস্ট্যান্ডটি যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে আছে।

ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত এক ভয়াবহ যানজটের কারণ এই অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড। রেললাইনের পাশেই হওয়ায় বিপদ আরও বেশি। অনেক সময় দেখা যায় রেল এসে গেছে কিন্তু যানজটের কারণে রেলক্রসিং থেকে যানবাহন সরানো যাচ্ছে না। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ট্রাকস্ট্যান্ডের আশপাশের রাস্তায় এলোপাতাড়িভাবে রাখা হয় ট্রাক, কাভার্ডভ্যান। সবদিক বিবেচনায় এই অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ডটি অন্যত্র সরিয়ে ফেলা সময়ের দাবি। এ নিয়ে সরকারি পর্যায় থেকে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বার বার বৈঠকও হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকও  ট্রাকস্ট্যান্ডটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেন। গত ১ নভেম্বর রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন মেয়র আনিসুল হক। এ সময় তিনি ট্রাকস্ট্যান্ড  দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। তবে ওই সময়সীমার মধ্যে নির্দেশ পালন করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে মেয়র ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সরাতে মালিকদের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

অবশেষে গতকাল রবিবার রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও মেয়র আনিসুল হকের উপস্থিতিতে দুপুর ১টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোশনের লোকজন ট্রাকস্ট্যান্ডের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করে। উচ্ছেদের শেষ পর্যায়ে পার্ক করা একটি ট্রাকের সামনের অংশ বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় কিছু লোকজন। তারা হঠাৎ ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় শ্রমিক মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে এক লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দেয় তারা। মেয়রকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরফলে অভিযান ভেস্তে যায়। এভাবেই একটি শুভ উদ্যোগ ভেস্তে যায়। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে মেয়র আনিসুল হক বলেন, আলাদা ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হবে তবে, মাস্তানি করে অভিযান বন্ধ রাখা যাবে না।

দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, যে কোনো উচ্ছেদ অভিযান দুষ্টচক্রের কারণে প্রায়শই সফলতা পায় না। তেজগাঁওয়ের ট্রাকস্ট্যান্ডটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এখানে অনেকের স্বার্থ জড়িত। জমি দখলকারী থেকে শুরু করে চাঁদাবাজ, মাদকব্যবসায়ী, মালিক-শ্রমিকনেতা কেউ কম যান না। এদের ইন্ধনেই অভিযান সফল হতে পারেনি। কিন্তু এ অবস্থা চলতে পারে না। ঢাকাকে বাস উপযোগী করতে হলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজনে নতুন কৌশল নিয়ে এগুতে হবে। গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মানুষের কাছে রাজধানীবাসী জিম্মি হতে পারে না। আমরা ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে দেখতে চাই। এ জন্য যা করণীয় আছে সেটি করতে হবে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন