ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ব্যাকফুটে হেফাজত : প্রস্তুতির নয়া কৌশল!

মো. মশিউর রহমান | প্রকাশিত: ১০:২০ এএম, ২৯ এপ্রিল ২০২১

আলোচনায় হেফাজত। হেফাজতি কৌশল এখন গোপন ঘরে। নানান কায়দা কৌশলী নাটক। নাটকের নতুন খোরাক রাজনীতি না অরাজনীতি। তারিখ ২৬। প্রথম খবরঃ দুপুরে। কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকেরা প্রচলিত সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবেন হেফাজতের সর্বোচ্চ ফোরাম আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। দ্বিতীয় খবরঃ রাত ১১.১৫ মিনিটে। ভিডিও বার্তায় বাবুনগরীর হেফাজত কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা। রাতে হঠাৎই হেফাজত বিলুপ্তির ঘোষণা বাবুনগরী সাহেবের কেন? বলে কী না প্রিয় দেশবাসী!!! মনে হয় বাবুরা ভাল নেই। দুর্গ ভেঙে ছারখার। গোমর ফাঁসের ফাঁদে। বাবু পাড়ায় শোকের ছায়া।

এদিকে হেফাজত বিলুপ্তির ঘোষণার সাথে সাথে উৎসুক জনতা ছন্দে আনন্দে বিমোহিত হয়ে ফেসবুক ওয়াল নানান রকম ঝলকে পলকে ব্যস্ত রাখেন। হয়তো এসব দেখে কৌশলী হেফাজত হেসেছে বারবার। বলেছে এজন্যই তো আমরা ফতোয়া দিয়ে ঝাড়ফুঁক দেই। ফতোয়া দিয়ে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করি। পরে মানবিক বিয়ে বলে চালিয়ে দেই। তোমরা তাই হজম কর। তোমরা বিশ্বাস কর আমাদের দোয়ায় বেহেশত পাওয়া যায়। ঠিক তিন ঘন্টার মাথায় তৃতীয় খবর। মামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর আগমন। হেফাজতের নতুন চমক। মামা ভাগ্নের আহবায়ক কমিটি। বাবু বাবু নগরী নগরী খেলা। খেলা হবে।

প্রশিক্ষিত হেফাজতের ব্যাকফুটে গিয়ে এটা প্রস্তুতির কৌশল। এবার গায়ে না গলায় অস্ত্র চালাবে। দীর্ঘ দিনের প্রশিক্ষিত হেফাজত দূর্গের রাজত্ব হারানোর ভয়ে ব্যাকফুটে। হেফাজতের এই টিম আজকের নয়। ৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই হেফাজতের সৃষ্টি। ইউটিউব, ফেসবুকে তাদের বক্তব্য এবং কওমি মাদ্রাসা
গুলোতে গোপন নজরদারির মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করে বিশ্লেষণ করে দেখুন। তারা কতোটা হিংস্র আর সাম্প্রদায়িক হয়ে সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে।

আলোচনায় যাওয়া যাক। কে এই হেফাজত? প্রশ্নটা হয়তো এই মুহুর্তে অবান্তর। কারণ জল অনেক দূর গড়িয়েছে। ছোট আলোচনায় না গেলে নয়। মূলত কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক হেফাজত সাংগঠনিকভাবে প্রকাশ পায় ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি। নারী নীতির বিরোধিতা, শিক্ষানীতির বিরোধিতা, সরকার, সরকারের উন্নয়ন নিয়ে তাচ্ছিল্য মূলক বক্তব্য, নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ফতোয়া দিয়েই আলোচনায় আসা শুরু করে হেফাজত। নারীদের তেতুলের সাথে তুলনা করাসহ নানান রকম ফতোয়া। হয়তো শুরুটা এখানে নয়।

আওয়ামী লীগ ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করে। হয়তো জামায়াত অনুমান করেছিল যেহেতু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন আজ হোক আর কাল হোক বিচার কার্যকর হবেই। সেকারণেই হয়তো উল্টো পথে কৌশলী হয়ে হেফাজতের সৃষ্টি। যা এখন পরিস্কার। ধর্মের অজুহাতে সামনে আসে হেফাজত। কওমি মাদ্রাসার জগৎটা সম্পর্কে সকলই ছিল অজানা। কারণ সেখানে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীরা ধর্মীয় শিক্ষার দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠীর কারখানা তৈরি করেছিল দীর্ঘ সময়। ইতিহাস বলে এরা কখনই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না।

সুতরাং হেফাজত কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে বিকৃত ধারণা দেয়। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় সংগীত সম্পর্কেও এদের খারাপ ধারণা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী জনগোষ্ঠী হিসেবেই এদেরকে অন্ধকার জগতে প্রশিক্ষিত করা হয়। যা পরবর্তীতে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। সাংগঠনিক রুপ প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সোচ্চার থাকে হেফাজত। শুধু তাই নয়! নতুন নতুন ফতোয়ার মাধ্যমে সংবিধান অবমাননাসহ সাম্প্রদায়িক চিন্তায় সমাজ পরিবর্তনের ইংগিতও আসে জোরালোভাবে। বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দ, রাষ্ট্র প্রধানসহ সবাইকে নিয়ে ওয়াজ মাহফিল, ইউটিউবে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে থাকে।

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে শাহবাগসহ সারাদেশে তৈরি হয় গণজোয়ার। বিভিন্ন দেশে বাস করা প্রবাসীরাও বাদ ছিল না সেই গণজোয়ার থেকে। জনজোয়ারের তোপে যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপিসহ সহযোগীরা কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল। কোনঠাসা হলেও ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা থেমে ছিল না। নাস্তিক শব্দের প্রচারক মাহমুদুর রহমান আমার দেশ পত্রিকায় গিলাব বদলের বাসৎরিক অনুষ্ঠানের ছবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিবাদে কাবা শরিফের ইমামদের প্রতিবাদ বলে চালাতে থাকে। এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে উস্কানি দিতে থাকে। এই পত্রিকাসহ জামায়াত শিবিররা পরিকল্পিত ভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে অন্যদিকে মুভ করার চেষ্টা করে। চলতে থাকে কোটি কোটি টাকা খরচে নিয়োগপ্রাপ্ত লবিস্টদের অপতৎপরতা। এরই মধ্যে বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়া ব্যক্তিবর্গকে ধরে ধরে নাস্তিক বানিয়ে প্রচার করার কাজটি সুকৌশলে করে জামায়াত শিবির আর হেফাজত। প্রতিটি ওয়াজ মাহফিলে কুরআন হাদিসের বাহিরে পরিকল্পিত ভাবে অপপ্রচার চালাতে থাকে। আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী। নানান রকম গুজব ছড়িয়ে জনগণকে উস্কানি দিতে থাকে।

২০১৩ সালের এপ্রিলে সংবিধান বিরোধী ১৩ দফা দাবি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামে হেফাজত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করার টার্গেটে ২০১৩ সালের ৫ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজনীতির মাঠে নামে হেফাজত। হয়তো অনেকই ভাবতে পারে হঠাৎই হেফাজতের আগমন? না সেই ধারণা ভুল। অনেক দিনের সাংগঠনিক ঐক্যবদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ এটি। শুধু সময় সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সরকার পতন ঘটানোই ছিল ৫ মে শাপলা চত্তরে অবস্থান করা হেফাজতের লক্ষ্য। এতোটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল ক্ষমতায় গেলে কে কোন দায়িত্ব নেবে, তার হিসেব কিতাবও করা হয়েছিল। এতো আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কারণও আছে যথেষ্ট। ৪ মে ২০১৩ সাল ঐ একই জায়গা মানে শাপলা চত্ত্বরে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিস, নেজামী ইসলাম, হেফাজতদের নিয়ে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এবং সরকারকে উৎখাত করতে ৪৮ ঘন্টা আল্টিমেটাম দিয়ে সেখানে সবাইকে ২৪ ঘন্টা অবস্থানের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়। পরিকল্পনা মাফিক ৫ মে চলে তাণ্ডব লীলা। কিন্তু সরকার এই ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে দমন করে।

অনেকেই ভেবেছিল হেফাজত কোণঠাসা। কিন্তু হেফাজত পিছু টান না দিয়ে বরং ক্ষমতায় যাওয়ার ছক কষে। শাপলা চত্বরে মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করতে থাকে দেশ বিদেশে। এই মিথ্যা তথ্য দিয়েই কোটি কোটি টাকা দুবাই, কাতার... থেকে নিজের নামে নিয়ে এসেছে হেফাজত। বাবরি মসজিদের নামেও প্রচুর অর্থ এনেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। পুলিশি তদন্তে যা স্বীকার করেছে হেফাজত। ক্ষমতায় যাওয়ার নেশায় মশগুল হেফাজত হয়তো ভালভাবেই অনুধাবন করেছে অর্থের। সরকার উৎখাতের পরিকল্পনায় বিএনপি জামায়াত বামসহ নামে বেনামে ইসলামের নামে তৈরি হওয়া ধর্মান্ধ গোষ্ঠীদের এক কাতারে আনে। অপেক্ষায় ছিল সময়োপযোগী পরিবেশের। মুজিব শতবর্ষ ঘোষণার সাথে সাথেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে হাটে হেফাজত। নানান অজুহাতে দেশের স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে থাকে। সরকার ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে দিচ্ছে বলে অপপ্রচার চলতে থাকে। সারাদেশের প্রতিটি মসজিদ মাদ্রাসার মাধ্যমে কাজটি সুকৌশলে করে হেফাজত।

মুজিব শতবর্ষ যতই ঘনিয়ে আসে ততই হেফাজত হিংস্র হয়ে উঠে। তাদের সাথে গলায় গলা মিলিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে মাঠে ময়দানে বিএনপি, জামায়াত, বাম, কোটা বিরোধী আন্দোলনের সাধারণ ছাত্র অধিকার সুরক্ষা পরিষদের নুরু। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকেও এরা সরকার উৎখাতে রুপ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার ছিল সজাগ। প্রতিটি দেশের জাতির পিতা থাকলেও সেবিষয়ে হেফাজতি ধর্মান্ধরা কোন ফতোয়া উত্থাপন করেন না। ফতোয়া দেয়ার চেষ্টা করে বাঙালি জাতির পিতাকে নিয়ে। শুরু হয় মূর্তি ভাস্কর্যের ফতোয়া। ফতোয়া গড়ায় রাজনীতির মাঠে। অথচ বিশ্বের এমন কোন মুসলিম দেশ নেই যেখানে নিজ নিজ ইতিহাস ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির ভিত্তিতে মূর্তি ভাস্কর্য গড়ে উঠে নি।

বাঙালি জাতির স্পন্দন বঙ্গবন্ধু। সারাদেশের আনাচে-কানাচে বঙ্গবন্ধুকে চর্চা করতে, জানতে ভাস্কর, ম্যুরাল স্থাপন হবে এটাই স্বাভাবিক। কি ধৃষ্টতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, ম্যুরাল স্থাপন করা হলে নাকি ভেঙে ফেলবে হেফাজত। শুধু তাই নয়। ক্ষমতায় গেলে নাকি সকল রকমের ভাস্কর, ম্যুরাল গুড়িয়ে দিবে হেফাজত। নানান ইস্যুতে প্রতিটি শুক্রবার পবিত্র জুম্মায় নামাজের পর সমাবেশের নামে উস্কানি দেয় ধর্মপ্রাণ মুচল্লিদের।

এরই মাঝে শুরু করলো করোনা নিয়ে গুজব। বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার মাধ্যমে প্রচার করে মুসলমানদের করোনা হবে না। কতো কি বয়ান? যখন হয়ে গেল। তখন ওষুধ দেয়া শুরু করলো। পানি পড়া, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ কবচ, তেজপাতা ধোঁয়া পানি, করোনা বিরোধী মিছিল। এর পর করোনা ভ্যাকসিন গুজব। কে ভ্যাকসিন নিল আর কে নিল না তা নিয়েও মাঠে গরম হেফাজত। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, এমপি,আওয়ামী লীগ নেতারা আগে ভ্যাকসিন নেক...।

মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের লক্ষ্যে জাতি যখন পুরোপুরি প্রস্তুত। ঠিক এমনি গুরুত্বপূর্ণ সময়ই হেফাজত করোনা মহামারীতে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনায় মাঠে নামে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, কূটনীতিকরা যাতে আসতে না পারে সেজন্য তৈরি করে প্রতিবন্ধকতা। হেফাজত, বিএনপি, জামায়াত, বাম মিলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ভারত বিরোধী শক্তি। মানে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যাদের কাছে জন্মগত শত্রু। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসতে পারবে না! প্রশ্ন তো নরেন্দ্র মোদি নয়। প্রশ্ন বঙ্গবন্ধুর আর্দশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে আঘাত করে পাকিস্তানি ধারার ক্ষমতা। সরকার উৎখাতে ২৫ শে মার্চ ২৬ শে মার্চ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ বিভিন্ন জায়গায় হেফাজত, বিএনপি জামায়াত, শিবির নারকীয় সহিংসতা চালিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, থানা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িঘর পোড়ানোর মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। সেই ধ্বংসলীলা পরবর্তীতেও অব্যাহত থাকে। ৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এরা মরিয়া।

কিন্তু সৃষ্টিকর্তার বিচার বলে তো কথা! অবশেষে পাপ ফোটা শুরু। আল্লার মাইর দুনিয়ার বাইর। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। নারী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রিসোর্টে ধরা হেফাজতি মামুনুল হক। সত্যকে আড়াল করতে গিয়ে কিভাবে ধর্মকে ন্যাক্কারজনক ভাবে ব্যবহার করা যায় তার সবই করেছে হেফাজত। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বেরিয়ে আসতে থাকে নারী কেলেঙ্কারির সত্য ইতিহাস। বউয়ের উপর বউ। সেগুলোকে জায়েজ করতে কতো ফতোয়া। অবশেষে সরকার অ্যাকশনে। একের পর এক অপরাধীরা গ্রেফতার। বেড়িয়ে আসতে থাকে থলের বেড়াল। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের দলিল।

এতো নাটক। এতো ঘটক। এতো দর্শক। এতো হাততালি। কতো কাকতালী। এইবার হেফাজত কোথায় যাবে? কি হইলো হেফাজতের? যা দেখছেন তা তো হেফাজতি নাটক। পুরাতন কৌশলে নয়া সংযোজন মাত্র। যে উদ্দেশ্যে রাজনীতিতে হেফাজত তার কি কোন নীতিগত পরিবর্তন হয়েছে? হেফাজত আগে যা ছিল তাই আছে। তাই থাকবে। তাদের নীতির কোন পরিবর্তন হয়নি। হয়নি চারিত্রিক পরিবর্তন। শুধুমাত্র সরকারকে গোলকধাঁধার মধ্যে রাখতেই নয়া কৌশল। বাবুনগরী বললো দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে হেফাজত কমিটি বিলুপ্তি করা হয়। না, সেরকম নয়৷ নিজেদের বেহাল পরিস্থিতিতে হেফাজতের ঘনঘন রুপ পরিবর্তন। নীতি আদর্শ বলতে হেফাজতের কিছুই নাই। শুধু মিথ্যাচার আর ভুয়া ফতোয়াবাজি।

হেফাজত পুরোপুরি একটা রাজনৈতিক দল এতে কোন সন্দেহ নেই। সরকারের কঠোর অবস্থানে হেফাজত বিভক্ত হলেও এদের আদর্শ নীতি এক। অভিন্ন। এরা সাম্প্রদায়িক। এতো সহিংসতা তার পরও কোন আক্ষেপ নেই। প্রতিবাদ নেই। মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারি নিয়েও কোন বক্তব্য নেই। বরং নতুন নতুন ফতোয়া দিয়ে বড় আলেম বলে জায়েজ করার চেষ্টা করছে। হেফাজতের যে গ্রুপ এখন অসন্তোষ তারা কি ৫ মে যে তাণ্ডব লীলা ঘটিয়েছিল, ভেতরের পরিকল্পনা কি ছিল তা কি তথ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সহযোগিতা করেছে সরকারকে। অপরাধী হেফাজতিরা গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশ রিমান্ডে সরকার উৎখাতে সকল পরিকল্পনার কথা স্বীকার করছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি তাজ উদ্দিনকে কিভাবে আশ্রয় দিয়ে পাকিস্তানে পাঠায় মামুনুল হক। পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক। সেই আদলে জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলা সহ সকল পরিকল্পনার কথা স্বীকার করছে।

ঐক্যবদ্ধ হেফাজত থেমে যায়নি কখনও। বরং আওয়ামী লীগের কিছু নেতার ভুল সিদ্ধান্তের সুযোগ হেফাজত ভালভাবেই ব্যবহার করে। পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক ভাবধারা প্রতিষ্ঠারও অপচেষ্টা চালায় হেফাজত। সুকৌশলে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর উগ্র হেফাজত আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। পুরো সংগঠন জুড়ে জামাত শিবির। বেছে নেয়া হয় পবিত্র মসজিদ মাদ্রাসা ও ওয়াজ মাহফিল। মামুনুল গং একের পর সহিংসতার উসকানি দিতে থাকে। সরকার উৎখাত করতে যা যা অকার্যকর করা দরকার সবই করার চেষ্টা করেছে।

সময় এসেছে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের। শুধু কওমি মাদ্রাসা নয়,আলিয়া মাদ্রাসাসহ যত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ধর্মপ্রাণ মানুষকে রক্ষা করতে, ইসলামের নিরাপত্তা বিধানে, ইসলামের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে, দেশপ্রেমের চেতনা তৈরির লক্ষ্যে এই পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। পরিচালনা কমিটি করতে হবে। পরিচালনা কমিটি হবে অত্যন্ত শক্তিশালী। সেই কমিটিতে থাকবে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৎ আলেম, সরকারের সৎ প্রতিনিধি, দেশপ্রেমের চেতনায় পরিপুষ্ট সৎ আলেম, মন্ত্রী, ধর্মীয় বিজ্ঞজন, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার বিজ্ঞজন। মূল কমিটির বাহিরে বিভাগীয় কমিটি, জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি থাকতে হবে। যাতে করে ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যন্ত কঠোর হস্তে মনিটরিং করা যায়। জাতির গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেন ধর্মান্ধরা সাম্প্রদায়িক শক্তি তৈরির কারখানায় রুপান্তরিত করতে না পারে। এটাই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উত্তম সময়। নমনীয় বা সমঝোতায় গেলে এর মাসূল পেতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। আগামী নির্বাচনেই দেখবে হেফাজতের তান্ডব লীলা। এই জন্যই এতো নয়া নাটক।

এই উগ্রতার আস্ফালন বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করে ফেলবে। যারা ভাবছেন এই বুঝি হেফাজত শেষ হয়ে গেল। না ধারণাটা একবারেই অমূলক। তাদের শিকড় পৌঁছেছে অনেক গভীরে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাই সময় থাকতে এই অপশক্তির বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক গণিত বিভাগ, সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও পরিচালক, বঙ্গবন্ধু চর্চাকেন্দ্র বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগ।

এইচআর/এমকেএইচ