ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ভক্ষকের যাবজ্জীবন

প্রকাশিত: ০৪:৩৮ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক সালেউদ্দিন আহম্মেদের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল দেশের মানুষ। বিশেষ করে নির্যাতিতার পরিবার-স্বজনরা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরিমলের এই সাজা  দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে যেন আর কেউ এ পথে পা না বাড়ায় সে বিষয়েও একটি সতর্ক সংকেত এই রায়।

গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার লাটেংগা গ্রামের বাসিন্দা পরিমল ২০১০ সালে ভিকারুননিসার বসুন্ধরা শাখায় বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ২০১১ সালের ২৮ মে প্রথম ধর্ষণ করে পরিমল। ওই সময় ছাত্রীর নগ্ন ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করা হয়। তাকে জিম্মি করে ১৭ জুন পুনরায় ধর্ষণ করা হয়। এ পাশবিক ঘটনার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠতে থাকে। ‘পরিমল খুব প্রভাবশালী, একটি বিশেষ জেলার বাসিন্দা বলে তার কোনোকিছুই হবে না’- এ ধরনের কথা উঠে। এই আশঙ্কার মধ্যেই নির্যাতিতার পরিবার মামলা করে। অবশেষে সকল শঙ্কা দূর করে মামলার রায় হয়েছে। রায়ে উপযুক্ত শাস্তিও নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন বিষয়টি উচ্চ আদালতে যেতে পারে। সেখানেও যাতে রায়ের সাজা বহাল থাকে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আইনি প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। ধর্ষণ নারীর বিরুদ্ধে এক জঘন্য মানবতা বিরোধী অপরাধ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েও অনেক নির্যাতিতা আইনের আশ্রয় নেন না সামাজিকতা ও লোকলজ্জার ভয়ে। এ কারণে ধর্ষকরা অনেক সময় পার পেয়ে যায়। এ ব্যাপারে সম্মিলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

পরিমল পেশায় একজন শিক্ষক। সমাজে অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। এর শাস্তিও হতে হবে। কিন্তু এমন কিছু পেশা আছে যাদের কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। শিক্ষকতা তেমনি একটি পেশা। এই পেশায় যারা নিযুক্ত হবেন তাদের কাছ থেকে মানুষ শিখবে। শুধু শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, সততা, নীতি-নৈতিকতার আদর্শে বলীয়ান শিক্ষকরা সমাজের আদর্শ। বিপদে আপদে মানুষ তাদের কাছে যান। তারা সমাজকে পথ দেখান। এই ধরনের পেশায় থেকে কেউ যদি উল্টো কাজ করেন সেখানে সেই পেশার প্রতিও তিনি অবিচার করেন। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীরা যদি একজন শিক্ষকের কাছে নিরাপদ না থাকে তাহলে তারা যাবে কোথায়? রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে সমাজটা টিকবে কী করে। এ ধরনের পরিমলরা সমাজের দুষ্টক্ষত। সমাজে কোনো ক্ষত রেখে এর স্বাভাবিক বিকাশ আশা করা বৃথা। পরিমলের সাজা হয়েছে এটা স্বস্তির দিক। ভবিষ্যতে যেন আর কোনো পরিমলের সৃষ্টি না হয় এ নিয়ে ভাবতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন