ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সক্ষম অর্থনীতির পরিচয় উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি

সম্পাদকীয় ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:৫২ এএম, ১২ মার্চ ২০২১

ড. এ কে আবদুল মোমেন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন এখন আর কোনো স্বপ্ন নয়। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় স্বমহিমায় উজ্জ্বল অবস্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির এ অগ্রযাত্রার স্বীকৃতিও মিলেছে বিশ্বসভায়। সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করার চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) পাঁচ দিনব্যাপী বৈঠক শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এ সুপারিশ করেছে। সিডিপির এলডিসিসংক্রান্ত্র উপগ্রুপের প্রধান টেফেরি টেসফাসো এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশের বিষয়টি ঘোষণা করেছেন। এ চূড়ান্ত সুপারিশের ফলে ২০২৬ সালে এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় মহানায়কের ভূমিকা পালন করেছেন যিনি, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন জাতির পিতার কন্যা, এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ ভরসাস্থল, এ দেশের সর্বকালের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ডানহাত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার যোগ্য নেতৃত্বেই একসময়ের স্বল্পোন্নত ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে সব আয়োজন চূড়ান্ত করল। বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তারই হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করল।

জাতিসংঘের মান অনুসারে সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশ তুলনামূলক দুর্বল, সেসব দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭১ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় ১৯৭৫ সালে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী পাঁচ বছর পর ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিপিডি) এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও লাওসও এলডিসি থেকে বের হওয়ার সুপারিশ পেয়েছে। সিডিপির পরপর দুবারের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে নির্দিষ্ট মান অর্জন করলে এ ধরনের সুপারিশ করা হয়। ২০২১ সালের সিডিপির এ মূল্যায়নে বাংলাদেশের পাশাপাশি লাওস ও মিয়ানমার নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছে। মিয়ানমারও সুপারিশের জন্য আবেদন করেছিল; কিন্তু মিয়ানমারকে সুপারিশ করেনি সিডিপি। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, সম্প্রতি মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় সেদেশের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে এলডিসি থেকে দেশটির বের হওয়ার সুপারিশের বিষয়টি ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্থগিত করেছে সিডিপি কমিটি।

স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে কোন কোন দেশ বের হবে, সে বিষয়ে সুপারিশ করে থাকে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। এজন্য প্রতি তিন বছর পরপর এলডিসিগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। এলডিসিগুলোর মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিনটিকে সূচক ধরে এ সূচকগুলোর কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের মাধ্যমে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কিনা, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। কোনো স্বল্পোন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হতে গেলে যেকোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় অথবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। সূচক তিনটির মান হলো- মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ১২৩০ মার্কিন ডলার, মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ বা এর বেশি পয়েন্ট এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ পয়েন্ট বা এর নিচে। উন্নয়নশীল দেশ হতে গেলে কোনো দেশের মাথাপিছু আয় অবশ্যই ১২৩০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি হতে হবে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার- জাতিসংঘের সাধারণ মানের চেয়ে যা অনেক বেশি; মানদণ্ডের প্রায় ১.৭ গুণ। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে প্রয়োজন ৬৬ পয়েন্ট; যেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৪। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার তিন নম্বর সূচক অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬-এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়। মান কমে পয়েন্ট ৩২-এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। এখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫.২। দেখা যাচ্ছে, তিনটি সূচকেই কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

বর্তমানে বিশ্বে ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশ আছে। এ পর্যন্ত মালদ্বীপ, বতসোয়ানা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, সামোয়া ও কেইপ ভার্দেই- এ পাঁচ দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে। এখানে বলে রাখা ভালো, অনেক স্বল্পোন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণ চায় না সুযোগ-সুবিধা হারাবে সেই ভয়ে। বাংলাদেশের জন্য এবার উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের দ্বার চূড়ান্তভাবে উন্মুক্ত হলো। ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত প্রথমবারের মতো পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সিডিপির বিগত সভায় সেই চূড়ান্ত সুপারিশই লাভ করল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এ এক বিরাট সুখবর। সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতির সময় ভোগ করতে পারে। করোনা মহামারির বাস্তবতায় উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় চাওয়া হয়। বাংলাদেশের এ আবেদনে সাড়া দিয়েছে সিডিপি। এবার পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। বাংলাদেশের এ অর্জনকে সুসংহত ও টেকসই করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এটি একটি বিশেষ ধাপ। সফলতার সঙ্গে এ ধাপে পা রাখতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ।

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে যথেষ্ট ঋণ পাওয়া সম্ভব, তবে সুদের হার বাড়তে পারে এবং বিভিন্ন রফতানি সুবিধা হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের জন্য প্রস্তুতির সময় চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

বাংলাদেশ এমন একটি বিশেষ সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে, যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে জাতি। এটি বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত বিশেষ একটি সময়। স্বাধীনতার অর্ধশতক পূরণ হচ্ছে এ বছরে। এ বছরেই উদযাপিত হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’। আনন্দঘন এ সময়েই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লেখানোর চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এ এক বিরাট অর্জন। বাংলাদেশ এখন আর কারও রক্তচক্ষুকে ভয় করে না। কারও কাছে মাথানত করে না। নিজেদের যোগ্যতায়, নিজেদের সক্ষমতায় উন্নয়নের সব শর্ত পূরণ করে তরতর করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে এখন বাংলাদেশ।

এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আর্থিক ও অন্যান্য সূচকের দিকে লক্ষ করলেই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০০৮-০৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ২০১৯-২০ সালে তা ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ১২ বছরে সরকারি ব্যয় ৪.৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৭ হাজার ৯৬০ কোটি থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫.৫৭ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা ৪০.৫৪ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৮-০৯ অর্থবছরের ৭.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪৪.০৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০১ সালে দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৯ শতাংশ এবং হতদারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪.৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে এবং হতদারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশে।

খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয় এবং মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। ২০০৯-১০ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৫ হাজার ২৭১ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু ২০০৯-১০ সালের ৬৯.৬১ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২.৬ বছরে। ২০০৯-১০ সালের তুলনায় ৫ বছর বয়সি শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে ২৮ জনে। মাতৃমৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছে লাখে ১৬৫ জনে, যা ২০০৯-১০ সালে ছিল ২৮০ জন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র দৃশ্যমান।

বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা মহামারি মোকাবিলায় সক্ষমতার সঙ্গে ভূমিকা পালন করছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এখনো করোনা প্রতিরোধে টিকা কার্যক্রম শুরু করতে না পারলেও বাংলাদেশ এরই মধ্যে ব্যাপকহারে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি করোনার টিকা দিয়েছে এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৭তম স্থান দখল করেছে। করোনা প্রতিরোধে তিনটি ফেজে মোট পাঁচ ধাপে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সম্মুখসারিতে থাকা কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৩ জনকে প্রথম পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হবে। এভাবে আগামী জুনের মধ্যে দেশের সাড়ে ৫ কোটি মানুষকে করোনা টিকা দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা।

করোনাকালীন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে। করোনাযুদ্ধে জেতার লক্ষ্যে শুরু থেকেই এ লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ-বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসে। কানাডিয়ান লেখক অভিভাহ ভিটেনবার্গ-কক্স ফোর্বসের ওই নিবন্ধে নারী নেতৃত্বাধীন আটটি দেশের করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করেছেন। নিবন্ধে লেখা হয়েছে, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৬ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষের দেশ বাংলাদেশ সমস্যা-সংকটের সঙ্গে অপরিচিত নয়। তিনি এ সংকট মোকাবিলায় দ্রুত সাড়া দিয়েছেন, যাকে ‘প্রশংসনীয়’ বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। বাংলাদেশ যে প্রকৃতই উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, করোনাকালীন এ সক্ষমতা তারই পরিচায়ক। এ কারণে করোনা মহামারির এ সময়েও উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করল বাংলাদেশ। যে পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যে পরিকল্পনায় দেশের অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাতে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে সরাসরি উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যাবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।

লেখক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

এইচআর/বিএ/এমকেএইচ