আর কত অপেক্ষা?
মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় এখন গোটা জাতি। ইতিমধ্যেই সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দণ্ডিতদের রায় পড়েও শোনানো হয়েছে। এখন শুধু বাকি আছে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। আসামিরা এখনো এ বিষয়ে কিছুই জানাননি। গণমাধ্যমে খবর এসেছে এটা কালক্ষেপণের একটি পন্থা। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। কাজেই এক্ষেত্রে কারাবিধি প্রযোজ্য হবে না। সরকার চাইলে যে কোনো সময় ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করতে পারবে। তবে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি মীমাংসা করতে হবে। এ নিয়ে যেন দণ্ডিতরা অযথা কালক্ষেপণ করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই জামায়াত নেতা মুজাহিদকে ৩টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সর্বোচ্চ আদালত রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। বাকি একটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অন্যটিতে খালাস দেয়া হয় তাকে।
অন্যদিকে একই বছরের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ চারটি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার নিয়ে গোটা জাতি দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করে আছে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর দালাল আইনে করা এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধ হয়ে যায়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াতসহ অন্যান্যরা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়। শুধু তাই নয় স্বাধীনতা বিরোধী চিহ্নিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর নেতাদের অনেকে মন্ত্রিসভায়ও স্থান দেয়া হয়। সাকা-মুজাহিদও মন্ত্রী ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে অঙ্গীকার করে। সে অনুযায়ী জনরায় পেয়ে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর অনেকের বিচারই সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যে। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা এবং কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এখন সাকা-মুজাহিদ দুই প্রভাবশালী যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকরের পালা।
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে দুই জন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ দিনাজপুরে একজন ইতালীয় নাগরিকের ওপর গুলি করা হয়েছে। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। এছাড়া ব্লগার, লেখক-প্রকাশকদের হত্যা করা হচ্ছে ধর্মের বর্ম সামনে এনে। একাত্তরের কায়দায় হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে আনিসুজ্জামান, হাসান আজিজুল হকের মতো অধ্যাপক, লেখক প্রগতিশীল মানুষদের। বর্তমানে যে জঙ্গিবাদের নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড চলছে এরসঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি যুক্ত রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এছাড়া সাকা-মুজাহিদের রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে আরও নাশকতার আশঙ্কা করছে সরকার। এ জন্য ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যমই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত বুধবার দুপুর ১২টায় সরকারের নির্দেশে এসব মাধ্যম বন্ধ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ধারণা করা হচ্ছে দুইজন প্রভাবশালী যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকরের পরই এগুলো সচল করা হবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য এ দেশের মানুষ দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছে। সাকা-মুজাহিদের দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে সেই অপেক্ষার কিছুটা হলেও অবসান হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের দণ্ড কার্যকর করে সকল অপেক্ষার অবসান করা হোক। কেননা এর সঙ্গে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ অন্য অনেক কিছু জড়িত।
এইচআর/এমএস