ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৪:৩৭ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৫

চিরদিন কারো সমান যায় না। একদিন যাদের গাড়িতে উঠেছিল শহীদের রক্তস্নাত লাল সবুজের পতাকা আজ তারা ফাঁসির মঞ্চ থেকে কয়েক হাত দূরে। সাকা-মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ায় ফাঁসির দণ্ডই বহাল রয়েছে। এই দুই আত্মস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীর বিচার এখন শেষ ধাপে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার শেষ সুযোগটি আছে তাদের। এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলেই রায় কার্যকর কেবল দিন-ক্ষণের ব্যাপার।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই যুদ্ধাপরাধীর আবেদন বুধবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ খারিজ করে দেন। এরফলে ট্রাইব্যুনাল ও আপিলের দেয়া ফাঁসির দণ্ডই বহাল থাকলো। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই জামায়াত নেতা মুজাহিদকে ৩টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।  বাকি একটিতে  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অন্যটিতে খালাস দেয়া হয় তাকে।

অন্যদিকে একই বছরের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ চারটি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার নিয়ে গোটা জাতির দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষার কিছুটা হলেও অবসান হল এই প্রভাবশালী দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকায়। বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে এই প্রথম  কোনো যুদ্ধাপরাধীর সাজা হল। বুদ্ধিজীবী নিধনের ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতার অভিযোগে জামায়াত নেতা ও তৎকালীন বদর বাহিনীর কমান্ডার আলী আহসান মুজাহিদকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা বদি ও রুমীদের হত্যার প্ররোচনায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম রুমীদের  হত্যার বিচারের জন্য গড়ে তুলেছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল ও নির্মূল কমিটি। ভাল হত জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি তার সন্তান হত্যাকারীর বিচার দেখে যেতে পারলে। যারা সাকা-মুজাহিদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার শহীদ জননীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে। এবং এই  অভিযোগ মাথায় নিয়েই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সাকার দাম্ভিকতা এই পর্যায়ে ছিল যে কেউ তার টিকিটি স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু সকল দর্পচূর্ণ করে চারটি অভিযোগে তার ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, হিন্দু বাড়ি দখল, হিন্দুদের দেশান্তরে বাধ্য করাসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই নানাভাবেই ট্র্যাইব্যুনালকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালান তিনি। রায় দেয়ার আগেই কপি ফাঁস করা হয়। সর্বশেষ ফাঁসির দণ্ড থেকে বাঁচার জন্য একাত্তরে তিনি পাকিস্তানে ছিলেন এই যুক্তি তুলে ধরেন। আদালতে জমা দেয়া হয় পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ও প্রশংসাপত্র যা সম্পূর্ণ ভুয়া। আদালত এ জন্য তার আইনজীবীকে তিরস্কারও করেন।

মিথ্যার রাজত্ব দিনের পর দিন চলতে পারে না। দুই যুদ্ধাপরাধীর সাজা বহাল থাকার মধ্য দিয়ে তা আবারো প্রমাণ হল। এর মাধ্যমে এটিও প্রতিষ্ঠিত হল যে অপরাধ করে কেউ পার পায় না। তা সে যতই প্রভাবশালী হোক না কেন। আর অপরাধের সময়সীমাও এক্ষেত্রে কোনো বিষয় নয়। এ রকম পরিস্থিতি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতেও ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো বিকল্প নেই।

ইতিমধ্যেই দুইজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অন্যদের বিচার চলছে। এখন সাকা-মুজাহিদের দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার একটি পরিণতির দিকে যাবে বলে দেশের মানুষের  প্রত্যাশা। সাকা-মুজাহিদের দণ্ড দ্রুত  কার্যকর করা হবে- এটিই এখন সকলের চাওয়া।

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন