ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর, অতঃপর

প্রকাশিত: ০৫:০৬ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৫

ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া ও তাঁর দুই সহযোগীকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সরকার। গতকাল বুধবার ভোরে সিলেটের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে এই তিনজনকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাজার দেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ভারত সরকারও দীর্ঘদিন থেকে অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চেয়ে আসছিল। অনুপ চেটিয়া নিজেও দেশে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। যাই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে অনুপ চেটিয়া এখন ভারতে। এর মধ্য দিয়ে অনুপ চেটিয়াকে নিয়ে দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে চলা অলোচনা-পর্যালোচনা, জল্পনা-কল্পনার অবসান হল। শুরু হল নতুন এক অধ্যায়।

১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের একটি বাসা থেকে উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে তার দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে সময় তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট, স্যাটেলাইট টেলিফোন ও ১৬টি দেশের বিপুল পরিমাণ মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছিল।  ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় ফরেন কারেন্সি অ্যাক্টে একটি মামলা দায়ের করে। পরে পাসপোর্ট আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরো তিনটি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। তিনটি মামলায় আদালত তাকে বিভিন্ন মেয়াদে মোট ১৪ বছরের সাজা দেন। অনুপ চেটিয়ার প্রথম পর্যায়ের কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৩ সালের ২৫ আগস্ট। পরে ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি অন্য মামলার সাজার মেয়াদ শেষ হয়। তবে ১১ হাজার টাকা জরিমানা পরিশোধ না করায় আরো দেড় বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন তিনি। সাজার মেয়াদ শেষ হলেও অনুপ চেটিয়াকে মুক্তি না দেওয়ায় ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে তাঁর পক্ষে হাইকোর্টে রিট করে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। পরে অনুপ চেটিয়ার রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাঁকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না মর্মে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আইনি জটিলতা ও দুই দেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকার কথাও বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

দীর্ঘ কারাবাসের পর অনুপ চেটিয়াও ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে দেশে ফেরার জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেন তিনি। ওই আবেদনে তিনি বলেন, `আমি দীর্ঘদিন ধরেই কারাগারে আটক আছি। এই জীবন আর ভালো লাগে না। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাকে ভারতে পাঠিয়ে দেন। আমি পুরোদমে ভালো হতে চাই। আমি স্বজ্ঞানেই এই চিঠিটি আপনাদের কাছে পাঠালাম। সঙ্গে আমার দুই সহযোগীকেও যেন ফেরত পাঠানো হয়।`

সব দিক বিবেচনা করেই অনুপ চেটিয়াকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অনুপ চেটিয়া ফেরত যাওয়ার পর পরই সে দেশে পলাতক সাতখুন মামলার  আসামি নূর হোসেনকে ফেরত আনার বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে। তবে কোনোক্রমেই একজন বন্দির বিনিময়ে আরেকজন- এই সরল সমীকরণে যাওয়া ঠিক হবে না। যেহেতু বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে দু`টি দেশের মধ্যে সেই চুক্তি অনুযায়ীই বন্দি বিনিময় হতে পারে। এক্ষেত্রে দু`টি দেশই অভিন্ন স্বার্থে এগিয়ে আসবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

ভারত আমাদের প্রতিবেশি। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে একটি আত্মিক সম্পর্ক। এই সম্পর্কের ভিত্তিতেই সম্প্রতি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে। ছিটমহল বিনিময়ও সম্ভব হয়েছে এরফলে। অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কোনো দেশের মাটিই অপর কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে না দেওয়ার নীতিও প্রতিফলিত হয়েছে এর মাধ্যমে। যা দুই দেশের সম্পর্কে আরও মজবুত ভিত্তি দিবে নিঃসন্দেহে।

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন