ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

প্রধানমন্ত্রীর সাশ্রয়ী মনোভাব এবং আমাদের দায়িত্ব বোধ

প্রকাশিত: ০৫:২৫ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

‘পুরুষরা প্রতিদিন দাড়ি সেভ করেন কল খুলে দিয়ে। যতক্ষণ সেভ চলে ততক্ষণ পানি পড়তে থাকে। এই পানি বালতিতে রাখলে প্রায় এক বালতির সমান হয়ে যাবে। এটা নিঃসন্দেহে অপচয়’- রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও থেকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার যশলদিয়া পদ্মার পানি শোধনাগার প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।  এই কথার মূল সুর হচ্ছে অপচয় বন্ধ করা। এ নিয়ে নানা কথাই বলা চলে। কিন্তু আমরা এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের দিকে দৃষ্টি দিতে চাই।

মূলত সাশ্রয়ী মনোভাব গড়ে তুলতেই প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের পদক্ষেপের কথা বলেছেন। তিনি এর আগেও এ ধরনের কথা বলেছেন। ইতিপূর্বে বিদ্যুত সাশ্রয়ে মার্চ থেকে নবেম্বর পর্যন্ত সরকারী অফিসে কর্মকর্তাদের স্যুট-টাই না পরতে নির্দেশনা জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকারী অফিসে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-কর্মকর্তাদের গরমে আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া স্যুট-টাই না পরার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তারই আলোকে এ ধরনের নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। এবারও প্রধানমন্ত্রী একই ধরনের মনোভাব নিয়ে অপচয় বন্ধের তাগিদ দিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই উপলব্ধি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত এবং প্রশংসার দাবিদার। সত্যি বলতে কি, আমাদের মধ্যে সাশ্রয়ী মনোভাবের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কে কত ব্যয় করতে পারল, কে কত দামী পোশাক পরতে পারল তার একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে সমাজে।

প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এই প্রতিযোগিতা আসলে অপচয়েরই নামান্তর। এটা ভুলে যাওয়া চলবে না যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন এবং স্বল্পোন্নত দেশ। এই দেশের অনেক কিছুই এখনও ঠিকঠাক মতো গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে পানি সমস্যা এখানে প্রকট আকার ধারণ করছে দিন দিন। রাজধানীতে পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে। দখল দূষণে নদ-নদীর অবস্থাও সঙ্গীন। এ অবস্থায় পানির অপচয় বন্ধ করতে হবে। এ জন্য  সাশ্রয়ী পানির কল তৈরি ও ব্যবহার করা যেতে পারে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যেমন এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে ওয়াসা দায়িত্ব নিতে পারে। যাতে চাইলেই কেউ পানির অপচয় করতে  না পারে, সেরকম প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং ব্যবহার করা যায় কিনা- সেটি নিয়েও ভাবতে হবে।

অন্যদিকে বিদ্যুত ব্যবস্থার এখনও যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। দেশের অনেক অঞ্চল এখনও বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসেনি। যেখানে বিদ্যুত আছে সেখানেও সারাক্ষণ বিদ্যুত থাকে না। চাহিদা এবং উৎপাদনের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় এই অবস্থা। একদিকে যেমন বিদ্যুতের সঙ্কট অন্যদিকে এর অপব্যবহারও রয়েছে । কেউ বাতি জ্বালানোর বিদ্যুত পায় না। আবার কেউ বিদ্যুত নিয়ে বিলাসিতায় মেতে ওঠে। যেখানে একটি বা দু’টি বাল্ব হলেই চলে সেখানে অনেক বাতি জ্বালানো হয়। অহেতুক আলোকসজ্জাও করা হয়। গরমের সময়ও মোটা কাপড় পরে এয়ারকুলার চালিয়ে রাখা হয়। অফিস-আদালতে লোকজন না থাকলেও অনেক সময় ফ্যান ঘুরে, বাতি জ্বলে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজহাতে ফ্যান, লাইটের সুইচ বন্ধ করার কথা ভাবতেও পারেন না অনেকে। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েও নিজহাতে সুইচ বন্ধ করি।’ এটাই আসলে গৌরবের ব্যাপার। অপচয় করার মধ্যে কোন বাহাদুরি নেই। শুধু পানি বা বিদ্যুতের ক্ষেত্রেই নয় সকল ক্ষেত্রেই যদি মিতব্যয়ী হওয়া যায় তাহলে সমাজে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কথায় বলে, বিন্দু বিন্দু করেই সিন্ধু হয়। কোন কিছুরই নিয়মবহির্ভূত এবং অপব্যবহার ভাল নয়।

এইচআর/এমএস