গণপরিবহনে নৈরাজ্য রুখতে হবে
গণপরিবহনের নৈরাজ্য কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তার একটি নমুনা দেখা গেল আবারও। ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক একজন চালককে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য এক মাসের জেল দেওয়া হলে এর প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও গাড়ির বৈধ কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে রাজধানীতে ১৩টি পরিবহনের নামে মামলাসহ ১৩ হাজার চারশ টাকা জরিমানা করে বিআরটিএ। রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু করে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় অভিযান চালায় বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ঘটনার অজুহাতে মিরপুর, আগারগাঁও, মহাখালী, শ্যামলী ও গাবতলী রুটে তাৎক্ষণিকভাবে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। এর প্রভাব পড়েছে পুরো রাজধানীতে। বলা যায় পরিবহন নৈরাজ্যের কারণে গোটা রাজধানীই অচল হয়ে পড়ে। এরফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় লোকজনকে। বিকেলের দিকে পরিবহন ধর্মঘট অবশ্য প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
গণপরিবহনে নৈরাজ্য নতুন কোনো বিষয় নয়। ভুক্তভোগীদের এ নিয়ে দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। কেউ অপরাধ করলে, আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না- এ কেমন কথা! এটা কি মগের মু্ল্লুক? কিন্তু হচ্ছে তাই। পরিবহন সেক্টরে যতোই অনিয়ম হোক না কেন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। নিলেই ধর্মঘট। সবকিছু অচল। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, ফিটনেসহীন গাড়ি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই আসে বাধা। মালিক-শ্রমিক সব এক জোট। এখানে যাত্রীস্বার্থ দেখার কেউ নেই। বাস-মালিক শ্রমিকদের কাছে সরকারও যেন অনেকটা অসহায়।
এ অবস্থা হতো না যদি প্যারালাল একটি গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেত। পরিবহন সেক্টর এখন বেরকারিখাতের কাছে জিম্মি। রাষ্ট্রায়ত্ত বিআরটিসি ধুঁকছে। যে কয়টি বাস আছে অধিকাংশ লিজ দেওয়া হয়েছে। স্টাফ বাস হিসেবেই সেগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। কোটি টাকার ভলভো রাস্তা থেকে উধাও হয়ে ভাঙ্গারির দোকানে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে বেসরকারি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে সবাই জিম্মি।
রাজধানী ঢাকা নানা দিক থেকেই বসবাসের অনুপযোগী। গণপরিবহন সংকটের কারণেও মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, হাইড্রোলিক হর্ন, বায়ূ ও শব্দ দূষণ জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। বলা হয়ে থাকে রাজধানীর পরিবহনের কোনো মৃত্যু নাই। যুগের পর যুগ চলছে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি। অনেক বার অনেক রকম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি।
পরিতাপের বিষয়, এত এত অর্থের অপচয় হচ্ছে। ঋণ খেলাপি কালচারে হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির মত ঘটনায়ও হাজার কোটি টাকা কোনো বিষয়ই না-এমন কথাও উচ্চারিত হচ্ছে সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকেও। সেই দেশে গণপরিবহন খাত ঠিক রাখার জন্য ভর্তুকি দিয়ে হলেও কেন বিআরটিসি কিংবা এর মত বাস সার্ভিস চালু রাখা যায় না সেটা বোধগম্য নয়। একটি জনহিতকর সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে গণপরিবহন ব্যবস্থা ঠিক রাখা। উন্নয়ন অগ্রগতির চাকা ঠিক রাখার জন্যও এটা অত্যন্ত জরুরি। গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে-এমনটিই প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।
এইচআর/এমএস