প্রযুক্তির সহায়তায় সংকট কাটাতে হবে
ফারুক খান
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে জর্জরিত পৃথিবী সহসাই স্বাভাবিক হবে না। আগামী দিনের পৃথিবী আর আজকের পৃথিবী এক থাকবে না। চলমান এই পরিস্থিতিতে প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এগিয়ে যাব, আমরা পারব। কারণ অতীতে বৈশ্বিক দুর্যোগের সময় প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের পরিচয় ছিল না। আজকের পৃথিবী প্রযুক্তিনির্ভর। তাই প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তিই মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে।
আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতেই হবে। পাবলিক প্লেসে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাস বা ট্রেনে উঠলেও মাস্ক পরতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশ, যেমন জাপানে সবসময় মাস্ক ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে এটা ধরে রাখতে হবে। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সব কিছুই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করতে হবে। সীমিত আকারে গণপরিবহন চালু করতে হবে।
কোভিড-১৯ এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে আত্মরক্ষা নিশ্চিতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। কর্মস্থলে বসার প্যাটার্ন বদলাতে হবে। প্রযুক্তির সাহায্যে নিজের অফিসের কাজ করতে হবে। মোট কথা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করেই এগিয়ে যেতে হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়বে। দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতিও। আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়বে। এ জন্য করোনার পাশাপাশি সরকারকে অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার লড়াই চালাতে হচ্ছে। আশার কথা হচ্ছে, এ লড়াই মোকাবিলায় এখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখা যাবে না। সেই সঙ্গে দীর্ঘ লকডাউনের ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এই প্রণোদনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে আমরা অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।
প্রযুক্তির সহযোগিতায় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলছে। সংসদ চ্যানেলের মাধ্যমে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকে ক্লাস চলছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অনলাইনে পাঠদান করছে। এটিকে আরও প্রসারিত করতে হবে। এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আমি নিজেও একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিইউপি) ট্রাস্টি বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বলেছি, অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে।
বাংলাদেশের কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোয় দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ তুলনামূলক কম। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার মধ্য দিয়ে সংক্রমণ আরও কমিয়ে আনতে হবে। আমরা সচেতন হলে এটি সম্ভব। আশা করছি, পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বাসায় বসে থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকার (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী) মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। ২৪টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার অসহায়-দিনমজুরদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছি। নেতাকর্মীরা ঘরে ঘরে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন।
আমার মোবাইল ফোন সবসময় চালু রেখেছি। যারাই ফোন দিচ্ছেন তাদেরই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা ফোন বা এসএমএস করলে, তা শুনে সমাধান দিচ্ছি। যেমন সম্প্রতি সাভারের একজন এসএমএস করেছেন, সেখানে একটি এলাকায় কয়েশ মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমি তাৎক্ষণিক ওই এলাকার সেনাবাহিনীর জিওসিকে অবহিত করলে তিনি আজকেই (গতকাল) সাড়ে চারশ পরিবারকে খাবারসামগ্রী দিয়ে এসেছেন।
সাতকানিয়ার একটি ছেলে অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাকে বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। আমি শোনার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক তাকে ওই জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলতে বলি। আমি নিজেও তাদের বলেছি। এছাড়া নিয়মিত বই পড়ছি।
লেখক : সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
এইচআর/বিএ/এমকেএইচ