ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

করোনা ও গ্রামীণ অর্থনীতি

সম্পাদকীয় ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:১৩ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২০

প্রফেসর ড. মোহা. হাছানাত আলী

বিশ্বে মহামারি করোনাভাইরাসে এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০ লাখ। সূত্র: চ্যানেল ২৪ (১৫.৪.২০২০)। মৃত্যুর মিছিল দিনদিন লম্বা হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে করোনা আক্রান্ত মানুষ ও মৃত্যুর সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত করোনা চিকিৎসায় খ্যাতিমান চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও নামিদামি ওষুধ কোম্পানিগুলো আশাবাদী হওয়ার মত কোনো সুসংবাদ বিশ্বকে দিতে পারেননি। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ লকডাউনে স্থবির।

বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে স্বস্তিতে থাকার মত কোনো পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি। দেশে প্রথমবারের মত সিলেটের একজন তরুণ চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যেই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। যাক সেসব কথা।

দেশে সাধারণ ছুটি ও এলাকাভিত্তিক লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে থাকতে অনেকটা বাধ্য করা হচ্ছে। যদিও তা করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অবশ্য এটা ছাড়া আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস করার মত আর কোনো পথও রাষ্ট্রের হাতে খোলা নেই।

দুর্যোগ মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ও দিনমজুর উৎসবের আমেজে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন উপেক্ষা করে ঢাকা ছেড়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লেন। যদিও ছুটি ঘোষণার মূল উদ্দেশ্যটা ছিল মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখা। কিন্তু কাজ হলো তার উল্টোটা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গেলো না সমন্বয়হীনতার কারণে। সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেল। আর এই পর্যায়ে এসে তা আস্তে আস্তে ব্যাপক আকার ধারণ করছে।

নতুন করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, আক্রান্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। নতুন নতুন এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর আয় প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম। বিভিন্ন তথ্য অনুসারে, সরকারি সাহায্য চলমান তবে তা অনেকাংশেই প্রয়োজনের তুলনায় কম। লকডাউনের কারণে রাস্তায় রিকশা ভ্যান ও ব্যাটারিচালিত অটো চলাচল প্রায় বন্ধ।

এমতাবস্থায় তাদের আয় কমেছে। কিন্তু পারিবারিক ব্যয় একই থাকায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। এর মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে জাতির জন্য অভিশাপ হয়ে নেমেছে ত্রাণের চাল চুরির ঘটনা। ফলে প্রান্তিক মানুষগুলো বঞ্চিত হচ্ছে।

সামনে রোজা। মুসলমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উদযাপন। কলকারখানায় কাজ নেই। হাট-বাজার, বিপণিবিতানগুলো বন্ধ। ক্ষুদ্র আয়ের মানুষগুলো পড়তে যাচ্ছে এক দীর্ঘমেয়াদী অনিশ্চিত আর্থিক সংকটে। কবে দেশ স্বাভাবিক হবে, কল কারখানায় উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে, পথ ঘাটে মানুষের চলাচল আগের মতো স্বাভাবিক হবে, তা এই মুহূর্তে কারও জানা নেই।

কিছুদিন পরেই বোরো মৌসুম শুরু হবে। প্রচুর ধানকাটা শ্রমিকের প্রয়োজন। রাস্তাঘাট বন্ধ, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাওরাঞ্চলে সময়মত ধানকাটা শ্রমিক পাওয়া না গেলে কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিষয়টি নিয়ে সরকারের কৃষি বিভাগকে এখনই ভেবে দেখতে হবে। তাছাড়া এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকেও তাদের কর্মপন্থা এখনই নির্ধারণ করে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। অন্যথায় গ্রাম্য কৃষি অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।

করোনা মহামারি ইতোমধ্যেই দেশের গার্মেন্টস, পর্যটন ও পরিবহন খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিমান চলাচল আজ হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পর্যটন, পরিবহন ও গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকরা ব্যাপকহারে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। শ্রমিক শ্রেণির আয়ের ওপর গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান অনেকাংশেই নির্ভর করে। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে গ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ রিকশা চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। লকডাউনের পর শহর ফাঁকা। আয় বন্ধ। তারাও এখন গ্রামে আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করেন। তারাও ঘরবন্দী। রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ। গ্রামের অনেক পরিবারই রেমিট্যান্সের টাকার ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং এই মুহূর্তে গ্রামীণ অর্থনীতি ব্যাপক হুমকির মধ্যে পড়েছে। গ্রামীণ কৃষিকে যে কোনো মূল্যে বাঁচাতে হবে। বিনা সুদে প্রকৃত কৃষকের মধ্যে লোন দেয়ার ব্যবস্থা করা আশু প্রয়োজন।

আগামী তিন মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা এখন সময়ের দাবি। তবে তা অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে। যে কোনো মূল্যে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও শস্যের বিপণন ব্যবস্থা সচল রাখা খুবই জরুরি। তাই সময় থাকতে এখনই গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে স্বাভাবিক রাখার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া সময়ের দাবি। কৃষক বাচঁলে দেশ বাচঁবে আর শ্রমিক বাচঁলে শিল্প বাচঁবে।

লেখক
প্রফেসর, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল: [email protected]

এইচএ/এমকেএইচ