ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

করোনার প্রভাব : বোরো ও আউশ ধান ঘরে তোলার প্রক্রিয়া

সম্পাদকীয় ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:৪৮ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০২০

ড. মো. শাহজাহান কবীর

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান অঞ্চল থেকে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং এ বছরের মার্চের প্রথমার্ধেই বৈশ্বিক মহামারির রূপধারণ করে। মার্চের মাঝামাঝি দেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা বিবেচনায় ২৬ মার্চ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গণপরিবহন বন্ধ করে দেশব্যাপী লকডাউন অবস্থা শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতি যতই অবনতি হচ্ছে লকডাউনের সময়সীমা ততই বর্ধিত করছে বাংলাদেশ সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি হুমকির মুখে, বিশ্ব জুড়ে খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লকডাউন অবস্থা থাকলেও খাবার খেতে হবে এবং সবাইকে খাবার দিতে হবে। অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে খাবার বলতে এখন ভাত-ই প্রধান খাদ্য। খাদ্য সংকট হলে নিশ্চিত বাহির থেকে খাবার এনে আমাদের এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে খাওয়ানো সম্ভব নয় এবং খাবার পাওয়া যাবে না। পৃথিবীতে যত মহামারি হয়েছে এবং তাতে যত লোক মারা গেছে তারচেয়ে বেশি লোক মারা গেছে মহামারি উত্তর দুর্ভিক্ষে।

চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বোরো মওসুমে ২০৪.৩ লক্ষ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমি বোরো আবাদ করা হয়েছে। বর্ণিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের সকল নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করায় এখন পর্যন্ত বোরো চাষে কৃষি উপকরণ বা পরিচর্যা বিষয়ে কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে জেলা ভেদে বোরো ধান থোড় এবং পরিপক্ব অবস্থায় রয়েছে। এমতাবস্থায় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচ চালু রাখতে জ্বালানি তেলসহ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎপ্রবাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। কঠোর লকডাউন অবস্থায় সার, বীজ, কীটনাশক ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ, সেচযন্ত্রসহ কর্তনযন্ত্রের মেরামতকাজ নির্বিঘ্ন রাখতে খুচরা যন্ত্রাংশের দোকান খোলা রাখার জন্য সরকার স্থানীয় প্রশাসনকে জোরালো নির্দেশনা দিয়েছে এবং এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। রোগবালাই বিশেষ করে ব্লাস্ট আক্রমণ এবং পোকা-মাকড়ের উপদ্রপ না থাকায় মাঠে চলতি বোরো ধান আশানুরূপ অবস্থায় আছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুযায়ী দেশে যাতে আবাদযোগ্য জমি পতিত না থাকে তা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ বছর আউশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে আউশের আবাদ গত বছরের চেয়ে দুই লাখ হেক্টর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আউশের বীজতলা প্রস্তুতির কাজ চলছে। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক কৃষি প্রণোদনার আওতায় আউশ ধানের বীজ কৃষক পর্যায় বিতরণ কার্যক্রম যথাযথভাবে চলছে। সময় সময় আউশের বীজতলা তৈরি করার জন্য আউশ চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে যাতে সঠিক সময়ে কৃষকগণ আউশের রোপণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা কৃষকদের সময় সময় অবহিত করা হচ্ছে যাতে আসন্ন পরিস্থিতি অনুধাবন করে ভবিষ্যতে খাদ্যশস্য ঘাটতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়। কৃষি উপকরণ ক্রয় ও বিক্রয়ের দোকান খোলা রাখা এবং পরিবহন চলাচল বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও করোনার পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় আউশ মওসুমের বীজতলা তৈরি এবং কৃষি উপকরণ ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছে না। যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় আউশ ধান চাষের আওতায় জমি পরিমাণ যাতে না কমে সে জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় সেচ বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।

তবে করোনায় উদ্ভূত অবস্থায় বোরো ধানের ফলনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন। এ বিষয়ে তারা আশঙ্কা করছেন বর্তমান পরিস্থিতির অবনতির সাথে সাথে লকডাউন সময় বর্ধিত হতে পারে। এতে বোরো ধানের কর্তন দীর্ঘায়িত হতে পারে, শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে এবং কর্তনকালীন ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ারও সম্ভাবনা আছে।

উল্লেখ্য যে, হাওর অঞ্চলে সাত জেলায় বোরো ধান কাটার উপযোগী অবস্থায় রয়েছে এবং বৈশাখের প্রথমার্ধে পুরোদমে ধান কর্তন শুরু হবে। এই অঞ্চলের সাত জেলায় চলতি মওসুমে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ১০১ হেক্টর জমির ধান কর্তন সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সরকার ইতোমধ্যে বিশেষ উদ্যাগ গ্রহণ করেছে। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জরুরি ভিত্তিতে ধানের কর্তনযন্ত্র বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব জেলার জন্য নতুন ১৮০টি কম্বাইন হারভেস্টর ও ১৩৭টি রিপার দ্রুত সরবরাহের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

অন্যদিকে পুরোনো ২২০টি কম্বাইন হারভেস্টর ও ৪৮৭টি রিপার অতিদ্রুত মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা যেমন মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, জামালপুর, ময়মনসিংহসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় হাওরে শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে শ্রমিক যাওয়া শুরু হয়েছে।

হাওর অঞ্চলের মোট জমির মধ্যে হাওর অধ্যুষিত ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার জমির ধান কর্তনের জন্য যে পরিমাণ (৮৪ লক্ষ) কৃষিশ্রমিক প্রয়োজন তার ১৮ শতাংশ (১৫ লক্ষ ১২ হাজার) ঘাটতি রয়েছে। ধরা হচ্ছে এ এলাকায় ধান কাটতে ২৫ দিনের মতো সময় প্রয়োজন হবে। তাই শ্রমিক ঘাটতি পূরণে দৈনিক গড়ে প্রায় ৬৭ হাজার কৃষিশ্রমিক অন্য জেলাগুলো থেকে সরবরাহ করতে হবে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বোরো ধান কর্তন মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে জুন অবধি চলবে। এ সময়ে আশা করা যায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে আসবে। বিস্তৃত প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করলে এই সকল অঞ্চলে চলতি বোরো ধানের কর্তনকালীন ক্ষতি ও বাজারজাতকরণের ঝুঁকিও অনেক কমবে।

শ্রমিক সংকট এবং উদ্বৃত্ত জেলা সম্পর্কে তথ্য সারণী ১-এ দেওয়া হলো।

jagonews24

উক্ত সারণী থেকে প্রতীয়মান হয় যে, লকডাউন অবস্থা চলমান এবং সকল গণপরিবহন বন্ধ থাকলে শ্রমিক উদ্বৃত্তের অঞ্চল থেকে কৃষিশ্রমিকদের হাওর অঞ্চলসহ অন্যান্য শ্রমিক সংকট অঞ্চলে যাতায়াত সম্ভব হবে না। এতে হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কর্তন চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে শুরু হলে কৃষকগণ শ্রমিক সংকটের সম্মুখীন হবে। হাওর অঞ্চলের জন্য সরকারিভাবে কর্তনযন্ত্র সরবরাহের ঘোষণা আসায় উক্ত এলাকার কৃষকগণ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছে। করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে গণপরিবহন বন্ধ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনায় আগাম কর্তনকৃত ধান বাজারজাত বিষয়ে কৃষকগণ বিপাকে পড়তে পারে। সুতরাং হাওর অঞ্চলসহ অন্যান্য আগাম কর্তনকৃত অঞ্চলের জন্য সরকারের ধান ক্রয় এবং আঞ্চলিক বাজারগুলোতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ধানের বাজারমূল্য নিয়ে আশঙ্কা থাকায় সঠিক বাজারমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের ভূমিকা অত্যাবশ্যক।

তবে যে সকল অঞ্চলে বোরো ধানের কর্তন মে মাসের মাঝমাঝি থেকে শুরু হয়ে জুন পর্যন্ত চলবে এবং আশা করা যায় করোনা পরিস্থিতি শিথিল হয়ে যাবে ও মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে। ফলশ্রুতিতে বোরো ধানের কর্তন ও বাজারজাতকরণও স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করবে।

করোনার প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে দেশের প্রধান খাদ্যশস্যের সরবরাহ এবং চাহিদা নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারলে খাদ্য ঘাটতির মতো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো ধানের পরিপক্বতার ওপর ভিত্তি করে সকল পর্যায় থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্তন নির্বিঘ্নে করতে পারলে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। চলতি বোরো চাষের জমি লক্ষ্যমাত্রা প্রায় এক লক্ষ হেক্টর কম অর্জিত হলেও গড় ফলন হেক্টও প্রতি ৪.৩ টন (গত বছর ৪.২টন/হে.) হলে গত বোরো মওসুমের তুলনায় ১.১৪ লক্ষ টন উৎপাদন বাড়বে এতে মোট উৎপাদন দাঁড়াবে ২০৪.৯৩ লক্ষ টন। আউশ মওসুমে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ ও ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা গেলে উৎপাদন কিছুটা বেড়ে মোট পরিমাণ হতে পারে ৩৭.২৬ লক্ষ টন। যদি প্রলম্বিত খরা এবং করোনার আতঙ্কে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে আউশ মওসুমে মোট ধানী জমির ৫ শতাংশ কমতে পারে। জুনের পর করোনাভাইরাসের প্রভাব কমে গেলে এবং আমন উৎপাদনের আগাম ও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা গেলে ফলন বাড়ানো সম্ভব হবে। নতুন ধান উৎপাদনের প্রযুক্তি ও কৃষি উপকরণের সরবরাহ ঠিক থাকলে আমনের উৎপাদন বাড়তে পারে (২.০০-২.৫০ লক্ষ টন) এতে মোট উৎপাদন হবে ১৫৫.০০ লক্ষ টন। সেক্ষেত্রে দেশের মোট চালের উৎপাদন দাঁড়াবে ৩৯৬.৪৭ লক্ষ টন।

এমতাবস্থায় দেশের মোট ১৬ কোটি ৫৬ লক্ষ জনগোষ্ঠির জন্য মাথাপিছু গড় বার্ষিক ১৩৪ কেজি চাল হারে এবং মুড়ি, চিড়া, খই, পিঠা এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ মোট চালের প্রয়োজন হবে প্রায় ২৫০ লক্ষ টন। মানবখাদ্যের পাশাপাশি আরও বহুবিধভাবে চাল ব্যবহৃত হয় যেমন বীজ, গবাদিপশুর খাদ্য এবং শিল্পকারখানায় উপাদান হিসেবে (২৬%)। আশা করা যায় উদ্বৃত্ত থাকতে পারে ৪৩.৯২ লক্ষ টন (সারণী২)।

jagonews24

সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সঠিক ক্ষতির পরিমাণ বলা দুরূহ হলেও হাওর অঞ্চলে আগাম বোরো কর্তনের চাপ, কৃষিশ্রমিক সংকট এবং কর্তনযন্ত্রের ব্যবহার সমস্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ (কালবৈশাখী ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি) বিবেচনায় নিয়ে আপদকালীন কর্তন দীর্ঘায়িত ক্ষতির ঝুঁকি যথাক্রমে হাওর অঞ্চলে ৫% এবং বাকি অঞ্চলে ২% হারে হিসাব করা যেতে পারে (সারণী৩)। তবে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে যেসকল এলাকায় বোরো ধানের কর্তন শুরু হবে সেসকল এলাকায় চলতি বোরো ধানের উৎপাদন ক্ষতির ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম বলে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা মনে করেন।

jagonews24

একইভাবে করোনার আতঙ্ক এবং দীর্ঘায়িত খরা বিবেচনায় আসন্ন আউশ মওসুমের মোট জমির লক্ষ্যমাত্রা ৫-১৫ শতাংশ কমার সম্ভবনা আছে কিন্ত গড় ফলন ঠিক থাকলে উৎপাদন কমার সম্ভবনা নেই। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উভয় মওসুমের মোট ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে ১৪.৭৫ লক্ষ টন। সেক্ষেত্রে দেশের মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৩৬৮.১২ লক্ষ টন আর উদ্বৃত্ত হবে ২৮.২৩ লক্ষ টন (সারণী৩)।

ক্ষতির ঝুঁকির চিত্র থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, অসতর্কতাবশত কোনো প্রকার বিচ্যুতি ঘটলে বড় ধরনের খাদ্যশস্য ঘাটতির সম্মুখীন হতে হবে যা জাতীয় বিপর্যয় নিয়ে আসবে। সুতরাং উক্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অতি সতর্কতার সাথে নিম্নে বর্ণিত সুপারিশমালাসহ চাহিদা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদনের ঝুঁকি হ্রাসে তৎপর হতে হবে।

সুপারিশসমূহ

১. বিগত বছরগুলোতে ধানকাটা মওসুমে কৃষিশ্রমিকের সংকট পরিলক্ষিত হয়েছে। চলতি মওসুমে করোনার প্রার্দুভাবের দরুণ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের চলাচল বিঘ্নিত হবে এতে শ্রমিক সংকট আরও তীব্র হতে স্বচ্ছন্দে চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও কৃষিশ্রমিকের স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ পদপক্ষেপ নেয়ার জন্য সঠিক নির্দেশনা থাকতে হবে।

২. তবে আশার কথা হচ্ছে অনেক অকৃষিশ্রমিক (রিকশা/ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র দোকানি, নির্মাণ ও অন্যান্য শ্রমিক) করোনার সংকট কাটাতে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর অঞ্চল থেকে নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে আপদকালে তাদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে ধান কর্তন কাজে নিয়োজিত করে আয়ের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক কৃষিশ্রমিক সংকট নিরসন করা যাবে। এছাড়াও, এলাকা উপযোগী বরাদ্দকৃত কম্বাইন হারবেস্টার ও রিপার সময়মতো কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। সম্ভব হলে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পরিবহনের মাধ্যমে কর্তন কার্যক্রম গতিশীলতা আনয়ন করতে হবে।

৩. হাওর অধ্যুষিত মৌলভীবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের চা বাগানের শ্রমিকদের সাময়িকভাবে নিকটবর্তী এলাকায় বোরো ধান কর্তনে নিয়োজিত করে সেসব এলাকায় কৃষিশ্রমিক সংকট মোকাবিলা করা যেতে পারে।

৪. বোরো ধানের ন্যূনতম বাজার মূল্য কেজি প্রতি ২৬ টাকা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. বোরো ধানের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা হলে আসন্ন আউশ ও আমন মওসুমে ধান রোপণে কৃষক উৎসাহিত হবে।

৬. আউশ মওসুমে দীর্ঘায়িত খরার কারণে বীজতলা তৈরি বিলম্বিত হতে পারে যা উক্ত মওসুমের রোপণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা আছে। সেক্ষেত্রে আউশ এবং আমন মওসুমে ধানচাষিদের বিনামূল্যে সেচ নিশ্চিত করা যেতে হবে।

৭. হাওর অঞ্চলে যে সকল ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবায় নিয়োজিত নয় তাদেরকে নিয়ে বোরো ধান কর্তনকালীন কৃষিশ্রমিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নিযোজিত করা যেতে পারে।

লেখক : মহাপরিচালক, কৃষি অর্থনীতি বিভাগ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এইচআর/বিএ