লাল পতাকায় নীল বেদনায় প্রবাসীরা
ভাবছেন এ আবার কেমন কথা লাল পতাকায় নীল বেদনা-প্রবাসীরা সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ বিদ্যমান বাস্তবতায় এক আতঙ্কের নাম। চীনের উহান শহরে এর উৎপত্তি; কিন্তু ছড়িয়ে গেছে দুই শতাধিক দেশে। কোভিড-১৯ ভাইরাস অতি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে তা বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেই নাড়িয়ে দিচ্ছে৷ বাংলাদেশের রিজার্ভের সবচেয়ে বড় ভরসা রেমিটেন্স।রেমিটেন্স আসার অন্যতম দেশগুলোর মধ্যে, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহারাইন, সংযুক্ত আরব আরব-আমিরাত, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এই সবগুলো দেশেই আক্রান্ত করোনাভাইরাসে। কেমন আছে রেমিটেন্স যোদ্ধারা বর্তমান পরিস্থিতিতে এক কথায় বলবো ভাল নেই! সত্যি প্রবাসে আমরা কেউ ভালো নেই!
ভালো না থাকার অনেকগুলো কারণ আছে। করোনাভাইরাসের সাথে সম্প্রতি প্রবাস থেকে অনেকে বাংলাদেশে গিয়েছেন বিশেষ করে ইতালি থেকে যাওয়া এক বাংলাদেশি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই থেকেই যেন শুরু হয় প্রবাসীদের বাঁকা চোখে দেখা। সে যেটা করেছে আমি এটা সমর্থন করিনা আমার দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকি আবার আপনি যদি দেখেন তার কথার যুক্তি আছে, ডিসেম্বর মাস থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় লম্বা সময় পেয়েও কেন এয়ারপোর্টে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হলো না,কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরিবেশ ছিল কতটুকু, আপনি ভাবতে পারেন করোনার ছোবলে ইতালি একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সারি । সেখান থেকে যখন একজন লোক দেশে আসে তার মানসিক অবস্থা কেমন থাকে? শুধু ইতালি নয় অন্যান্য আক্রান্ত দেশ থেকে যখন প্রবাসীরা আসে তাদের অবস্থা মোটেও ভালো না। অনেকে ব্যবসা বা কর্মস্থল হারিয়ে বাধ্য হয়ে চলে আসে। প্রত্যেকটা মানুষেরই নিজের প্রতি নিজের পরিবারের প্রতি মায়া আছে। কেউ চায়নি তার পরিবার আক্রান্ত হোক। চলতি মাসের ১ তারিখে মালয়েশিয়া থেকে ফিরে চাঁদপুরের জসিম শেখ। এয়ারপোর্টে তার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়নি জানানো হয়নি কোন সতর্কতা। তখন করোনাভাইরাস আক্রান্ত তালিকায় ছিল মালয়েশিয়া, দেশটিতে আক্রান্ত সংখ্যা ছিল২৯ জন, তিনি সরাসরি চলে যান গ্রামের বাড়িতে।স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সদস্যদের সাথে মিশে হাটবাজারে যান। ভাবা যায় কত ভয়ঙ্কর বিষয়। "যদি জসিম সেদিন আক্রান্ত হয়ে আসতো সে কি বাঁচাতে পারত তার পরিবারের সদস্যদের" -এরকম হাজারো জসিম প্রতিদিন আক্রান্ত কারী বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন, হয়তোবা তাদের অজান্তেই আক্রান্ত হয়ে গেছে প্রিয় মানুষ প্রিয় পরিবার ও দেশ।তাদেরকে দেওয়া হয়নি কোন ধরনের সতর্কতা। এই দায় কার রাষ্ট্রের না প্রবাসীদের?
করোনাভাইরাসের আগে কোয়ারেন্টিন ও হোম কোয়ারেন্টিন এই শব্দের সাথে কতজন প্রবাসী পরিচিত ছিল, তারা কি এর আগে কখনো এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল?
আক্রান্ত দেশ থেকে যেসব ফ্লাইট আসত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে ধারণা বা বিশেষ লিফলেট ফ্লাইট এর মধ্যে দেওয়া যেত।যেমন করোনাভাইরাস কি এর সংক্রমণ কিভাবে হয়, পরিবারকে কিভাবে বাঁচানো যায়, কতদিন পরিবারের বাইরে থাকা লাগে,এয়ারপোর্টে নেমে আপনার কি কি কাজ সম্পন্ন করা লাগে, বাধ্যতামূলক ইত্যাদি বিষয়ে। বিমানে বিভিন্ন ম্যাগাজিন যেভাবে পাই। আমরা এর কিছুই করতে পারিনা এই দোষ কি প্রবাসীদের? সম্প্রতি যারা করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছে তাদের জন্য প্রত্যেক জেলায় বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা যেতে পারত বিশেষ করে স্টেডিয়াম বা অনেক ডাকবাংলা পরিত্যক্ত ভবন সারা দেশে আছে এসব ভবন গুলো কাজে লাগানো যেত, যেমন করোনা মোকাবেলায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় করছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ যে অবকাঠামো সেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরিবেশ কতটুকু এটা বিবেচনা করা উচিত ছিল।
এখন অবস্থা এমন যে প্রবাসীরা তার পরিবারকে আক্রান্ত করার জন্যই দেশে এসেছে। একজন প্রবাসী যখন পাঁচ-সাত বছর বা তারও বেশি পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকে অবশ্যই সে চাইবে তার পরিবারের কাছে যেতে, অবশ্যই সে চাইবে তার পরিবার ভালো থাকুক তাদের জন্যই তো প্রবাসে পড়ে থাকা বছরের-পর-বছর দুই সপ্তাহ থাকতে পারবে না? সচেতনতা না দিয়ে ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবস্থা না করে ঢালাও ভাবে দোষ দেওয়া হচ্ছে প্রবাসীদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচকই নিম্নমুখী৷ তার মধ্যেও শুধু ব্যতিক্রম ছিল রেমিট্যান্স৷ চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১০৪২ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ ভাগ বেশি৷ তাহলে কেন প্রবাসীদের বাঁকা চোখে দেখবে প্রবাসী ও তার পরিবারের সুরক্ষার দায়িত্ব কি রাষ্ট্রের নয়, এটা বড়ই কষ্টের যখন দেখি প্রবাসীদের বাড়ির সামনে লাল পতাকা টানানো হয়, চায়ের দোকানে প্রবাসীদের যাওয়া নিষেধ করা হয় ডাক্তাররা প্রবাসী ও তাদের স্বজনদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা জানান, হোম কোয়ারেন্টিনের নামে হয়রানি করা হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে আক্রান্ত কারী দেশ থেকে যেসব পর্যটক ঘুরে এসেছেন তাদের মধ্যে কতজন কে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, আপনি কিভাবে নিশ্চিত হবেন তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হচ্ছে না, তাদের বাড়ির সামনে কেন লাল পতাকা উড়ছে না? তারা শ্রমিক নয় বলে?
দেশকে ভালোবেসে দেশের কথা চিন্তা করে লাখ লাখ প্রবাসী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশে পড়ে আছে একবার ভেবেছেন তাদের কথা।যেখানে মৃত্যু দরজার সামনে কড়া নাড়ছে তারপরও দেশে যাওয়ার চিন্তা করেনি। যখন দেখি মাত্র কয়েকদিনের বন্ধ বাংলাদেশে- এর মধ্যেই দলবেঁধে সবাই গ্রামে ছুটছি।এই কয়টা দিন আপনারা ঘরে থাকতে পারলেন না আর বছরের-পর-বছর প্রবাসীরা পড়ে আছে লাল পতাকা আপনাদের বাড়িতে কি টানানো হবে? প্রবাসীরা দেখেছে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা। দেখছি মৃত্যুর মিছিল। কী হবে বাংলাদেশে? সুরক্ষিত কি থাকবে আমাদের স্বজনরা। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করছেন এই ভেবে প্রবাসীরা নীরবে কাঁদছে।নিজেরালঅনিশ্চয়তার মধ্যে থেকেও দেশকে সুরক্ষিত রাখতে চায় তারা।
কারোর ওপর দোষ না চাপিয়ে নিজে সতর্ক হন দেশ ও পরিবারকে বাঁচান।
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক।
এইচআর/এমকেএইচ