ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সিইসি কি আদৌ প্রবাসীদের ভোটার করতে চান?

তানভীর আহমেদ | প্রকাশিত: ১০:২৩ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার রক্ষায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনে প্রবাসী ব্রিটেন বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে প্রবাসীরা ভোটাধিকারের দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় পরিচয়পত্রের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই কার্ডের মাধ্যমেই প্রবাসীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, টেলিফোনের সিম ক্রয়, কর ও রাজস্ব প্রদান, যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের সুবিধা, সন্তানদের বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তিসহ যেকোনো ব্যক্তিগত ও সামাজিক কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।

ব্রিটেনে নিযুক্ত বর্তমান হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই স্মার্টকার্ডের প্রয়োজনীয়তার দাবি উত্থাপন করা হয়। হাইকমিশনার যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের স্মাটকার্ডের বিতরণের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশনে তাগাদা দেয়ার পরই নির্বাচন কমিশন এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলাদেশ থেকে নির্বাচন কমিশনের অপর তিন কমিশনার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাব দেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন করতে প্রবাসীদের ছয় ধরনের দলিল জমা দিতে হবে।

১. বিদেশে অবস্থানরতদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাসপোর্টের কপি।
২. বিদেশি পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিদের দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র।
৩. সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক মর্মে শনাক্তকারী এমন একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের ফটোকপি।
৪. বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ অঙ্গীকারনামা।
৫. বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হয়নি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা এবং
৬. সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র।

প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। ওয়েব পোর্টালটির নাম (www.services.nidw.gov.bd)। তবে একটি বিষয় নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনায় নিতে হবে যেহেতু অনেক তৃতীয় প্রজন্মের ব্রিটিশ বাংলাদেশি এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন তাই তাদের জন্য বাংলার পাশাপাশি একটি ইংরেজি ভার্সনের নিবন্ধন ফরম যুক্ত করা খুবই জরুরি। অনেক ব্রিটিশ বাংলাদেশির পক্ষেই ইউনিকোডে বাংলা টাইপ করে নিবন্ধন করা জটিল হবে। বিশেষ করে বয়োজেষ্ঠ নাগরিক যারা কম্পিউটার চালাতে অতটা দক্ষ নন, তাদের জন্য হাইকমিশনে ম্যানুয়াল ফরম পূরণ করে নিবন্ধনের সহজ অপশনও রাখতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদনপত্রটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসের প্রেরণ ও তদন্ত শেষে এনআইডি সার্ভারে প্রেরণ করা হবে। তারপর আবেদনকারীকে লন্ডনের দূতাবাসে বায়োমেট্রিক্স গ্রহণের জন্য প্রবাসে টিম প্রেরণ করা হবে। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল দ্বারা সার্বিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য একটি হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে যার মাধ্যমে নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় ফরম সরবরাহ করা হবে। আবেদনকারীর সকল ডাটা কেন্দ্রীয় সার্ভারে এ্যাফিস ম্যাচিং শেষে লন্ডনে দূতাবাসের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জানতে চাইলাম যে, আমি একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি, আমার পাসপোর্টে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নো ভিসা সিল দেয়া আছে তারপরও কেন আমাকে নতুন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ গ্রহণ করতে হবে? প্রধান নির্বাচন কমিশন আমার মুখের ওপর বলে দিলেন যে, আমি যেহেতু ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছি আমি আর বাংলাদেশের নাগরিক নই! আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ গ্রহণ করতে হবে!

নির্বাচন কমিশনারকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললাম, আমার জন্ম বাংলাদেশে। আমি জন্মসূত্রেই বাংলাদেশি। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেই আমার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চলে যাবে না। আমি যদি বাংলাদেশের নাগরিক না হয়ে থাকি তাহলে আমার ব্রিটিশ পাসপোর্টে লন্ডন হাইকমিশন থেকে নো ভিসা স্টিকারটি কীভাবে দেয়া হলো? আমি যে বাংলাদেশের নাগরিক সেই বিষয়টি যাচাই-বাছাই ও তদন্তের পরই হাইকমিশন আমাকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নো ভিসা স্টিকারটি আমার ব্রিটিশ পাসপোর্টে লাগিয়ে দিয়েছে যেন আমি ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়েও বাংলাদেশে ভিসা ছাড়া যাতায়াত করতে পারি। পাসপোর্টের যতদিন মেয়াদ ততদিন এই নো ভিসা সিলটিরও মেয়াদ থাকবে।

বয়স্ক মানুষের সঙ্গে তর্ক করা দৃষ্টিকটু। হাইকমিশনার সাঈদা মুনা বারবার আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাকে থামিয়ে দিলে বললেন, আপনি নো ভিসা পেয়েছেন ‘বাই ডিসেন্ট’। অর্থাৎ আমার বাবা-মা বাংলাদেশি সে কারণে আমি বাংলাদেশি। পরে একান্ত সাক্ষাৎকারে সাঈদা মুনা জানালেন, ‘এটি আসালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ম, প্রবাসীদের এই নিয়ম মেনেই আবেদন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বিষয়টি মাথায় রেখেই এই নিয়মটি একটু কঠোর করতে হয়েছে।’

ভিডিও কনফারেন্সে বসে থাকা অপরপ্রান্তের নির্বাচন কমিশনার ড. রফিকুল ইসলাম জানালেন, প্রবাসীদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা দিলেই চলবে। কিন্তু প্রবাসীদের অধিকাংশই ব্রিটিশ পাসপোর্ট নো ভিসাটি করিয়ে নেন নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিয়ে। নো ভিসা স্টিকার লাগিয়ে নিলে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নবায়ন করেন না। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট খাতে রাষ্ট্রের ইনকাম কিন্তু কমে যাবে না। কারণ নো ভিসা ফি হিসেবে ৫০ ডলার তারা গ্রহণ করছেন। নির্বাচন কমিশন নিশ্চয়ই জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের সময়ও একটা নির্দিষ্ট অংকের ফি গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়টি বাধ্যতামূলক না করলে সময়ক্ষেপণ কম হবে। ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের যখন নো ভিসা রিকোয়ার্ডের মেয়াদ শেষ হবে তখন তারা তাদের সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগটি রাখা উচিত। তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্ট খাতে আয়ের পথটিও বন্ধ হবে না।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইনে কয়েকটি বিতর্কিত ধারা সংযোজন করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত ওই বিলের ছয়টি অধ্যায়ে ২৮টি ধারার মধ্যে ৬ ও ৭ নম্বর ধারায় প্রবাসীদের নাগরিকত্বে সীমাবদ্ধতা এবং দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করায় প্রবাসীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। পরে প্রবাসীদের প্রবল আপত্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইনটি বাতিল করেন। ২০১৬ সালের এই আইনের একটি ধারায় ছিল বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন তাহলে তার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চলে যাবে এবং নির্ধারিত নিয়ম মেনে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য তাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে। ধারণা করি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাগরিকত্ব আইনের এই ধারাটিকে মাথায় রেখেই আমার নাগরিকত্ব খারিজ করে দিয়েছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে এই ধারাটি বাদ দিয়েছেন সেই বিষয়ে হয়তো নির্বাচন কমিশনার অবহিত ছিলেন না।

thumbnail

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমদাদ চৌধুরী নির্বাচন কমিশনারকে বললেন, বাংলাদেশে তার কোনো রক্তের সম্পর্কের কেউ নেই তিনি কেমন করে তার আইডেন্টিটি ভেরিফাই করবেন? নির্বাচন কমিশনার সেই সাংবাদিককে উত্তর দিলেন, আপনার যেহেতু বাংলাদেশে রক্তের সম্পর্কের কেউ নেই তাহলে আপনার বাংলাদেশে গিয়ে ভোট দেয়ার দরকার কী? নির্বাচন কমিশনার বেঁচে গেছেন, তিনি ইংল্যান্ডের নির্বাচন কমিশনার নন। শুধু এই কথাটি বলার জন্য তার চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে হতো। নির্বাচন কমিশনকে মাথায় রাখতে হবে ব্রিটেনের অধিকাংশ বাংলাদেশি নাগরিকই সিলেট অঞ্চলের। এই অঞ্চলের অনেক প্রবাসীরই কয়েক প্রজন্ম ইংল্যান্ডে বসবাস করেন, তাদের অনেকের পক্ষে বাংলাদেশে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় খুঁজে পাওয়া দুরূহ হবে। বর্তমান বিশ্বের ডেটা প্রকেটশন অ্যাক্ট খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনা হয়, রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা পাসপোর্টের কপি দলিল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে বলাও অন্যায় আবদার। আমার রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের ব্যক্তিগত ডেটা আমি কোনো অবস্থাতেই হস্তান্তর করতে পারি না। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির প্রাইভেসি লঙ্ঘিত হবে।

নির্বাচন কমিশনারের কাছে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ১২ ফেব্রুয়ারি একজন আবেদন করলে তিনি ঠিক কত দিনের মধ্যে লন্ডনে স্মার্ট কার্ড পাবেন? প্রধান নির্বাচন কমিশনার উত্তরে জানালেন, এখনও তিনি সময়সীমা বলতে পারবেন না, কারণ ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। যে দিন অনুমতি পাব সেই দিন সময়সীমা বলতে পারব।

এদিকে হাইকমিশনার সাঈদা মুনা বলছেন, আগামী মার্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লন্ডনে এলে তার মাধ্যমে প্রবাসীদের তিনি স্মার্ট কার্ড তুলে দিতে পারবেন। আমাকে আর সম্পূরক প্রশ্ন করতে না দিয়ে বললেন, এবার বয়স্ক সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে দেন।

নির্বাচন কমিশনের আরেকটি বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ফখরুদ্দিনের আমলে একটি অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছিল দ্বৈতনাগরিকত্বের ব্যাপারে, সেই অর্ডিন্যান্সে বলা হয়েছিল প্রবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আলাদা করে সনদপত্রের প্রয়োজন হবে না। শুধু তাই নয়, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে গিয়েছিলেন তখন লন্ডনে তিনি প্রবাসীদের বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে প্রবাসীরা যে ভূমিকা পালন করেছে, যেভাবে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে তার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটেন প্রবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সম্মান তিনি দেবেন। সেই ঘোষণার পর ১৯৭২ সাল থেকে ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা দ্বৈত নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নতুন করে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ সংগ্রহ করতে বলে প্রকারান্তরে বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তটাই বদলে ফেলতে চাইছেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ১২২ ধারা অনুযায়ী একজন নাগরিকের ভোট দেয়ার যে বিধান রয়েছে সেখানে প্রবাসীদের ভোটদানে কোনো বাধা নেই।

জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তিকে কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় তাহলে নাগরিককে সেই রাষ্ট্রের সকল অধিকার দিতে হবে। দ্বৈত নাগরিক আর নাগরিকের মধ্যে কোনো পার্থক্যে আদতে নেই। রাষ্ট্রের নাগরিকদের সকল সুবিধা পাওয়ার কথা যদি রাষ্ট্র তাকে নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দোহাই দিয়ে নতুন করে প্রবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ গ্রহণের কথা বলে বিড়ম্বনায় ফেলে দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনার লন্ডন সফর আগে বা নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে যে স্থানীয় ইস্যুগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনেনি সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল সংবাদ সম্মেলনে।

একজন প্রবাসী হিসেবে আমি যদি বাংলাদেশে গিয়ে অনায়াসে স্মার্ট কার্ড তৈরি করতে পারি তাহলে কেন আমাকে লন্ডনে বসে এত জটিল নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। যুক্তরাজ্যের হাজার হাজার প্রবাসী রয়েছেন যারা বাংলাদেশে গিয়ে এমন স্মার্ট কার্ড বানিয়েছেন। যেসকল প্রবাসী ইতোমধ্যে বাংলাদেশে গিয়ে স্মার্ট কার্ড বানিয়েছেন তাদের যদি এমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ প্রয়োজন না হয় তাহলে প্রবাস থেকে অনলাইনে আবেদন করলে কেন সেই সনদ প্রয়োজন হবে? বর্তমানে বাংলাদেশের হাফডজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রয়েছেন যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের অনেকেই বিভিন্ন ব্যবসা ও চাকরির সুবাদে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তারা স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করছেন। নির্বাচন কমিশন কি তাদের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বৈত নাগরিকের সনদ চেয়েছিলেন? আসলে প্রবাসীদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সনদ গ্রহণ করতে বলে একটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এই প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি যেমন বাড়বে তেমনি প্রবাসীদের ভোগান্তিও বাড়বে।

শুধু পাসপোর্ট জমা দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের সহজ পথে হাঁটতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। বিশ্বের সব দেশেই পাসপোর্ট একটি পরীক্ষিত ভেরিফাইড আইডি। এই পরিচয়পত্র দেখিয়ে জগতের সকল কাজই সম্পন্ন করা সম্ভব হলে বাংলাদেশের পরিচয়পত্রের রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না? ব্রিটেনে একজন বাংলাদেশি নাগরিক কমনওয়েলথভুক্ত দেশের নাগরিক হওয়ার কারণে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন।ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে বিদেশিরা ভোট দেয়ার অধিকার পেয়ে থাকেন। সরকার যদি প্রবাসীদের স্মাট কার্ড প্রদানে সত্যি আন্তরিক হয়ে থাকে তাহলে নো ভিসা সিলযুক্ত ব্রিটিশ পাসপোর্টকেই নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে নাগরিকের দলিল হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। কারণ নো ভিসা সিল থাকা মানেই ওই ব্রিটিশ নাগরিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাংবাদিকদের তর্ক-বিতর্কের মাঝে একটি পরামর্শ হাইকমিশনার সাঈদা মুনা গ্রহণ করেছেন, তিনি একটি পাবলিক কনসাল্টেশনের আয়োজন করবেন বলে সম্মত হয়েছেন। এক ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে ৫০ মিনিটের বক্তৃতা আর ১০ মিনিটের সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জটিল এই বিষয়ের সমাধান সম্ভব নয়। প্রবাসীদের জাতীয় পরিচায়পত্র নিবন্ধনের উপায় সহজ করতে দ্রুত একটি পাবলিক কনসাল্টেশনের মাধ্যমে এই সংকট দূর করবেন সেই প্রত্যাশা করছি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, চ্যানেল এস টেলিভিশন লন্ডন।

এইচআর/বিএ/জেআইএম