রক্ষক যখন ভক্ষক
যিনি আইন প্রণেতা তিনিই যদি আইন ভাঙ্গেন এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। রক্ষকের ভক্ষক হওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। কিন্তু একজন সংসদ সদস্য নিজ হাতে আইন তুলে নিবেন, গুলি করে নিষ্পাপ, নিরপরাধ শিশুকে আহত করবেন এটা বোধহয় কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে ঘটছে তাই।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের গুলিতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। শুক্রবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে সুন্দরগঞ্জের গোপালচরণ ব্র্যাকমোড়ে ওই শিশুটি গুলিবিদ্ধ হয়। সৌরভের অভিভাবকের অভিযোগ, ভোরে ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিল সৌরভ । এ সময় সংসদ সদস্য লিটন ব্র্যাক মোড়ে গাড়ি থামিয়ে সৌরভকে ডাক দেয়। সৌরভ সাড়া না দিলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে তার দু’পায়ের হাঁটুর নিচে গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ মেডিকেলে নিলে সকাল ৬.১০ মিনিটে তাকে চিকিৎসকরা রংপুর মেডিকেলে স্থানান্তর করেন।
এমপির গুলিতে শিশু আহতের ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ক্ষুদ্ধ না হওয়ার কোনো কারণ নেই। ক্ষমতার রঙিন চশমা চোখে দিয়ে যারা ধরাকে সরা জ্ঞান করেন তাদের দৌরাত্ম্য মানুষ মেনে নেবে কতো দিন? এই গুণধর সাংসদের কীর্তি এটাই প্রথম নয়। এর আগেও তিনি অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছেন। উপজেলার বামনডাঙ্গার চৌরাস্তা মোড়, রেলস্টেশন, শিববাড়ী মোড়, কানার মোড়, পাইটকাপাড়া মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় রাত বিরাতে গুলি ছুঁড়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে বিতর্কে জড়িয়েছেন এই সাংসদ। এমপি হিসেবে নিজের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। সেই সঙ্গে দল, জোট, সরকার এবং সর্বোপারি দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে। যদি শুরুতেই লাগাম টেনে ধরা হত তাহলে হয়তো এ পর্যন্ত আসতে পারতেন না তিনি।এর আগেও একজন এমপি পুত্রের গুলিতে দুজন নিরীহ পথচারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এবার গুলি করেছেন এমপি নিজেই। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে আর কি!
গুলি করার কথা অস্বীকার করেছেন ঐ সাংসদ। বলা হচ্ছে তার ড্রাইভার গুলি করেছে। ড্রাইভারই বা গুলি করবে কেন? আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার তো কারও নেই। আসলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন ওই সাংসদ।
আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। খোদ দলীয় নেতাকর্মীরাই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দিনরাত পরিশ্রম করে একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গঠন করছেন তখন একজন সাংসদের এমন আচরণ মানুষের মধ্যে দল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিবে। তাই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আইনের চোখে সবাই সমান-এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীর শাস্তি হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আহত শিশুর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। দিতে হবে ক্ষতিপূরণও। এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে- দেশের মানুষ এমনটাই প্রত্যাশা করে।
এইচআর/এমএস