ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই...

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৮:০৫ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বিজয়ের ঊষালগ্নে পরাজয় অত্যাসন্ন জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের হত্যায়ে মেতে ওঠে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেছে বেছে ধরে নিয়ে আসা হয় সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

এরপর নির্মম পৈশাচিকতায় তাদের হত্যা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল জাতিকে মেধাশুন্য করা। স্বাধীনতা পেয়েও বাঙালি জাতি যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেই নীলনকশা বাস্তবায়ন করাই ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যার হীন উদ্দেশ্য। এই দিবসে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের, যাঁরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

একাত্তরের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে হত্যা করা হয় জগন্নাথ হল, রায়ের বাজারের নদীতীর ও মিরপুরের কয়েকটি স্থানে। ডা. ফজলে রাব্বী, আবদুল আলীম চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সন্তোষ ভট্টাচার্য, সিরাজুল হক, চিকিৎসক গোলাম মুর্তোজা, আজহারুল হক, হুমায়ুন কবীর, মনসুর আলীসহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয় এ সময়। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে এবং যুদ্ধ চলাকালে হত্যা করা হয় জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, গোবিন্দ চন্দ্র দেবসহ আরো অনেক বুদ্ধিজীবীকে। মুনীর চৌধুরী, আলতাফ মাহমুদ ও শহীদুল্লা কায়সারও একইভাবে হত্যার শিকার হন। আর এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সর্বপ্রথম শিকার হয়েছিলেন অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা।

একটি সমাজ বা রাষ্ট্রে এই নক্ষত্রসম মানুষরাই জাতিকে এগিয়ে যান। কবির ভাষায় ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, “ভয় নাই, ওরে ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।” হে রুদ্র, তব সংগীত আমি কেমনে গাহিব কহি দাও স্বামী— মরণনৃত্যে ছন্দ মিলায়ে হৃদয়ডমরু বাজাব;’। এ কারণে তারা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শোষণ, বৈষম্যসহ নানা নিপীড়নের প্রতিবাদ আসে বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকেই। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে যা পরবর্তী সময়ে স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ নেয়। রাজনৈতিক আন্দোলনে গতি আনে সংস্কৃতিক আন্দোলন। বুদ্ধিজীবীরা এমন একটি সংস্কৃতি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, যা পরাধীনতার অন্ধকার থেকে দেশকে নিয়ে যাবে আলোর ভুবনে। সেই আলোর পথে হাঁটতেই বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধিকার আন্দোলনে। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে লাল সবুজের পতাকা।

স্বাধীন দেশে পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতিকে দিকভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছে। ভুলিয়ে দিতে চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। কিন্তু ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে পারেনি। বাঙালি জাতি আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেরিতে হলেও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীর বিচার হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধী সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের মধ্যদিয়ে জাতি অনেকটাই গ্লানিমুক্ত হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নতুন করে শপথ নিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি যাতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। লিপ্ত হতে না পারে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে হবে। শোষণ, বঞ্চনাহীন, ক্ষুধামুক্ত একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতিবান জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। বাস্তবায়ন করতে হবে বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন। তবেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সার্থক হবে।

এইচআর/এমকেএইচ