ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বিপিএলে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো ও বিসিবি

প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিপিএলের তৃতীয় আসর প্রায় চূড়ান্ত। দু`বছর পর আবারও আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের এই বহুল আলোচিত টি২০ টুর্নামেন্ট। এবারের আয়োজনে বিসিবির নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে আরও। এর একটা ভালো দিক যে বিপিএলকে  বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট অভিভাবক বিসিবি। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখছি যে নিত্য নতুন সব অনুষঙ্গ এনে বিপিএলকে যতোই শৃঙ্খলিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ততোই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেটের এ সংক্ষিপ্ততম আসরটি।

আসন্ন তৃতীয় আসরের কথাই ধরা যাক। ফ্রাঞ্চাইজি কেনার জন্য বেশ কিছু কঠিন শর্ত জুড়ে দিল বিপিএল কর্তৃপক্ষ।   দল কেনার জন্য এক কোটি টাকার পে-অর্ডারসহ  ৪ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি বাধ্যতামূলক করা হল। বিসিবি থেকে জানানো হলো, ফ্রাঞ্চাইজি বিক্রিতে ভীষণ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সব শর্ত মেনে আগ্রহ দেখিয়েছে ১০/১১টি বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এই পর্যায়ে দল বাড়ানো হবে- জানানো হলো এমন কথাও।

২০১৩ সালে সর্বশেষ বিপিএলে দল ছিল সাতটি। এবারে দল বাড়িয়ে  সংখ্যাটা ৮-এ উন্নীত করা হবে বলেও জানানো হলো। আগে নতুনদের সুযোগ দেয়া হবে এরপর পুরনো দলগুলোর বিষয়টা বিবেচনায় নেয়া হবে, নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলো বিসিবি। পুরনোদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগেই বকেয়া টাকা পরিশোধের শর্তের কথা জানিয়ে দিলেন বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। সবাই ধরেই নিল, এত নতুনদের ভীড়ে পুরনোরা  বোধহয় আর জায়গা পাবে না। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই পাল্টে গেল পরিস্থিতি। ৪ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি ও এক কোটি টাকার পে-অর্ডার শর্তের কারণে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে এসেছে। ফ্রাঞ্চাইজি বিক্রিতে সাড়া নাই এমন সংবাদ আসলো মিডিয়াতে। এরপর বলা হলো, প্রয়োজনে শর্ত শিথিল করা হবে। শেষ পর্যন্ত নতুন দল পাওয়া গেল তিনটি। আর পুরনো তিন দল মিলিয়ে চূড়ান্ত করা হলো ছয়টি দল। অর্থাৎ  গত আসরের চেয়ে এবারের আসরে একটি দল কম।

২০১২ সালে বিপিএলে প্রথম আসরে সবচেয়ে বড় বিপত্তিটা হয়েছিলো ক্রিকেটারদের প্রাপ্য বকেয়া পরিশোধ নিয়ে। দেশি ক্রিকেটাররা তো বটেই বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি এমন অভিযোগ তুললো  বিদেশি ক্রিকেটাররাও। দ্বিতীয় আসরে যাতে এমন পরিস্থিতি না হয় সেজন্য বেশ ঘটা করে ক্রিকেটারদের বকেয়া পরিশোধের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলো বিসিবি। সোজা হিসাবে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্লেয়ারদের টাকা দেবে বিসিবি। অর্থাৎ ক্রিকেটারদের টাকা পরিশোধের সমস্ত দায় বিসিবির কাঁধে। এ দায়িত্ব বিসিবি কতোটুকু পালন করেছে এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না।

বিপিএলের দ্বিতীয়  আসর শেষ হয়েছে দু’বছর আগে। আর নামকাওয়াস্তে ক্রিকেটারদের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। এক্ষেত্রেও শুভঙ্করের ফাঁকি। ৭০ জন দেশি ক্রিকেটারদের মোট পাওনা ছিল ৫ কোটি টাকা।  অথচ তাদেরকে দেয়া হয়েছে ২.৫ কোটি টাকার মতো। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো , মনে করে অর্ধেক টাকা পেয়েই সন্তুষ্ট ক্রিকেটাররা। পুরো না পাওয়ার চেয়ে কিছু পাওয়া ভালো- বিষয়টাকে এভাবেই দেখেছে ক্রিকেটাররা। বলা বাহুল্য টাকা এখনও বাকি পড়ে আছে, এমন রিপোর্টও এসেছে মিডিয়াতে।

অনেক হুমকি- ধামকি দিয়েও ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি। আর এই কারণে ক্রিকেটারদের প্রাপ্য বকেয়াও ঠিকভাবে পরিশোধ করা সম্ভবপর হয়নি। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য ফ্রাঞ্চাইজিগুলোকে বারবার তাগাদা দেয়ার কথা অনেকবার বলেছেন বিসিবি প্রধান। আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে  এমন হুমকিও দেয়া হয়েছে বিসিবি থেকে। কাজের কাজ যে তেমন কিছু হয়নি তার প্রমাণ দু’বছর আগের শেষ হওয়া টুর্নামেন্টের অর্ধেক টাকা পেলেন ক্রিকেটাররা। আর বকেয়া টাকা না দেয়াতে ফ্রাঞ্চাইজি মালিকানা হারিয়েছে খুলনা রয়েল বেঙ্গলস, দুরন্ত রাজশাহী ও ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স। এবার ঢাকা থাকবে নতুন নামে। ফ্রাঞ্চাইজি মালিকানা ধরে রাখার জন্য আগের টাকা পরিশোধ করেছে পুরনো তিন দল।

জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা সর্বোপরি ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে আকসুকে (আইসিস দুর্নীতি দমন ও নিরাপত্তা বিভাগ) যুক্ত করেছিল বিসিবি। কিন্ত এতো কিছু করেও ম্যাচ ফিক্সিং আটকানো যায়নি। যার ফল হিসাবে ক্রিকেট থেকে এখনও নিষিদ্ধ বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। আর এই ফিক্সিংয়ের ধাক্কায় দুবছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে বিপিএল।  

বিপিএল আয়োজনে যে পেশাদারিত্বের চরম ঘাটতি সেটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় প্রথম আসরেই।  যে কোনো টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই, ওই আসরের বাইলজ থাকে সুনির্দিষ্ট। বিপিএলের প্রথম আসরে কি অদ্ভুত সব কাণ্ডই না ঘটলো? গোলটা বাঁধলো সেমিফাইনালের চারটি দল নির্ধারণ  নিয়ে। ১০ খেলায় যথাক্রমে ১৪ ও ১২ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় হিসাবে শেষ চারে পৌঁছে গেল দুরন্ত রাজশাহী ও খুলনা রয়েল বেঙ্গলস। পরের স্থানে থাকা ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স, বরিশাল বার্নার্স ও চট্রগ্রাম কিংসের সংগ্রহ সমান ১০ পয়েণ্ট। নেট রানরেটে এগিয়ে থাকার কারণে তৃতীয় হিসাবে সেমিফাইনালের ছাড়পত্র পেল ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স। চতুর্থ দল নির্ধারণ নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেললো আয়োজকরা। নেট রান রেটে এগিয়ে বরিশাল বার্নার্স আর হেড টু হেড-এ এগিয়ে চট্রগ্রাম কিংস। এ অবস্থায় হেড- টু-হেড-এ এগিয়ে থাকার হিসাব দেখিয়ে সেমিফাইনালের চতুর্থ দল হিসাবে ঘোষণা করা হলো  চট্রগ্রাম কিংসের নাম। পরের দিন আবার চতুর্থ দল হিসাবে চট্রগ্রাম কিংসের বদলে ঘোষণা করা হলো বরিশাল বার্নার্সের নাম। এনিয়ে বাদ-প্রতিবাদ মামলা-মোকদম্মার হুমকি চললো বেশ কয়েকদিন।

এবারের বিপিএল আসরে আইকন প্লেয়ার ছাড়াও ক্রিকেটারদের মূল্যমান এবং ক্যাটাগরিও নির্দিষ্ট করে দেবে বিসিবি। প্রতিটি দলের জন্যই সর্বোচ্চ টাকার সীমাটাও বেঁধে দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে আগের দুটি আসরের চেয়ে এবার আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ বিসিবির। বিপিএল নিয়ে এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা বলছে, এ আসরকে ঘিরে বিসিবি যতো শক্ত হয়েছে, ততো বেশি এলোমেলো হয়েছে সবকিছু। এ যেন সেই বাঙলা প্রবাদ ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’। (বাঁধন শক্ত করতে হলে গেরোটো দিতে হবে ঠিকমতো।)  আমরা আশা করবো, এবার এই প্রবাদটি ভুল প্রমাণিত হবে। অনেক দিন পর বিপিএলের এই আয়োজন বিশেষ উপহার হয়ে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে, এটাই এখন ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের চাওয়া।

nazmul-topon

এইচআর/এমএস