ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

মাদ্রাসা শিক্ষকদের যৌনাচার

আনিস আলমগীর | প্রকাশিত: ১২:১০ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০১৯

একের পর এক মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদেরকে যৌন হয়রানীর ভয়াবহ কাহিনী প্রকাশিত হচ্ছে। ডেঙ্গুর খবরের মতো এটারও যেন মহামারী লেগেছে। পত্র-পত্রিকায় যেসব বর্ণনা দিয়ে এসব যৌন কেলেংকারীর খবর আসছে লিখতেও লজ্জা হচ্ছে। কোনও কোনও কাহিনী চিন্তাকেও হার মানায়। এরা মসজিদের ভেতর ধর্ষণ করছে, বলাৎকার করছে। এরা কি শিক্ষকের মধ্যে পড়ে? এদেরকে কি মাওলানা বলা যায়? নাকি এরা মানুষের পর্যায়ে পড়ে?

শিক্ষদের যখন এই হাল তখন ছাত্ররা ভাল কী খবর দেবে। দু’দিন আগে মাদ্রাসা ছাত্রদের এক খবর পড়ে ভাবছি আদৌ কি সেখানে দ্বীন দুনিয়ার কোনও শিক্ষা দেওয়া হয়! ৬ আগস্ট ২০১৯, ঢাকা ট্রিবিউনের অনলাইনের বাংলা ভার্সনে খবর বেরিয়েছে-শিক্ষককে ‘ফাঁসাতে’ মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের পর মাথা কেটে হত্যা করেছে তাদের ৫ সহপাঠী।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার এই ৫ ছাত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক যে জবানবন্দি দিয়েছে তার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মাদ্রাসার শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালাতেন। ছাত্রদের দিয়ে শরীর ম্যাসেজ করাতেন এবং ঠিকমতো খেতে দিতেন না। এসবের প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যেতো।

বিষয়টি নিয়ে গ্রেফতার হওয়া পাঁচজন মাদরাসাছাত্র তাদের শিক্ষক তামিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সহপাঠী আবিরকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। কারণ, আবিরকে গ্রাম থেকে মাদ্রাসায় নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষক তামিম।

পুলিশ আরও জানায়, গত ২৩ জুলাই রাত ৮টার দিকে ওই পাঁচজন আবিরকে গল্পের ছলে মাদ্রাসার পাশে আম বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে বলাৎকারের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে। গুজব ছড়াতে আবিরের মাথা শরীর থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে মাথাটি পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

একবার দৃশ্যগুলো চিন্তা করুন। এই মাদ্রাসার পরিবেশ, শিক্ষকের কাণ্ড, ছাত্রদের মানসিকতা চিন্তা করলে কি আপনি বুঝতে পারবেন এখানে আল্লাহভীতির কোনও নিশানা আছে! ইসলামী শিক্ষার কোনও ছোঁয়া আছে!

এখন মানুষের প্রতিটি অসৎ গুণ প্রকাশিত হচ্ছে ভয়ানকভাবে, যা সমাজের ভিতকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্রমাগতভাবে সমাজের অবস্থা নিম্নমুখী। মানুষ জীবনযাপনে দুঃখ-কষ্টে আছে তা নয় কিন্তু সমাজের অবক্ষয় দেখে মানুষ ভয়ানকভাবে চিন্তিত।

দেখেন একজন মসজিদের ইমাম সাহেব একটা বালিকাকে ডেকে এনেছে মসজিদের ফ্লোর পরিষ্কার করার জন্য। অথচ তার মনে ছিল অন্য চিন্তা। ফ্লোর পরিষ্কার করানোর পর মসজিদের ইমাম মেয়েটির শ্লীলতাহানি করেছে। আরও পরিষ্কারভাবে বললে মসজিদের মধ্যে বাচ্চাটিকে ধর্ষণ করেছে।

এপ্রিলে ফেণীর সোনাগাজীর এক মাদ্রাসাছাত্রীকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক যৌন হয়রানি এবং তার জের ধরে পরবর্তীতে তাকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে মারার ঘটনার পর একে একে মাদ্রাসার শিক্ষকদের কুকর্ম বেরিয়ে আসছে। প্রতি সপ্তাহে বেরুচ্ছে মাদ্রাসার তথাকথিত অধ্যক্ষের কুকর্ম। ক’টা উল্লেখ করা যায়!

২৭ জুলাই ২০১৯ নারায়ণগঞ্জে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে আটক করেছে র‌্যাব-১১। এসময় তার মোবাইল থেকে একাধিক রেকর্ডিং জব্দ করে র‌্যাব। ফতুল্লা ভুঁইগড় এলাকার দারুল হুদা মহিলা মাদ্রাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। গ্রেফতারকৃত অধ্যক্ষের নাম মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে জসিম (২৯)। তিনি নেত্রকোণা লক্ষ্মীগঞ্জ কাওয়ালীকোণা গ্রামের বাসিন্দা ও দারুল হুদা মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।

গত ৪ জুলাই ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকায় ১২ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আল আমিনকে আটক করে র‌্যাব। এরআগে ২৭ জুন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অক্সফোর্ড নামে একটি বেসরকারি স্কুলের ২০ জনেরও অধিক ছাত্রীকে ৪ বছর ধরে যৌন হয়রানিসহ ধর্ষণের অভিযোগে সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল ও প্রধান শিক্ষক জুলফিকার ওরফে রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।

এ পর্যন্ত প্রায় ১০ জন তথাকথিত অধ্যক্ষ মাওলানাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে- ক্যাডেট মাদ্রাসায় ছাত্রীর শ্লীলতাহানির দায়ে। এসব মাওলানারা পুলিশ হেফাজতে আবার স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। বেশিরভাগেরই এক জবাব, শয়তানের প্ররোচনায় তারা এসব করেছে।

আমার মনে হয় অনতিবিলম্বে এই মহিলা ক্যাডেট মাদ্রাসাগুলোর প্রত্যেকটিতে অভিযান চালানো দরকার। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জবাববন্দি নেওয়া দরকার। প্রয়োজনে বন্ধ করে দেওয়া হোক এসব ক্যাডেট মাদ্রাসা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে মহিলাদের দ্বীনি শিক্ষার নামে টাকা তুলে এনে একটা দোতলা, তিনতলা বাড়ি ভাড়া করে মহিলা ক্যাডেট মাদ্রাসা বানিয়ে অনাচারে লিপ্ত হচ্ছে এরা। ক্যাডেট মাদ্রাসায় পড়ে আপাতত বাংলাদেশে মহিলা মাওলানা হওয়ার দরকার নেই। অনাচারের দোকান খোলার চেয়ে মহিলা মাওলানা না হওয়াই উত্তম।

আমাদের সময় মহিলারা বর্তমান সময়ের মহিলাদের চেয়ে বেশি দ্বীনি ছিল। আমাদের ছোটবেলায় বাড়ির সামনের মক্তবে মাওলানা সকালবেলায় কোরআন শিক্ষা দিতেন। আর বাড়িতে বসে কোনো হুজুরের কাছে মাওলানা আশরাফ আলী থানভী বা এমন অনেকের বিশিষ্ট আলেমের বই পড়তেন।

সাধারণ মাদ্রাসাগুলোর দুর্ভাগ্য যে তারা দ্বীনদার পরহেজগার ছাত্র তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষগুলোতো তাদেরই ছাত্র। আমি এমন অনেক ইমাম লক্ষ্য করেছি যারা পেটের দায়ে ইমামতি করে বলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এবং পড়ায়। চাকরি করে বলে তারা নামাজ পড়ছে না হয় তারা নামাজই পড়তো না। কওমি মাদ্রাসা, অকওমি মাদ্রাসা সবাইকে বলব- আপনারা ছাত্রদের দিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। অগণিত ছাত্র আপনাদের মাদ্রাসায় পড়ে সত্য কিন্তু ছাত্রদের মধ্যে যে আল্লাহ ভীতি দারুণভাবে কমে যাচ্ছে তার দিকে আপনাদের লক্ষ্য নেই।

আজকে ইসলামের বিপদ আসছে বিধর্মীদের কাছ থেকে নয়, বিপদ আসছে আলেম নামধারী ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আল্লামা ইকবাল এজন্যই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে একখানা কবিতা লিখেছিলেন যার বাংলা তরজমা করলে হয়- ‘আমার ঘরে আগুন লেগেছে আমার প্রদীপ থেকে’।

এই আগুন বন্ধ করার জন্য ওলামা-মাশায়েখদের পরামর্শ সভায় বসা উচিত। সভা ডেকে এসব মহিলা ক্যাডেট মাদ্রাসার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়াও দরকার। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিকতা অবলম্বন করে চলে। মনে রাখতে হবে ধর্মের ঘরে পাপ সয় না। আবাসিক ক্যাডেট মাদ্রাসাগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া দরকার সরকারের। প্রয়োজনে মহিলাদের জন্য জেলায় জেলায় পৃথকভাবে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং এসব মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কঠোরতা পালন করা উচিত।

এ যাবৎ ক্যাডেট মাদ্রাসা যে শিক্ষকগুলো গ্রেফতার হয়েছেন তাদের বয়স ৪০ এর মধ্যে। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বলেছেন পাঁচটি জিনিস খারাপ। এক. আলেমদের খারাপ কাজ। দুই, শাসকদের লালসা। তিন, বৃদ্ধের জেনা করা। চার, ধনীর কৃপণতা। পাঁচ, নারীর নির্লজ্জতা। জ্ঞানীদের এসব উপদেশ অবহেলা করা উচিত নয়।

পরিশেষে বলবো আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলো তাদের ছাত্রদের মাঝে আল্লাহ ভীতি সৃষ্টিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সে বিষয়টার প্রতি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ উদাসীন হলে চলবে না। দান-খয়রাত নিয়ে মাওলানা সৃষ্টি না করে কতগুলো জানোয়ার সৃষ্টি করে লাভ কি!

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ইরাক ও আফগান যুদ্ধ-সংবাদ সংগ্রহের জন্য খ্যাত।
[email protected]

এইচআর/এনএফ/জেআইএম

আরও পড়ুন