ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ডেঙ্গু জ্বর ও করণীয়

ফারহানা মোবিন | প্রকাশিত: ০৫:২৯ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৯

ডেঙ্গু জ্বর ছোট-বড় সবার জন্য হুমকিস্বরূপ। ছোটদেরও ডেঙ্গু জ্বর হয়। ডেঙ্গু জ্বর একধরনের ভাইরাসজনিত জ্বর। এই জ্বর এডিস এজেপটি নামক একধরনের স্ত্রী মশার কামড়ে হয়। 

একজন রোগী থেকে অন্য রোগীতে এ জ্বর সংক্রামিত হয় না। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এবার শিশুরাও অনেক বেশি পরিমাণে আক্রান্ত গত বছরের তুলনায়।

বড়দের সাথে শিশু রোগীর পরিমাণও বেড়েই চলছে। 

শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের কিছু উপসর্গ থাকে একই রকম। 

যেমন-

১. জ্বর ১০১ থেকে ১০৫ পর্যন্ত পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। জ্বর সাধারণত এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হতে পারে। আবার সব সময় উচ্চমাত্রার জ্বর নাও থাকতে পারে। জ্বর ভালো হওয়ার পর থেকে ব্রণের মতো লালচে র‌্যাশ বের হতে পারে। র‌্যাশ অনেকের শরীরে ঘামাচি দানার মতোও হয়। এ বছর রোগীদের শরীরে ঘামাচির মতো লালচে দানা গতবারের তুলনায় কম। 

২. খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, অ্যাসিডিটিও থাকতে পারে। অনেকের বমির পরিমাণ বেশি হয়। খাবারে গন্ধ লাগে। 

৩. পুরো দেহের হাড়ে বা জয়েন্টে জয়েন্টে ভয়ানক ব্যথা হয়। এ জ্বরের আরো একটি নাম হলো ব্রেক বোন ফিভার ( Break bone fever)। হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো পুরো শরীরে ব্যথা হয়। 

৪. রোগীর খুব দুর্বল লাগে। পানিশূন্যতা হতে পারে।

৫. ডেঙ্গু জ্বর ভয়ানক খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে ব্লাড প্রেশার দ্রুত কমতে থাকে। রোগী শকে পর্যন্ত চলে যায়। হৃৎপিণ্ড, লিভার, কিডনি ফেইলর হয়ে রোগী মারাও যায়। ডেঙ্গু জ্বরের এ খারাপ অবস্থাকে বলে “ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।” এ অবস্থায় রক্তপাতও হয়। নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, মলের সাথে রক্ত, বমির সাথে রক্ত যেতে পারে। 

৬ . এই জ্বরে প্লাটিলেট (রক্তের জরুরি অংশ) দ্রুত কমে যায়। দেহের লবণ পানির অসামঞ্জস্য ঘটে। হৃৎপিণ্ড দ্রুত ওঠানামা করে। 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয় 

১. ডেঙ্গু জ্বরের জন্য অপরাধী হলো এডিস মশা। এই মশা নোংরা পানিতে বাসা বাঁধে। তাই পুরনো যেসব জিনিসে পানি জমতে পারে, যেমন- ফুলদানি, ফুলের টব, এসি ফ্রিজের পেছনের অংশ, বাথরুমে বালতি বা হাঁড়িতে, কমোডের আশপাশে যেন পানি জমে না  থাকে, সেই চেষ্টা করতে হবে। জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশা বাসা বাঁধে।

গাড়ির যন্ত্রপাতিও খেয়াল রাখতে হবে। ময়লা পানি জমে থাকতে পারে। শিশুদের খেলনার মধ্যে যেন পানি জমে না থাকে।

২. বাসার চারপাশে মশাবিরোধী নেট, ঘরের কোণায় মশানিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করবেন। জানালার কার্নিশে অনেক সময় ময়লা ভাঙাচোরা জিনিসে যেন পানি জমে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

৩. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কমোডের আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। 

৪. শিশুর জ্বরের মাত্রা কমানোর জন্য বার বার ভেজা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে। তরল খাবার ফলের রস বেশি করে খেতে হবে। জ্বরের মাত্রা বেশি হলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। 

৫. প্লাটিলেটের মাত্রা কতোটা কমে গেছে তা নির্ণয় করতে হবে (সিবিসি/রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে)। 

৬. দেহের কোথাও র‌্যাশ ঘা হয়েছে কিনা, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। 

৭. শিশুর নাক, মুখ, মল, বমি দিয়ে রক্ত যাচ্ছে কিনা, পর্যবেক্ষণ করবেন। 

৮. অবস্থা খারাপ মনে হলে, শিশুকে বাসায় না রেখে, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করান। অনেক সময় রক্তপাত হলে, রক্ত দিতে হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ছোট বা বড় কারো ক্ষেত্রেই ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করা যাবে না। তবে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা নিরাপদ। 

লেখক : এমবিবিএস,  সিসিডি,  সিকার্ড,  এমপিএইচ।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন