মক্কায় শতাধিক হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবের মক্কার হেরেম শরীফে ক্রেন ধসে পড়ে শতাধিক হাজি নিহতের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৩৮ জন। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটেছে। হতাহতদের সবাই হজ করতে গিয়েছিলেন। হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশিরা আছেন কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাংলাদেশি দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
মক্কানগরীতে ক্রেন দুর্ঘটনায় শতাধিক হাজির নিহত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। নিহতের পরিবারের কাছে মৃতদেহ পৌঁছে দেয়া এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এখন জরুরি। এঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষ দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা আশা করবো তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। এরফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।
আর কয়েকদিন পরেই হজ। হজব্রত পালন করতে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ হতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মুসল্লি মক্কা নগরীতে সমবেত হন। বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক মুসল্লি প্রতিবছর হজ আদায় করেন। এ বছর ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০ হাজার মুসল্লি হজ পালন করতে গেছেন।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত চল্লিশ বছরে সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও রোগাক্রান্ত হয়ে অন্তত তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০০৬ সালে কাবা শরিফের কাছে একটি বহুতল হোটেল ভবন ধসে ৭৬ জন নিহত হন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালের ২ জুলাই। এ ঘটনায় একটি সুড়ঙ্গে পদদলিত হয়ে ১ হাজার ৪২৬ জনের মৃত্যু হয়। এ বছরও এ ধরনের দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো।
একসঙ্গে ২২ লাখ হাজির স্থান সঙ্কুলানের জন্য গতবছর মসজিদের এলাকা ৪ লাখ বর্গমিটার সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে সৌদি সরকার। এই নির্মাণ কাজের জন্য ভারী কয়েকটি ক্রেইন রাখা হয়েছিল দুর্ঘটনা স্থলে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে একটি ক্রেইন মসজিদের পূর্ব অংশের চতুর্থ তলার ওপর আছড়ে পড়ে। হজে আসা মানুষ মাগরিবের নামাজের আগে সেখানে সমবেত হওয়ায় সে সময় ওই অংশটি ছিল বহু মানুষে পূর্ণ। এ কারণেই হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হজের সময় শুরু হওয়ার আগেই যাতে সংস্কার কাজ শেষ হয় সেটি অবশ্যই নিশ্চিত করা উচিত ছিল। এছাড়া ভারী ভারী ক্রেনগুলোও যে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করা ছিল জরুরি। বিশেষত এ ধরনের ঘটনার অভিজ্ঞতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয পদক্ষেপই ছিল প্রত্যাশিত। যারা হজব্রত পালন করতে যান তাদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ। এদের থাকা-খাওয়া, চলাচল সর্বোপরি হজের নিয়ম কানুনগুলো পালন করতে গিয়ে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধার মধ্যে পড়তে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে সৌদি কর্তৃপক্ষকে। সর্বোপরি এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।
এইচআর