ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

স্পোর্টিং উইকেটের নমুনা কেমন হবে?

প্রকাশিত: ০৫:৩০ এএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে ক্রিকেটের অনেক ঋণ। ক্রিকেট নামক খেলাটার বিবর্তন, বিপণন, বিশ্বায়ন, আধুনিকায়নের পেছনে অস্ট্রেলিয়ানদের উদ্ভাবনী শক্তি অনেক ভূমিকা রেখেছে। ওয়ানডে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু সেই অস্ট্রেলিয়া থেকে। এরপর ক্রিকেট বিশ্ব দেখলো  দিন রাতের ক্রিকেট। রঙিন পোশাকে রাতের আলোয় সাদা ক্রিকেট! সৌজন্যে ক্যারি প্যাকার। সাদা বল আর রঙিন পোশাকে প্রথম বিশ্বকাপ সেটাও সেই অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করলো গত শতাব্দীর নব্বই দশকে। তারপর ক্রিকেটে সেই  আধুনিকায়নে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারেও অনেকটা এগিয়ে অজিরা। সেই অস্ট্রেলিয়ার এক সাবেক অধিনায়ক টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে ভাবনার একটা খোরাক দিয়েছেন। এবং নিশ্চিতভাবে বলা যায় রিকি পন্টিঙের সেই ‘তত্ত্ব’ নিয়ে আগামীতে ক্রিকেট কর্তারা অনেক আলোচনা করবেন। গুরুত্ব দিয়েই আলোচনা করবেন। করা উচিতও। রিকি পন্টিং এর মতো একজন চিন্তাশীল মানুষ প্রস্তাব করেছেন; টেস্ট ক্রিকেটে টসের কোনো দরকার নেই! বরং সফরকারী দলই সিদ্ধান্ত নিক তাঁরা আগে ব্যাট করবেন না বল করবেন।

কিন্তু কেন? ক্রিকেটের আদিকাল থেকে টস বড় একটা অনুষঙ্গ ক্রিকেট নামক খেলাটার। নতুন শতাব্দিতে এসে কেন সেটাকে উড়িয়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা! পন্টিঙের যুক্তি; এতে স্বাগতিক দল তাঁদের ইচ্ছামত উইকেট বানিয়ে তা থেকে বাড়তি সুবিধা নিতে পারবে না। খেলাটায় ব্যাটে-বলের ভারসাম্য আসবে। পন্টিং এর এই যুক্তির বিরোধিতা করছেন না তেমন কেউ। অনেকের মৌনতাকে বরং সম্মতি হিসেবেই দেখা যেতে পারে। তবে রিকি পন্টিং এর পূর্বসূরি স্টিভ ওয়াহ কিন্তু সরাসরি মুখ খুলেছেন। এবং তাঁর বক্তব্য পন্টিং এর পক্ষেই যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে। স্টিভ বলছেন; তিনি এতে খারাপ কিছু দেখছেন না। বরং রিকির পরামর্শটা ভেবে দেখা যেতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক সাবেক গ্রেট মাইকেল হোল্ডিংও একই সুরে কথা বলেছেন। তাঁর ভাষায়;‘ রিকির পরামর্শ ক্রিকেট কর্তাদের ভাবা উচিত।’

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক বিশ্ব ক্রিকেট কর্তাদের পরামর্শটা দিয়েছেন; অ্যাশেজ সিরিজ চলার সময়। যে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে অজিরা। সেখানে  উইকেট একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। এমন একটা মতবাদ অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে সব অস্ট্রেলিয়ান একমত তা কিন্তু নয়। বরং অনেকে তাঁদের দ্বিমত চেপে রাখেননি। কেউ কেউ সরাসরি বলেছেন; ইংলিশ বোলাররা অজিদের চেয়ে ভাল বল করেছেন। পরিসংখ্যানও সেটা বলছে। পাঁচ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের বোলাররা অস্ট্রেলিয়ার ৮০টা উইকেট নিয়েছেন। আর অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা ইংল্যান্ডের ৬১ উইকেটের বেশি নিতে পারেননি। আসলে পার্থক্যটা সেখানে হয়ে গেছে পুরো সিরিজে। টেস্ট ক্রিকেটে ফলাফল নির্ধারণে বোলারা বড় ভূমিকা রাখেন। এটা পুরনো কথা। সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই।

তবে নতুন করে একটা কথা বলতে হচ্ছে ইংল্যান্ডের কাছে অ্যাশেজ হারিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসছে অস্ট্রেলিয়া। এই অস্ট্রেলিয়াকে আটকানোর জন্য কেমন উইকেট তৈরি করা উচিৎ এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে। দলের প্রধান কোচ ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। নির্বাচকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন উইকেট নিয়ে। গ্রাউন্ডস কমিটি আর কিউরেটরদের কাছে নিজেদের ‘চাহিদাপত্র’-টা দিয়েছেন। মিডিয়ার কাছে সরাসরি কিছু বলেননি কোচ হাথুরুসিংহে উইকেট নিয়ে। তবে কিউরেটরদের কাছ থেকে জানা গেছে; বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট নাকি ‘স্পোর্টিং উইকেট’ চেয়েছেন!

স্পোর্টিং উইকেটের সংজ্ঞাটা আসলে কঠিন। কার কাছে যে কোনটা স্পোর্টিং উইকেট বোঝা যায় না! ধরা যাক, অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে স্পোর্টিং উইকেট হচ্ছে শক্ত বাউন্সি উইকেট। যেখানে বল ক্যারি করবে। ব্যাটসম্যানরা ব্যাকফুটে ভাল শট খেলবে। বাউন্সটা সব সময় ইভেন থাকবে। বোলার এবং ব্যাটসম্যানরা উইকেট থেকে সমান সুবিধা পাবেন। আবার ভারতীয়দের কাছে ‘স্পোর্টিং উইকেট বলতে মনে হয়; টেস্টেও প্রথম দুটো দিন ব্যাটসম্যানরা বাড়তি সুবিধা পাক। শেষ তিনটা দিন স্পিনরা শাসন করুক বাইশ গজ! বাংলাদেশের জন্য কোনটা স্পোর্টিং উইকেট হবে?

সোজা-সাপটা বললে বলতে হবে, বাংলাদেশ চাইবে পেস বোলাররা খুব বাড়তি কোনো সুবিধা যেন না পায় উইকেট থেকে। বরং ব্যাটসম্যানরা একটু সুবিধা পেলে পাক। আর শেষ দিকে স্পিনাররা প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া দলটাকে নিয়ে। তা তারা যতোই মিচেল জনসন, হ্যাজেলউড, ডেভিড ওয়ার্নারদের বিশ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে আসুক না কেন। এই দলে ভাল বোলারের ঘাটতি নেই। ব্যাটসম্যানরা পৃথিবীর যে কোনো উইকেটে রাজত্ব করতে পারেন। স্টিভ স্মিথের মতো ব্যাটসম্যান তাঁদের দলকে যেমন নেতৃত্ব দেবেন। ব্যাটিং লাইনের নেতৃত্বেও থাকবেন বিশ্বের এই এক নম্বর ব্যাটসম্যান। যারা ভোগান্তি বাড়াতে পারে বাংলাদেশের বোলারদের।

ইনজুরি কাটিয়ে তাসকিন আহমেদ যদি ফেরেন, রুবেল যদি পুরোপুরি ফিট থাকেন, মোহাম্ম শহীদ যদি রান আটকানোর কাজটা ঠিকঠাক মতো করতে পারেন, মোস্তাফিজের কাটার যদি অস্ট্রেলিয়ানদের সামনে ভোঁতা না হয়ে যায়, তাহলে বলতে হবে, বাংলাদেশের পেস অ্যাটাকটা তুলনামূলক আগের চেয়ে ভাল হবে। কিন্তু সেটা কি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইনকে আটকানোর জন্য যথেষ্ট ভাল? নাকি সেই পুরনো থিওরি মেনে স্পিন নির্ভর বোলিং লাইন সাজাবে বাংলাদেশ? আসলে অস্ট্রেলিয়ানদের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে চিন্তার অনেক খোরাক জমা হয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য।

তবে শেষ করতে হচ্ছে সেই রিকি পন্টিং এর নতুন পরামর্শ দিয়ে। সত্যিই যদি টেস্ট ক্রিকেট থেকে টস তুলে দেয়া হয়, সফরকারী দল যদি আগে ব্যাট করবে না বল করবে সেটা ঠিক করে, তাহলে প্রশ্ন; পাকিস্তানের মতো টেস্ট প্লেয়িং দেশ যারা এখন নিজের দেশে টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছে না, তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে ‘হোম সিরিজ’ খেলতে হচ্ছে, সেটা তাদের প্রতি আরো একটা অন্যায় চাপিয়ে দেয়া হবে না কি? পরামর্শ যখন পন্টিং দিয়েছেন, উত্তরটাও নিশ্চিয়ই তাঁর জানা। দেখা যাক এ ব্যাপারে আদৌ কোনো উত্তর আসে কি না অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়কের মুখ থেকে। তাঁর আগে অবশ্য সবাই মুখিয়ে থাকছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ কেমন স্পোর্টিং উইকেট বানায় সেটা দেখার জন্য।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘ইনজুরি টাইম’ ‘এক্সট্রা টাইম’ ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। তিনি কাজ করেছেন দেশের নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে, টেলিভিশন এবং দেশি-বিদেশি রেডিওতে।

এইচআর/এমএস