ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ক্রিকেটের স্বপ্নযাত্রায় ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জডরা

প্রকাশিত: ০৮:৪৭ এএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জডদের নিয়ে ক্রিকেটে প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক আসরের মেলা বসেছে বাংলাদেশে। পাঁচ জাতির এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে বাংলাদেশ অধিনায়ক আলম খান বলেছেন- `আমাদেরকে প্রতিবন্ধী না বলে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড বলুন।‘ `প্রতিবন্ধী’ শব্দটার মধ্যেই একটা বিভাজন যে স্পষ্ট সেটাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আলম খান। সমর্থ- অসমর্থ এ বিভাজন মাথায় রেখে আর যাই হোক সভ্যতা সামনের দিকে এগুতে পারে না এ সত্যটিই তুলে ধরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে যারা তাদেরকে মর্যাদা না দেয়াটাই মানবিকতার চূড়ান্ত পরাজয়।

ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জডদের নিয়ে আলাদাভাবে অলিম্পিক আয়োজিত হলেও এর প্রভাব পড়েনি অন্য খেলাগুলোতে। বলা বাহুল্য এই ধরনের টুর্নামেন্ট ক্রিকেটে এই প্রথম। বিশ্বের একমাত্র দেশ ইংল্যান্ডেই ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জডদের নিয়ে ক্রিকেটের উৎসব হয়। শারীরিকভাবে যারা পুরোপুরি সমর্থ নন তাদেরকে কিভাবে ক্রিকেট শেখাতে হবে বাংলাদেশের কোচিং স্টাফরা এই ধারণা পেয়েছেন ইংলিশ এক্সপার্টদের কাছ থেকে। অল্প সময়ের মধ্যেই দলগঠন করতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যানেজম্যান্টকে। বিকেএসপিতে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির মাধ্যমে স্কোয়াড গঠন করেছে বিসিবি।  ৩/৪ মাস সময়ের মধ্যে একটা দল দাঁড় করাতে হয়েছে। একটা মানসম্মত দল গঠনের জন্য সময়টা যে মোটেও পর্যাপ্ত নয় সেটা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ছোট-খাট এসব সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবেই নিচ্ছে স্বাগতিক শিবির। অধিনায়ক আলম খানের কথায়- `এটা ঠিক যে নিজেদের তৈরি করে নেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় আমরা পাইনি। তারপরও আমরা বড় কিছু করার স্বপ্নই দেখছি। দেশকে সর্বোচ্চ সাফল্য এনে দেয়ার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাই করব।’

সুযোগ পেলে বাংলাদেশের ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জডরা যে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে পারেন সেটা বিশ্ববাসী বারবার দেখেছে প্যারা অলিম্পিকে। মঙ্গলবার পাঁচ জাতির এই আসর উদ্বোধনের সময় এই কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ভাষায়- `এদেরকে (ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড) মূলধারায় নিয়ে আসার দায়িত্ব সবার। এরা সমাজের বোঝা নয়। এদেরকে সুযোগ করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।’ তিনি আরও যোগ করেন- ‘সুযোগ পেলে এরা যে দেশের জন্য বড় কিছু কিছু করতে পারে তার প্রমাণ অলিম্পিক গেমস। প্যারা অলিম্পিকে ২০/২১ টি স্বর্ণসহ এরা অনেক পদক এনে দিয়েছে দেশকে। সমর্থরা কিন্তু এমনটা পারেনি।’

ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন বিশেষ করে ক্রিকেটের  আয়োজনে  বড় সুনাম আছে বাংলাদেশের । টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগেই নক আউট বিশ্বকাপখ্যাত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অভিষেক আয়োজনের গৌরবের অধিকারী বাংলাদেশ। ক্রিকেটের  বড় বড় টুর্নামেন্ট নিয়মিতভাবেই সুনামের সঙ্গে আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশ। একই ধারাবাহিকতায় চলতি পাঁচ জাতি আইসিআরসি (ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস) টুর্নামেন্টের সঙ্গে স্থায়ী হয়ে গেল বাংলাদেশের নামও। প্রথমবারের মত এ আয়োজনে বাংলাদেশের ভূমিকায় রীতিমত আপ্লুত অংশ নেয়া ক্রিকেটাররা। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক ইয়ান নাইনের কথায়- এখানকার সবকিছুতেই আমরা মুগ্ধ। শারীরিক সীমাবদ্ধতা যে আমাদের সামর্থ্যের প্রভাব ফেলেনি সেটা প্রমাণ করার জন্য এর চেয়ে ভাল আর কিছুই হতে পারে না। আমি মনে করি, নিজেদের প্রমাণ করার জন্য  এটা দারুণ একটা সুযোগ।‘ আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ আফশরাফ বলেছেন- ‘আমাদের দলের সবার পক্ষ থেকে আইসিআরসি ও বিসিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এমন একটা সুযোগ পাব এটা ভাবতেও পারিনি।’

বলে নেয়া ভাল যে এই আয়োজন কিন্তু আইসিসির উদ্যোগে হচ্ছে না। এই মহতি আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা রেডক্রস (আইসিআরসি)। আইসিআরসির উদ্যোগে এমন আসর নিয়মিতভাবেই অনুষ্ঠিত হবে এমন আশাবাদ অংশ নেয়া দেশগুলোর সব ক্রিকেটারদেরই। বাংলাদেশ অধিনায়ক আলম খানের ভাষ্যে- ‘এতদিন যারা আমাদেরকে অন্যভাবে দেখত এখন সবাই আমাদেরকে নতুনভাবে দেখবে। আশা করছি এই ধরনের টুর্নামেন্টে আমরা নিয়মিতভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ পাব।’ অভিন্ন সুরে কথা  বলেছেন অংশ নেয়া , ভারত , পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা।  

আইসিআরসির উদ্যোগে এবং  বিসিবি, বিকেএসপি, বাংলাদেশ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আলোর মুখ দেখেছে  এই টুর্নামেন্ট। সেই অর্থে এই আসরের সঙ্গে আইসিসির কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই। তবে এই মহতি উদ্যোগকে সামনে রেখে একজন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে আইসিসি। বিসিবি তথা আয়োজক বাংলাদেশ যে এই আসরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে তার বড় প্রমাণ শুভেচ্ছা দূত হিসাবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজাকে নির্বাচিত করা। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে রীতিমত উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ অধিনায়ক। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে মাশরাফি বলেছেন- ‘এমন একটি উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরে আমি ভীষণভাবে গর্বিত।  ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেটারদের জন্য একটা আলাদা বিভাগ গঠনের ঘোষণাও দিয়েছে বিসিবি।’

topon

এইচআর/পিআর