এতো কাণ্ড, সব-ই আগাছা!
গুগল সার্চ মেশিনটা বড়ই উপকারি। যে কোনো তথ্য খুঁজতে আজকাল সবাই এই মেশিনটাই ব্যবহার করেন। তো এবার ‘ছাত্রলীগের পিটুনি’ দিয়ে সার্চ দিলাম। ওরে বাবা! এরা এত্তো পিটায়! ৫০ হাজার ১০০টি সংবাদ এক নিমিষেই চলে আসলো!!
নাহ্। ছাত্রলীগ এতো পিটায় না। ওখানে একই সংবাদ একাধিকবার দেখানো আছে। ছোট বেলায় শেখা ঐকিক নিয়মে- ধরে নেই একই সংবাদ ১০ বার করে আছে। তাহলে কতোবার তারা পেটাল? ৫ হাজার ১০০ বার। নাহ্ বেশি মনে হয়? ধরে নেই একই সংবাদ ১০০ বার করে আছে। তাহলে ৫১০ বার। এটাও মনে হয় বেশি। আসলে তারা কখনোই কাউকে পিটায়নি। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়েতো কাউকে পেটানো হয় না- যে কথা তাদের নেতারা বলছেন। সেটাই সত্য।
সাংবাদিকেরাই বানিয়ে বানিয়ে ছাত্রলীগের নামে মিথ্যা খবর লিখে পত্রিকার কাটতি বাড়ায়। ছাত্রলীগ তো সানি লিওন। আর টিভিওয়ালারা ছাত্রলীগের কর্মীদের ছবি ফটোশপ করে সানি লিওনের ছবি বসিয়ে দিয়ে প্রচার করে। তাই সবাই হা করে দেখে। আচ্ছা দেখা যাক গুগল সার্চ মেশিন কী কী সংবাদ দিয়েছে। কয়েকটি সংবাদের সূচনা/শিরোনাম পড়ি। অবশ্যই এগুলো ভুল সংবাদ। (ছাত্রলীগ উদার বলে আইসিটি অ্যাক্ট এর ৫৭ ধারায় মামলা করেনি।)
• বুয়েটে শিক্ষককে আটকে রেখে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
• জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এক নেতাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেধড়ক পিটিয়েছে।
• পুলিশের সামনেই যুবদল নেতাকে ছাত্রলীগের কর্মীরা পিটিয়েছে।
• সিলেটে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীকে ছাত্রলীগের পিটুনি।
• ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতিসহ তিন ছাত্রকে ছাত্রলীগের পিটুনি।
• রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওনা টাকা চাওয়ায় হলের ক্যান্টিন ব্যবস্থাপককে ছাত্রলীগের পিটুনি।
• চাঁদা না পেয়ে স্কুলছাত্র ও দোকানিকে জাবি ছাত্রলীগের পিটুনি।
• বরিশাল পলিটেকনিকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে ছাত্রলীগের পিটুনি।
• সচিবালয়ের রাস্তায় এক গাড়ি চালককে পিটুনি দিয়েছে মোটরসাইকেল আরোহী ছাত্রলীগকর্মী।
• টিভি চ্যানেল পরিবর্তন করায় রাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের পিটুনি।
• ছাত্রলীগের অনুমতি ছাড়া কাজে যোগ দেওয়ায় মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিৎসককে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ।
• রংপুরের পীরগঞ্জে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেধড়ক পিটিয়েছে ছাত্রলীগ।
• ময়মনসিংহে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাঁচ কর্মকর্তাকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ।
• পুলিশকে পেটানোর ঘটনায় রাজশাহীতে ছাত্রলীগের দুই নেতা আটক
হাজারো পিটানোর ঘটনার মধ্যে এই গুটি কয়েক সংবাদই বলে দিচ্ছে সারা বাংলার মাটি ছাত্রলীগের ঘাঁটি। সেদিন তারা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের লাথি মারার সময় শ্লোগান দিয়েছিল শাবির মাটি ছাত্রলীগের ঘাঁটি। ছাত্রলীগের ছেলেরা শ্লোগানের পরের লাইনটি দিতে ভুলে গিয়েছিল। সেই লাইনটি ছিল শাবির মাটি, ছাত্রলীগের ঘাঁটি, শিক্ষকদের মার লাথি।
ছাত্রদল পেটাও, যুবদল পেটাও, সাংবাদিক পেটাও, সরকারি কর্মকর্তা পেটাও, পুলিশ পেটাও, ডাক্তার পেটাও আর শিক্ষক কোন ছার! বাকি আছে কি? জন্মদাতা বাবা। এরপরের সংবাদ নিশ্চয়ই হবে পিতাকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল ছাত্রলীগ নেতা!
গুগল সার্চ মেশিনটা যে শুধু ছাত্রলীগের পেটানোর খবর দেয় তা কিন্তু নয়। তারা বস্তুনিষ্ঠ। এক তরফা খবর দেয় না। উভয়পক্ষের খবর দেয়। ছাত্রলীগ যে শুধু পেটায় তা না। তারা পিটুনিও খায়। মাঝে মধ্যে। যেমন গুগল বলছে: ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে সিলেট রাগীব রাবিয়া মেডিকেল কলেজের সিকিউরিটি গার্ডরা। গুগল এ খবরও দিয়েছে- ঝিনাইদহে জুতা কিনে টাকা না দেয়ায় ছাত্রলীগের দুই কর্মী গণপিটুনির শিকার হয়েছেন।
ছাত্রলীগতো আর নতুন করে পেটানো শুরু করে নাই। তারা পিটিয়ে সিদ্ধহস্ত হয়েছে। এখন শুধু শুধু তাদের এতো দোষ ধরা হচ্ছে। যেমনটি বলেছিলেন ছাত্রলীগের শাবি শাখার সভাপতি। সাংবাদিকরা নাকি ছাত্রলীগের ওই তুচ্ছ ঘটনাকে হট কেক বানাচ্ছে। তাইতো। তারাতো এর আগে আরো অনেক শিক্ষক পিটিয়েছে। তখন তো কেউ এতো বড় করে নিউজ করে নাই। টিভিগুলো সারাদিন পেটানোর খবর প্রচার করে নাই। তারাতো বরিশালে ক্লাসরুমে ঢুকেও শিক্ষককে পিটিয়েছে। তখন কোথায় ছিল সাংবাদিক আর সুশীল সমাজের বিবেক! ছাত্রলীগের কথাই ঠিক সাংবাদিকরাই তাদের হট কেক বানায়।
ছাত্রলীগ তার নেতাদের কথা রেখেছে। তাদের নেতা ওবায়দুল কাদের গত জুলাই মাসে ছাত্রলীগের সবশেষ সম্মেলনে বলেছিলেন চেঞ্জমেকার হবে কারা? চেঞ্জ মেকার হবে ছাত্রলীগ। তিনি আরো বলেছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। ছাত্রলীগ সেই পরিবর্তন এনেছে-আগে পেটাতো ছাত্রদের এখন পেটায় শিক্ষকদের। ওবায়দুল কাদের দু`বছর আগে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বলেছিলেন তাদের অপকর্ম ক্ষমতাসীনদের মাথা নীচু করে দিয়েছে। এবার নিশ্চয় ছাত্রলীগ ক্ষমতাসীনদের মাথা উঁচু করে দিয়েছে!
ছাত্রলীগ কী এবার প্রধানমন্ত্রীর কথা রাখবে? শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার এক দিন বাদে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে তিনি সব আগাছা উপড়ে ফেলতে বলেছেন। “আমি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে বলব, কাজে-কর্মে যে আগাছা, তা উপড়ে ফেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।”
২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকেই শুনে আসছি যতসব অপকর্ম করছে সংগঠনে ‘অনুপ্রবেশকারীরা। এবার পরিবেশের উন্নয়নে নেত্রীর কথামতো সব আগাছা কেটে ফেলে দেয়ার কর্মসূচি নিবে নিশ্চয়ই ছাত্রলীগ। তবে নেত্রীর যে তার পিতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটা যেন ভুলে না যান। বঙ্গবন্ধু কি বলতেন? তিনি বলতেন,‘বাংলাদেশের মাটি উর্বর। এখানে চারা ফেলতেই যেমন গাছ হয়, তেমনি আগাছাও জন্মায়। অনেক সময় আগাছা প্রকৃত গাছকেই খেয়ে ফেলে’।”
ছাত্রলীগের মনে হয় সেই দশাই হয়েছে!
এইচআর/এমএস