ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সুচিকিৎসা পেতে কী আমার সন্তানকে গুলিবিদ্ধ হতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:৪৭ এএম, ২০ আগস্ট ২০১৫

মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ নবজাতক শিশু সুরাইয়া অবশেষে মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে আজ। ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সুস্থ হয়ে ওঠে সুরাইয়া। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য প্রানান্তর চেষ্টা চলে। অবশেষে সেই চেষ্টার ফল মিলেছে। সুরাইয়া সুস্থ হয়ে মায়ের কোলে ফিরেছে। এখন সে ফিরে যাবে আপন ভিটায়। কিন্তু মনের মাঝে বার বার একটা প্রশ্নের উদয় হচ্ছে। আচ্ছা, ভাল চিকিৎসাসেবা পেতে হলে কী আমার সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে গুলিবিদ্ধ হয়ে? মাগুড়ায় মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়ার প্রাণ বাঁচাতে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ সবাই  আপ্রাণ প্রচেষ্টা করেছেন। ঘন ঘন মন্ত্রী, সাংসদ  ও রাজনীতিবিদরা ছুটে এসেছেন। তার সুচিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসকদের দিয়ে মেডিকেল  বোর্ড গঠন  করা হয়েছে। সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশেও পাঠানোর  ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল।

নবজাতকের জন্য হাসপাতাল পরিচালকের রাতের ঘুম হারাম  হওয়ার উপক্রম।  সকাল, দুপুর,  বিকেল ও রাতে টেলিফোন করে হালনাগাদ খবর নিয়েছেন তিনি। ঢামেক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে  গঠিত মেডিকেল বোর্ডের  চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রেও  সন্তুুষ্টি না মেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব  মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নবজাতক বিশেষজ্ঞদের অন কলে ডেকে এনে পরামর্শ নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য  মন্ত্রী চিকিৎসার সাথে  জড়িত  চিকিৎসকদের ডেকে ফুলেল সংবর্ধনা  দিলেন। মাতৃগর্ভে কেন শিশু গুলিবিদ্ধ এর প্রতিবাদে  মানববন্ধন  হলো, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি  দাবি  করে কড়া  বক্তব্য আসলো। বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা ব্যাকুল হয়ে রাতবিরাত জেগে হালনাগাদ তথ্য জানাতে থাকলো।

নবজাতক শিশুটির প্রতি সবার  অগাধ  ভালবাসা দেখে বার বার মনে বাঁকা  প্রশ্ন  জাগে। আসলে কী শিশুটিকে আমরা সবাই অকাতরে ভালবাসছি। নাকি  সবাই মিডিয়া কভারেজের জন্য এই সব করছি। এ ধরনের প্রশ্ন শুনে হয়তো  অনেকে বলেই বসবেন  ব্যাটা পাগল নাকি? মানবিকতা বলে  একটা  কথা আছে না?

দেখতে দেখতে স্বাস্থ্য সাংবাদিকতায়  আমার এক যুগেরও বেশি সময় কেটে গেছে। রাজধানীকেন্দ্রিক সাংবাদিকতার  ফলে এখানকার  প্রায় সব সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের শিশুদের চিকিৎসার সুযোগ সুবিধার সাথে  কমবেশি জানা  আছে।

শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কমবেশি আমাদের সবারই  আছে। মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশুটির জন্য সমাজের  বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বিশেষ করে চিকিৎসকদের যে মায়ামমতা দেখছি, দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের পূর্ব অভিজ্ঞতায় বেশিরভাগ  ক্ষেত্রেই তার ছিটেফোটাও দেখিনি।

সরকারি হাসপাতালে রোগীর  চাপ  বেশি থাকে  বলে ডাক্তাররা  পর্যাপ্ত সময় দেননা। বাবা  মা শিশুদের অসুখ  বিসুখ  নিয়ে একটি  দুটি  প্রশ্ন করলেই ডাক্তার  সাহেবরা এমন অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে  তাকান যা  দেখে অভিভাবকদের ছেড়ে  দে মা কেঁদে বাঁচি  অবস্থা  হয়।  বড়  বড় ডাক্তাররা এক  দল ডাক্তার নিয়ে ওয়ার্ডে  ঢুকে দুএকজন শিশুর  নাড়ি টিপে  দেখে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দ্রুত কিছু  প্রশ্ন  ছুঁড়ে দিয়ে ওয়ার্ড থেকে চলে আসেন।

বেসরকারি হাসপাতাল  কিংবা  প্রাইভেট  চেম্বারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে ভিতরে ঢুকে শিশুর সমস্যা ভালভাবে না শুনেই ব্যবস্থাপত্র লিখে ছেড়ে  দেন।

মাগুরার মাতৃগর্ভে  গুলিবিদ্ধ এ শিশুটি এই দিক  দিয়ে  ভীষণ সৌভাগ্যবতী। মানুষরুপী কয়েকজন  নরপিশাচ তাকে সময়ের আগেই পৃথিবীতে আসতে বাধ্য  করলেও বেঁচে থাকার পরিবেশ তার অনুকূলে ছিল না। কিন্তু একদল চিকিৎসক তার জন্য  দেবতা  হয়ে প্রাণ বাঁচাতে  আপ্রাণ প্রচেষ্টা  চালিয়েছেন।

এলোমেলো ভাবনা থেকে প্রশ্ন জাগে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ছোঁড়া গুলিতে আহত  হয়েছিল বলেই কী  সরকারের নির্দেশে চিকিৎসকরা এতটা  আন্তরিকতা দেখিয়েছেন শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে নাকি সত্যি সত্যিই মানবিকতাবোধ  থেকে  এতোটা  আন্তরিকতা দেখিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি মানবিকতাবোধ থেকেই সকলেই এমনটা করছেন। যদি তাই করেন তবে শুধু গুলিবিদ্ধ শিশুটির জন্যই নয়, যারা অসুস্থ  হয়ে আপনাদের  কাছে আসে তাদের প্রতি এতটা  না হলেও একটু আন্তরিক হয়ে কথা  বলুন। উদ্বিগ্ন মা বাবা ও স্বজনরা কী বলতে চায় তা শোনার জন্য কিছুটা সময় দিন। আর তা না হলে বিবেকের কাছে কিন্তু দায়ী থাকবেন। আর আমার মতো অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগবে আমার বাচ্চার  সুচিকিৎসা পেতে হলে কী তাকে গুলিবিদ্ধ  হতে হবে?

লেখক : সাংবাদিক

এইচআর/আরআইপি