ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

চাকরি : ভালো না মন্দ?

ড. শারমিন ইসলাম সাথী | প্রকাশিত: ১০:০৪ এএম, ২১ অক্টোবর ২০১৮

পাত্রভেদে যেমন পানির আকারের পার্থক্য রয়েছে তেমনি মানুষভেদে চাকরির গুরুত্বও কম বেশি। কারো কাছে হয়তো চাকরির বেতনটাই সব। চাকরি যে আরও অনেক গুরুত্ব বহন করতে পারে অনেকেরই এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। কেউ কেউ সরকারি চাকরির জন্য ওঠে পড়ে লাগে। কেননা সেখানে অনেক টাকা বিভিন্ন উপায়ে আসবে। হতে পারে সেটা সৎ অথবা অসৎ উপায়ে।

কিছু দিন আগে আমার এক বন্ধুর ফেসবুকে চাকরির গুরুত্ব সংক্রান্ত একটি প্রশ্নবোধক স্ট্যাটাস দেখতে পাই। সে স্ট্যাটাসের মন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো, চাকরিবিহীন জীবন লবণবিহীন তরকারির মতো। আরেকজন লিখেছে, চাকরির গুরুত্ব অনেক, প্রতিদিন নতুন কিছু শিখছি, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয়।

আরেক বন্ধু লিখেছে, আমার তো বাসার কাজ ভাল লাগে না, অফিসের কাজই ভাল লাগে, এটা আমাকে আকর্ষণ করে। অন্যতম একটি মন্তব্য হলো, বাসায় সন্তানের হাসিমুখ আর অফিসে নিজের নেমপ্লেট দেখতে ভাল লাগে। আর বেশ কয়েকজন লিখেছে, চাকরির কোনো গুরুত্ব নেই বেতন ছাড়া।

চাকরি করার উদ্দেশ্যটাই যদি শুধু ব্যক্তিগত সুখ-সাচ্ছন্দ্য ও নিজেকে সমাজে চিহ্নিতকরণ করা হয় তাহলে তার গুরুত্বটা লঘু হয়। আমরা যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি সেই প্রতিষ্ঠানটি এবং আমি নিজে দেশের একেকটি অংশ। আমার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বেঁচে থাকছে, প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে দেশ বেঁচে থাকছে, ব্যাপারটি এভাবেও তলিয়ে দেখা যায়।

অনেকেই বলতে পারেন চাকরি মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত সুখ স্বাধীনতা নষ্ট করে ফেলে। এটা কিছুটা সত্যি। তবে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রশ্নে মানুষ যাবেনা যখন চাকরিটা হবে আনন্দদায়ক। মানুষের মানসিকতা, চাহিদা, ধরন ও পছন্দ অনুযায়ী চাকরি করতে পারলে তা আর বোঝা মনে হবে না। সপ্তাহে যে একদিন বা দুদিন ছুটি পাওয়া যায় তা কাজে লাগাতে হবে ব্যক্তিগত সুখ স্বাধীনতার জন্য।

চাকরির প্রতি মানুষের এতো অনীহার কারণ স্বরূপ দেখা যায় মানুষ যোগ্যতা ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে না বা করছে না। যেমন দেখা যায় পাঁচ সাত বছর ফার্মেসিতে পড়ে ফার্মাসিস্ট না হয়ে ব্যাংকার হিসেবে কাজ করছে। এতে সন্তুষ্টির অভাব দেখা দেয়। চাকরি হয়ে যায় একঘেয়ে, আনন্দহীন।

আবার চাকরি করার ক্ষেত্রে সময়ের স্বাধীনতা থাকে না। একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা চাকরির ক্ষেত্রে থাকলেও অনেক সময় অফিসে বাড়তি কাজ করতে বেশি সময় থাকতে হয়। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মেয়েদের জন্য এটা আরও বড় সমস্যা। চাকরিজীবী মায়েরা চাকরির পাশাপাশি সংসারের কাজ, বাচ্চা দেখাশোনা এসব করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।

উন্নত দেশে স্বামী স্ত্রী দুজনে ভাগাভাগি করে সংসার ও বাচ্চা দেখাশোনার কাজ করে। এতে চাকরিজীবী স্ত্রীর উপর কাজের চাপ কমে। কিন্তু আমাদের দেশে এই চর্চা নেই। অর্থ উপার্জনের কাজ যদি মেয়েরা ভাগাভাগি করে নেয় তবে ঘরের কাজগুলোও কিছুটা ছেলেরা করলে মেয়েদের অনেকাংশে সহযোগিতা করা হয়।

বেশিরভাগ কোম্পানি চাকরির জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। অনেকেই আবেদন করেন। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের ডাক আসে না। বেশির ভাগ কোম্পানি শুধু অভিজ্ঞ প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৮-১২ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া হয়। অর্থাৎ টাকা দিয়ে চাকরি কিনতে হবে। তাহলে আমাদের পড়াশোনা করে কী হলো? আমাদের তো মূর্খ থাকাই ভাল ছিল। যারা টাকার বিনিময়ে চাকরি নিচ্ছে, তারা দুর্নীতির লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। ফলে দুর্নীতির সাগরে ডুবে যাচ্ছে দেশ ।

বিলাতের ওয়েলথ এক্স ইনস্টিটিউট নামের এক গবেষণা সংস্থা বিস্তর তথ্য প্রমাণসহ হিসাব করে দেখিয়েছে, বিশ্বে অতি ধনী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে বাংলাদেশে। চাকরিজীবীরা এই ধনীদের কাতারে নেই। আছে শিল্পপতি, মন্ত্রী, আমলা ও দুর্নীতিগ্রস্ত লোকেরা। চাকরিজীবীরা সারাদিন শ্রম দিয়ে অল্প বেতন পেয়ে না পারছে উন্নত জীবন-যাপন করতে, না পারছে সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করতে।

কিছু সংখ্যক লোকের কাছে দেশের সম্পদ কুক্ষিগত না রেখে সম্পদের সুষম বণ্টনের দিকে সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতনাদি বাড়িয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বেসরকারি ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আইন ও নীতিমালা প্রণয়ণপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এক্ষেত্রে সকল শ্রেণির, সকল পেশার মানুষের জীবনমান কিছুটা হলেও বাড়বে বলে আশা করা যায়।

মানবজীবনে চাকরির গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। শুধু জীবন ও জীবিকার জন্য চাকরি করতে হয় বিষয়টি এমন নয়, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, জাতীয় আয়-ব্যয় নির্ভর করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর। তাই একজন মানুষ তার যোগ্যতা অনুযায়ী যোগ্য প্রতিষ্ঠানে সন্তুষ্টির সাথে কাজ করার অধিকার অর্জন করুক- এটাই কাম্য।

লেখক : গবেষক ।

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন