ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বড় হওয়ার দৌড়ে কে প্রথম আর কে লাড্ডু

তুষার আবদুল্লাহ | প্রকাশিত: ১০:১৯ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অলিম্পিক বা অন্য কোন খেলার আসরে দীর্ঘ লম্ফ দিয়ে আমাদের কোন কালে তেমন প্রাপ্তিযোগ ঘটেনি। আমাদের লম্ফ বরাবরই নাতিদীর্ঘ, স্বল্প দীর্ঘ। ফলে প্রারম্ভেই বাদ পড়ে যাওয়ার রেওয়াজ নিয়ে আছি ঐ খেলা গুলোতে।

এজন্য মনটা সব সময়ই ছোট হয়ে থাকে। দীর্ঘ লম্ফ দিতে না পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যাচ্ছিলাম অবিরত। কিন্তু আচমকা এক সুখবর এলো। বিদেশি জরিপ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে বড় লোক হবার দৌড়ে আমরা দীর্ঘ লম্ফ দিতে শিখে গেছি। বিশ্বের সকল দেশ এবং ধনকুবের দের পেছনে ফেলে আমরা সামনে চলে এসেছি।

বড়লোক হবার একশ মিটার দৌড়ে আমরা দ্রুততম দেশ। হৈ হুল্লোড় করে উদযাপন করার মতো খবর। কিন্তু উদযাপন করতে পারছি না। এবেলাতেও দীর্ঘশ্বাস। শ্বাস ছাড়তে হচ্ছে দ্রুত লয়ে। কারণ দ্রুত বড় লোক হবার দৌড়ে যারা আছেন, তারা কতোটা টাকা আমার দেশে রেখেছেন, আর কতোটা রপ্তানি করেছেন, সেই গণিত মেলাতে গিয়ে ঘেমে উঠলাম।

জাতি হিসেবে আমাদের স্বচ্ছলতা এসেছে সত্যি। খাবারের অভাবে মানুষ মারা যাবে, এমন অবস্থায় নেই দেশ। আগের চেয়ে মানুষ আরো চঞ্চল ক্রেতা হয়েছে একথাও সত্যি। পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। বেড়েছে ভোগের বহুমাত্রিকতা। কর্মসংস্থান যতোটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেড়েছে, তারচেয়ে বেসরকারি খাতে বেড়েছে বেশি। বড়, মাঝারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও তৈরি হয়েছে দেশে।

ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা এখন প্রকাশ্য। এই বিশৃঙ্খলার সুফল যাচ্ছে, গিয়েছে বড় পুঁজি বা বিনিয়োগকারীদের কাছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারিরা ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে ঘর্মাক্ত হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলেও অধিকেরা লড়াই করে যাচ্ছে টিকে থাকার জন্য।

মধ্যবিত্ত তার সঞ্চয় ও বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে আছে। পুঁজিবাজারও আস্থার জায়গার নেই। কিন্তু বড় বা বোয়ালেরা ঠিকই মুনাফা করে যাচ্ছে। দুঃখের বা লজ্জার কথা হলো তারা নিজ দেশে টাকা রাখছেন না।

পাচার করে দিচ্ছে তাদের দ্বিতীয় ভূমিতে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান বাইরের দেশের উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে, এটি গৌরবের। তাদের সেই বিনিয়োগও দৃশ্যমান। কিন্তু বেশিরভাগই লুকিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে টাকা। বিদেশে তাদের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ দৃশ্যমান নয়।

এই বাস্তবতায় দেশে যারা বড়লোক হওয়ার দৌড়ে প্রথম হলেন, তাদের সঙ্গে অন্যদের ব্যবধান বা দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। সম্পদ ছাড়া হচ্ছে একটি অংশ। অন্য অংশটি সম্পদের সমতল ঢিবিকে টিলা, পাহাড় থেকে পর্বতের শীর্ষ চূড়ায় নিয়ে যাচ্ছে।

রাষ্ট্র বা যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে, তারা বিনিয়োগ বান্ধব বলে দাবি করে। তাদের কিছু উদ্যোগ থাকে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল থেকে শুরু করে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল। বিভিন্ন রপ্তানিমুখী শিল্প এবং পণ্য উৎপাদনে কর অবকাশ দেয়া, ঋণ সুবিধা দেয়ার কাজ গুলো সরকার করেছে, করছে। কিন্তু বড়লোকদের কোন আপনপর নেই যেন। তারা সকল সরকারের।

প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের কাছে তারা অনুগত এমন করে যেন, ঐ রাজনৈতিক দলের কাছেই তার সকল আনুগত্য। এই অনুগত ভাবটিতে মজে গিয়ে বা রাষ্ট্রের উৎপাদন ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসায়ী থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু বড়লোকের গোল্ডেন ফাইভ পাওয়ার পর আর দেশ বান্ধব থাকেন না।

এখানে সরকার, রাষ্ট্রের এক রকমের অসহায়ত্ব আছে। সেই অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি না ঘটলে, কোন দৌড়ে প্রথম হওয়ার ফুর্তি উদযাপনের সামর্থ্য আমাদের সকলের হবে না। বরং দীর্ঘশ্বাস আরো দীর্ঘ হবে।

লেখক : হেড অব নিউজ, সময় টিভি।

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন