প্রতিরোধই উত্তম
রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। জুন মাসে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ২৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। জুলাই মাসের শুরুর দু’দিনেই ৩৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরের বছর জানুয়ারি থেকে সর্বশেষ ২ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৭৩ জন। তার মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের তিনজনই আবার মারা যান জুনে। মৃতদের মধ্যে ১ জন ডেঙ্গু শকড সিন্ড্রোম ও ৩ জন হেমোরেজিক শকডে মারা গেছেন। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৬৬ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ অবস্থায় রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধে এ ধরনের সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভার মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব রোধে যে সব কার্যক্রম সাম্প্রতিক সময়ে সম্পন্ন হয়েছে এবং ভবিষ্যতে করণীয় নানা দিক নিয়ে এ সভায় আলোচনা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালী কমিউনিটি সেন্টারের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাকির হাসানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রাধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম, সচিব দুলাল কৃষ্ণ সাহা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোতাহার হোসেন। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া অ্যান্ড এডিস ট্রান্সমিটেড ডিজিজেস’র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান।
সাধারণত প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা নাক ও দাঁত দিয়ে এবং কাশির সময় রক্তক্ষরণে ভুগে থাকে। এছাড়া আক্রান্তরা পিঠ, দাঁত, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা অনুভব করে। ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে আক্রান্তদের অবস্থার উন্নতি না হলে তাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার আগে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ারও দরকার নেই। চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে সচেতনতার কথাও বলেন। বিশেষ করে রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি, কিংবা শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। এডিস মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য দিনের বেলায়ও ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত।
বাসায় খোলা পাত্রে জমে থামা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এছাড়া ফুলের টবে জমে থাকা পানি, টায়ারের খোল, ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দা অথবা পানির চৌবাচ্চায় এই মশা নির্বিচারে বংশ বিস্তার করে। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণেও ডেঙ্গুর বিস্তার হচ্ছে। ছেড়ে ছেড়ে আসা বৃষ্টির কারণেও এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটছে এবং সে কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ছে।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ১০২ ডিগ্রি ও এরচেয়ে বেশি জ্বর, সঙ্গেই তীব্র মাথা ও শরীর ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ে, তীব্র পেট ব্যথা, স্কিন র্যা শ ইত্যাদির সঙ্গে বমিভাব ও ক্ষুদামন্দা থাকলে তার ডেঙ্গু হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
এ অবস্থায় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে এন্টিবায়োটিকসহ নানান ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর প্রশমনে কেবল প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পানি খেলেই চলে। তবে অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে।
বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের প্রধান হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত এক দশকে প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে বলা হয়েছে। বিশ্ব জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের দুই ভাগই অর্থাৎ ২৫০ কোটি লোক ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এর ৭০ ভাগই এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে বাস করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হু, সতর্ক করে দিয়েছে, এখনই সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আরো সক্রিয় হতে হবে যাতে এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি না পায়। এ লক্ষ্যে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। মানুষজনকে সচেতন করে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
এইচআর/আরআইপি