শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বিদেশে থাকায় বেঁচে যাওয়া তাঁর দুই কন্যার দেশে আসা ছিল অনিরাপদ। প্রাণভয় উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি এসে বুঝতে পেরেছিলেন বাংলার মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছেন। বন্দুকের নলের কাছে গণতন্ত্র জিম্মি। তিনি অঙ্গীকার করেন জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
জনগণই হবে প্রজাতন্ত্রের মালিক। সেদিন থেকেই শুরু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গণতন্ত্র ও শান্তি পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে এতিম হয়ে গিয়েছিলেন এদেশের জনগণ। স্বাধীন দেশেও তারা পরাধীনের মতো ছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসা ছিল সাধারণ জনগণের কাছে বিশাল আনন্দের সংবাদ।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসার সংবাদ পরদিন (১৮ মে, ১৯৮১) ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়। তৎকালীন দেশ সেরা পত্রিকা ‘দৈনিক সংবাদ’ তাদের রিপোর্টে এভাবে ঐদিনের ঘটনাটি ব্যাখ্যা দিয়েছে, “রাজধানী ঢাকা গতকাল ১৭ মে মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিছিল। শুধু মিছিল আর মিছিল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিও মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। শ্লোগানেও ভাটা পড়েনি। লাখো কণ্ঠের শ্লোগান নগরীকে প্রকম্পিত করেছে। গতকালের ঢাকা ন’বছর আগের কথাই বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে এসেছিলেন, সেদিন স্বজন হারাবার ব্যথা ভুলে গিয়েও লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিলো নেতাকে এক নজর দেখার জন্য।
গতকালও হয়েছে তাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিলো। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয়েছিলো জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছ’ঘণ্টা।”
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনের জন্যে বিশাল গুরুত্ব বহন করে। কারণ শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলে এদেশের মানুষ ‘ভোট ও ভাতের অধিকার’ ফিরে পেয়েছে। গণতন্ত্র ফিরে পাবার জন্য আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক দেশে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা সেনাশাসক ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।
শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেয়েছে। একথা আজ প্রমাণিত আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৬ কোটি জনগণের নিরাপদ আশ্রয়। কারণ বর্তমান প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনা এক আশ্চর্য সাহসী রাজনীতিকের নাম; যাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে।
আমরা ভাবতেই পারিনি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণের সক্ষমতা অর্জন করবে। ১৯৭১ সালে জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে এক সাগর রক্ত ও বেদনাদায়ক ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ ৫০ বছরের কম সময়ে এই সক্ষমতা অর্জন করবে তা এদেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক মহলও চিন্তা করে নি।
উন্নয়ন ও কল্যাণের জাদুকর শেখ হাসিনা চিন্তা করেছেন, পদক্ষেপ নিয়েছেন, অর্থায়ন করেছেন এবং সফল হয়েছেন। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সম্পদ ও মর্যাদার মালিক আজ বাংলাদেশের সকল জনগণ।
সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান দিয়েছেন। দ্বিমতের সুযোগ নেই, এই স্বীকৃতি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল।
জাতিসংঘের এই স্বীকৃতির কিছুদিন পর আন্তর্জাতিক আরও একটি স্বীকৃতি আমাদের সম্মানিত করেছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য স্ট্যাটিসটিক্স বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করেছেন আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নাম। এটা আমাদের জন্য বিশাল গৌরব।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি এমন আরেকটি উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতির কথা না বললেই নয়। সম্প্রতি বিশ্বের উঁচু মাপের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পিপলস এন্ড পলিটিক্স’ বিশ্বের পাঁচজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছেন- যাদেরকে দুর্নীতি স্পর্শ করেনি, যাদের বিদেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, এমনকি উল্লেখ করার মতো কোনো সম্পদও নেই।
বিশ্বের সবচেয়ে সৎ এই পাঁচজন সরকারপ্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই দৃঢ়ভাবে বলতেই পারি, এমন একজন রাষ্ট্রনায়কের দ্বারাই সম্ভব ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখা এবং সে স্বপ্নের গন্তব্যে পৌঁছা।
শেখ হাসিনা আপনি সুস্থ্য শরীরে বেঁচে থাকুন সুদীর্ঘকাল, আমাদের জন্যে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের জন্যে।
লেখক : কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং সাবেক সংসদ সদস্য।
এইচআর/আরআইপি