অকারণ বিরোধিতা নয়
নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছে। সর্বশেষ খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএমের ব্যবহার হলো। ‘ভোট কাটাকাটি, ব্যালট ছিনতাই ও সিল মারার চেয়ে আমাদের ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভালো। কোনো ঝামেলা নেই। দুই দিন ট্রেনিং দিছি। তাতে সুবিধা হইছে, সময় কম লাগছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে ভালোই লাগল।’ খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে গত মঙ্গলবার নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহজাহান হাওলাদার পিটিআই কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন গণমাধ্যমের কাছে। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না ভোটররা এই পদ্ধতিকে সহজভাবেই নিয়েছেন।
কিন্তু সত্যি বলতে কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন না মানার সংস্কৃতি অধিকমাত্রায় ক্রিয়াশীল। একদল কিছু একটা করতে চাইলে অন্যদল বুঝে না বুঝে সেটার বিরোধিতা করবে। নির্বাচন কমিশনের ইভিএম ভোট পদ্ধতি চালু করার বিষয়ে এখনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। এটা দুঃখজনক।
পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যান ধারণায়ও পাল্টে যাচ্ছে। বর্তমান একংবিংশ শতাব্দীতে এসে বিশ্ব প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেকদূর এগিয়েছে। আর প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের অনেক জটিল কাজকে সহজ করে দিয়েছে। জীবনকে করেছে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং গতিশীল। এসব দিক বিবেচনা করেই বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তিগত অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রেরণের মাধ্যমে মহাকাশেও ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের নাম।
স্বাস্থ্যখাতেও প্রযুক্তির ব্যবহার নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। সভ্যতার ক্রম বিকাশের ধারায় বর্তমান বিশ্ব অনেকাংশেই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। কাজেই প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষের যুগে এসে আমাদের প্রযুক্তি বিমুখতার কোনো সুযোগ নেই। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন পদ্ধতি চালু নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে তা আসলে প্রযুক্তি ভীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা এক ধরনের গোঁড়ামিরও পরিচয়। এছাড়া অকারণ বিরোধিতার সংস্কৃতিও এ জন্য দায়ী।
নতুন কিছুকে গ্রহণ করার জন্য আধুনিক চিন্তাচেতনার অধিকারী হতে হয়। কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করার আগেই এ নিয়ে অযথাই ভয় বা আশঙ্কা প্রকাশ কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাপার হতে পারে না। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ইভিএম পদ্ধতিতে ব্যালট ইউনিট ও কন্ট্রোল ইউনিট টেম্পারিং করে এক মার্কার ভোট অন্য মার্কায় দেখানো সম্ভব। একই সঙ্গে ভোটের সংখ্যাও বাড়ানো কমানো সম্ভব। কথায় বলে ‘যন্ত্র থাকলে যন্ত্রণাও থাকবে’। তাই বলে কি আমরা যন্ত্র ব্যবহার করবো না। যে কোনো জিনিসেরই ভালো-মন্দ দুটি দিক আছে। অর্থাৎ ইভিএম পদ্ধতির ক্ষেত্রেও কথাটি তাই। সুতরাং নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অতীতে ভোটের বাক্স, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনাকি ঘটেনি? আর সাধারণ পদ্ধতিতেও তো নির্বাচনের ফল পাল্টানো যায়।
আসলে যে কোন যন্ত্রের ব্যবহারই নির্ভর করে যিনি সেটা অপারেট করছেন তার ওপর। মোটকথা সদিচ্ছার ওপরই সবকিছু নির্ভর করে। এখানে পদ্ধতি কোনো বিষয় নয়। কোনো নির্বাচনের ফলাফলই কি পরাজিত দল ভালোভাবে নিয়েছে? তাহলে পদ্ধতির দোহাই কেন? বিশ্লেষকদের মতে, ইভিএম পদ্ধতির অনেক উপযোগিতা রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় এটি যুক্ত হলে তা একটি আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে অযথাই অকারণ বিরোধিতার অবস্থান থেকে সরে আসাই হবে উত্তম।
এইচআর/আরআইপি