ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ভবন ভাঙতে কেন গড়িমসি?

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৯:৪৯ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৮

আদালত থেকে বার বার বলার পরও বিজিএমইএ ভবন ভাঙা নিয়ে গড়িমসি কিছুতেই কাম্য নয়। সর্বশেষ হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) প্রস্তুত থাকার জন্য বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। নির্ধারিত দিনে যথাযথভাবে মুচলেকা না দেয়ায় বিজিএমইএকে ফের মুচলেকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ সম্পর্কে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙতে যদি কতৃপক্ষ উদ্যোগ নিতে না পারে তা হলে রাজউককে প্রস্তুত থাকার জন্য বলেছেন আদালত। এসময় আপিল আদালত বলেন, হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে ৯০ দিনের মধ্যে ভবন ভাঙতে হবে এবং সম্পূর্ণ ব্যায় বহন করবে বিজিএমইএ কতৃপক্ষ। আর যদি তা না করে রাজউককে বলবেন প্রস্তুত থাকতে। আপনারা তো এসব বিষয় স্পষ্ট করেননি। তাই এটি ঠিক করে নিয়ে আসেন এবং আর কোনো সময় চাইবেন না। যদি সময় চান তার লায়াবিলিটি (দ্বায়) কে নেবেন।

পরে আগামী সোমবার আবারও মুচলেকা দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। গত ৫ মার্চ বহুতল ভবনটি ভাঙতে আরও এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ভবন ভাঙতে একাধিকবার সময় নিয়েছে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত বছরের ৮ অক্টোবর সাত মাস সময় দেয় আপিল বিভাগ। আগামী মে মাসে সেই সময় শেষ হবে। তার আগেই সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে পোশক শিল্প নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি।

১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএর ভবন ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙতে বলা হয়। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে আদালত বলেন, ভবনটির সৌন্দর্য ও মহিমান্বিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এই ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে এটা শুধু হাতিরঝিল নয়, গোটা ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে। রায়ে আদালত বলেন, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাটের অংশ বিক্রি করেছে, তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। দাবি করার এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলা হয় রায়ে।

‘জোর যার মুল্লুক তার’ মূলত এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই বিজিএমইএ ভবনটি নির্মিত হয়েছিল। ২০১০ সালের ২ অক্টোবর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন হাতিরঝিলে স্থাপিত এই ভবন নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে ‘নো প্ল্যান টু ডিমোলিশ আনঅথোরাইজড বিজিএমইএ বিল্ডিং সুন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তার পর দিন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ডিএইচএম মনির উদ্দিন প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের দৃষ্টিতে আনেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্বতপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) ভবনটি ভাঙার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন বিষফোড়ার মতো। পরিবেশবিদরা তো বটেই খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার এই ভবন ভেঙে ফেলার বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তির জোরে ভবনটি টিকে থাকে। রায় দেয়ার সময় আদালত বলেছিলেন, ‘হাতিরঝিলের লেককে কেন্দ্র করে সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই ভবনের কারণে সেই সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এটি একটি বিষফোড়া। আদালত এও বলেছেন, সরকারি একটি সংস্থার জমি আরেকটি সংস্থা কীভাবে বিজিএমইকে বরাদ্দ দেয়? জলাধার আইন অনুযায়ীও লেক দখল করে ভবন গড়ে তোলা অবৈধ।’ অবৈধ দখলদারদের নিবৃত্ত করতে হলে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন