ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

চেতনাদীপ্ত মার্চ

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ১০:১১ এএম, ০১ মার্চ ২০১৮

মার্চ বাঙালির জীবনে এক অনন্য মাস। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় মার্চের প্রতিটি দিনই অত্যন্ত ঘটনাবহুল এবং তাৎপর্যময়। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন সারা মাস জুড়েই নানা কর্মসূচি পালন করে। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে পাকজান্তার সার্চ লাইট অপারেশন চালিয়ে নির্বিচারে বাঙালি নিধন, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিমপাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া, গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা সর্বোপরি মুক্তিকামী জনতা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য আনুষ্ঠানিক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে এই মার্চ থেকেই।

৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর বাঙালি যে তার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে এগোচ্ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় এই মার্চেই। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন তাতেই ষ্পষ্ট হয়ে যায় অনেক কিছু। যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু তাঁর বজ্র নিনাদ কণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঘোষণার পর বাঙালীর মধ্যে দেখা গেল এক নতুন উজ্জীবন। তাদের আর বুঝতে বাকি রইল না স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে এবার একটা কিছু করতেই হবে।

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই বঙ্গবন্ধু যার হাতে যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বললেন। ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি’ বলে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন। এই দুর্গ গড়ে তোলার অর্থ যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা তা বুঝতে কারও বাকি রইল না। শত্রুর মোকাবেলা করার দৃপ্ত আহ্বানও ভেসে উঠল তাঁর বজ্রকণ্ঠে। সেনাবাহিনীর প্রতিও তিনি উচ্চারণ করলেন সতর্ক বাণী। প্রয়োজনে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেয়ার কথাও বললেন তিনি। ৭০ এর নির্বাচনে যে ম্যান্ডেট তিনি পেয়েছিলেন বস্তুত সেই ম্যান্ডেটই তাকে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। যে কারণে বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড দিতে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

পাকিস্তানের শোষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়েছিল দীর্ঘদিন থেকে। এদেশের তরুণ-তরুণী, আবালবৃদ্ধবণিতা সকলেই সেদিন এই একটি কণ্ঠের মন্ত্রমুগ্ধে আবিষ্ট হয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য যার যার মতো করে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। স্বাধীনতা এবং মুক্তির ঐকতানে বাঙালি জাতি জাতিধর্মবর্ণ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে এক হয়। এরই মধ্যে নানা কূটকৌশল চালাতে থাকে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে চতুরতার সঙ্গে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে তারা।

এভাবেই ঘনিয়ে আসে ২৫ মার্চের কালরাত্রি। পাকজান্তারা ভারি অস্ত্র, কামান নিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের নামে এদেশের ছাত্র, জনতাসহ নিরীহ বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইনেও হামলা চালায়। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিসত্মানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে গোটা জাতি। যার হাতে যা আছে তাই নিয়ে তারা শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য ঘর হতে বেরিয়ে যায় এদেশের মুক্তিপাগল মানুষ। শুরু হয় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম। অতঃপর একসাগর রক্তের বিনিময়ে কাঙ্খিত স্বাধীনতা লাভ।

এই মাসেই বাঙালি তার চেতনাকে নতুন করে শাণিত করে। নতুন শপথে বলীয়ান হয়। অত্যাচার, নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্মারক মাস হিসেবে মার্চ প্রতিবারই আমাদের নতুন করে পথ দেখায়। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকল দেশপ্রেমিক দলকে চেতনাদীপ্ত মার্চে নতুন করে শপথ নিতে হবে। সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবে তা করতে হবে রাজনৈতিক সংহতি এবং ঐক্য বজায় রেখেই।

এইচআর/আরআইপি