সাংবাদিকরা কি গাঁজা খেয়ে লিখে
‘এই তোদের সাংবাদিকরা কি গাঁজা খেয়ে লিখে?’ সাংবাদিক হিসেবে আমাকে প্রায় এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় বন্ধুস্থানীয় বা মুরব্বীস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে। হয়তো আমার মতো অনেককে হতে হয়, আবার অনেকে এমন প্রশ্ন করেন। উনারাতো জানেন না এইকালের সাংবাদিকরা ‘ওই মাল’ সবাই টানেন না। তবে আমাদের কিছুতো আছে, চোখে দেখা, কোনও বিদেশির সঙ্গে পরিচয় হলে ওর ফরমায়েশ খাটে একটা বিয়ারের জন্য কিংবা ওর বাসায় মদ খাওয়ার দাওয়াত পেলে, এক পেগ পেটে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের বাবাকেও ওরা চিনে না। তাদের পক্ষেতো কিছু গাঁজাখোরি রিপোর্ট লেখা অসম্ভব কিছু না।
সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় বে-খেয়ালের দিক হচ্ছে- তাদের হাতে কলম আছে বলে তারা অন্যের বিরুদ্ধে লেখার সময় সে লোকের অবস্থান চিন্তা করেন না। ওই লোক কোনো গাঁজাখোরি রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ওই রিপোর্টারের বিরুদ্ধে কলম ধরলে তার কেমন লাগবে সেটাতো চিন্তাতেই আসে না। কয়েক বছর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক সচিব সত্যি সত্যি এমন এক ঘটনার সৃষ্টি করেন। তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় টেনে অনেক সাংবাদিক লিখেছেন। একদিন মন্ত্রণালয় থেকে বেরুবার মুখে পেয়ে যান এক সাংবাদিককে। ‘এই যে মিস্টার ..., অশিক্ষিত, এতোদিন আমার বিরুদ্ধে লিখেছেন। কিছু বলতে পারিনি। আমি এখন অবসরে গেলাম। আমার হাতেও কলম আছে, দেখে নিব আপনাকে।’
পরের ঘটনা কী বলবো.. বাক্যবাণে জর্জরিত করেন সাংবাদিককে। দু’জনের হাতাহাতির উপক্রম। সত্যি সত্যি কয়দিন পর ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নগ্নভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় লিখেন তিনি। সাংবাদিক বন্ধু অভিযোগ করেন আমাকে, দেখেন আপনার বন্ধু আমার বিরুদ্ধে কি লিখেছেন। সচিব সাহেবকে বলতে গেলাম। উনি আরও ক্ষ্যাপা- ‘কাকতো কাকের মাংস খায় না। আপনিতো বলবেনই।’ তারও অনেক যুক্তি।
আজ উনার জন্য প্রমাণ রাখতে আমি একটু ‘কাকের মাংস’ খাবো। আমার বন্ধু মইন। স্কুল-কলেজের বন্ধু। কলেজের পরীক্ষা দিয়েই সে পাড়ি জমিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তার বড় ভাই আগে থেকেই সেখানে পরিবার নিয়ে থাকতো। মইনও এখন সেখানে সংসারি হয়েছে। মইন মাঝে মাঝে দেশে আসে- তবে ও বিদেশ যাওয়ার পর সম্ভবত একবার/দুইবার দেখা হয়েছে আমার সঙ্গে। খুব বেশি দেখা না হওয়ার কারণ জানলে মইন হয়তো মনে কষ্ট পাবে। আজ বলেই দি। ওর মধ্যে দেখানোপনার একটা রোগ আছে, মুসা বিন শমশের জাতীয় রোগ। আমার আবার ‘ব্রান্ড প্রদর্শন’ করা বড় লোকদের নিয়ে ভয়। দেখা হলে কখন কি কথা বলে তাদের মনে কষ্ট দেই- সে কারণে। অবশ্য আমাদের দু’জনের দেখা না হওয়ার পেছনে নিজেদের ব্যস্ততাও কম দায়ী না। তাই বলে আমাদের বন্ধুত্বের কোনও ঘাটতি নেই। চিঠির যুগে চিঠিতে আর এখন ই-মেইল, ফেইসবুক, ভাইবারে নিয়মিত যোগাযোগ চলে। আমাদের আরেক সহপাঠী নোটনের সঙ্গে দেখা হলে মইনের কথাই বেশি হয়। কারণ এখন প্রতি বছরই মইন দেশে আসে, নোটনের সঙ্গে দেখা হয়। আর একবার এক গল্প তৈরি করে দিয়ে যায় বন্ধুদের জন্য।
মইনের যেই দেখানোপনা রোগের কথা বলছিলাম সেই রোগ শুধু আমার নয়, এবার দেশজুড়ে, সাইবার ওয়ার্ল্ডের কল্যাণে অনেকের চোখে পড়েছে। কয়েক বছর আগে সে বাড়ির পাশে পাহাড়ি এলাকায় একটি খামার করেছে। সেখানে বিদেশি গরু পালছে, নানা জাতের ফলের গাছ লাগচ্ছে। কয়েক কোটি টাকা ঢালছে। অনেক লোক কাজ করছে। তার মতে তার আয়ের সিংহভাগ এখন সে হিলসডেল নামক খামারটিতে বিনিয়োগ করেছে। এক সময় অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে নিজের দেশের মাটিতে ফিরে আসবে। ওই ফার্মটিই তার স্বপ্ন- এই তার আশা।
আমাকে কয়েকবার বলেছে সে দেশে আসলে তার সঙ্গে তার ফার্মে যেতে। আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশেই তারপরও যাবো যাবো করে যাইনি। শুনেছি ঈদ বা অন্য উৎসবে আশ-পাশের লোকজন ভিড় জমায় তা দেখতে। এই ভিড় জমার মূল কারণ সেই ফার্মে এখন হারিণ পালা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। এখন আছে ১৮টি হরিণ। বিনা পয়সায় হরিণের লাফালাফি, পশু পাখি দেখতে অন্যদিনও লোকজন ভিড় করে।
এই জুনের শেষে মইন দেশে এসে সে খামারের একটি হরিণ শিকার করেছে। প্রথমে গুলি করেছে, তারপরও সেটাকে ইসলামি কায়দায় জবাই করেছে। এইসব সে ভিডিও করেছে এবং জোশের ঠেলায় অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এটাকে ফেইসবুকে আপলোডও করেছে। মহানন্দে সেটা আবার আরেকজন ইউটিউবে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে পোস্টটা আমার চোখে পড়েনি। তবে মাঝখানে নিউজফিডে হরিণ শিকারের একটি স্টিল ছবি এবং মন্তব্য দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। ছবিতে শিকারির মুখ দেখা যাচ্ছে না। তাই ভাবিনি যে এটা মইনের ছবি। মন্তব্যটা অপছন্দ হয়নি আমারও। অনেকটা ‘বদল টাইপ লোক’ বলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি। কারণ বন্দী হরিণকে শিকার করার কি হলো!
গত রবিবার (১২ জুলাই) সকালে পত্রিকা নিয়ে বাথরুমের কমোডে বসেতো আমার বিস্ময়ের সীমা নেই। দেশের একটি প্রধান ইংরেজি ডেইলির লোয়ার ফোল্ডের পুরাটাজুড়ে বিজ্ঞাপন আর আপার ফোল্ডের পুরো ৫ কলামজুডে খবর হয়েছে মইন। এবার হরিণ শিকারীকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে না। মইনের ফেইসবুক প্রোফাইল ছবিও হরিণ শিকারের ছবির সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ৫ কলামের হেডলাইন: ‘Who is the beast?’ তার নিচে সাব-হেড ‘Brutality of Australia based Bangladeshi shocks animal lovers’।
রিপোর্ট পড়ে জানতে পারলাম- মইন একটা নিষ্ঠুর খুনি। তাদের দৃষ্টিতে সেই জানোয়ার। কারণ সে বন্যপ্রাণী হরিণ শিকার করেছে তাই নয় শুধু, সেটাকে সে জবাই করেছে। ভিডিওতে সে আমাদের আরেক ক্লাসমেট মতিনকে পোজ দিতে বলছে, তার কর্মচারিদের ছবি তুলতে বলছে, হরিণ পালার লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য মোশাররফ ভাইকে (পূর্তমন্ত্রী এবং স্থানীয় এমপি ইঞ্চিনিয়ার মোশাররফ হোসেন) ধন্যবাদ জানাচ্ছে- এসব। রিপোর্টে ভিডিওর যে বর্ণনা সেটা পড়লে যে কারও মনে হতে পারে এ যেন সিলেটে শিশু রাজন হত্যার চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা। রিপোর্টে আরও যে তথ্য রয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে- এই ফার্মের কোনও অনুমতি নেই। কারণ একজন বন কর্মকর্তা নাকি সেখানে গিয়েছেন এবং ফার্মের স্টাফরা তা দেখাতে পারেনি। আর ১৬টি হরিণকে জব্দ করেছে বন বিভাগ।
‘অবৈধ ফার্ম’ কথাটি যে ডাহা মিথ্যা এটা আমি আগেই জানি। কারণ মইনের লাইসেন্স প্রাপ্তির বৈধ প্রক্রিয়া আমার জানা আছে। কর্মকর্তারা কি আসলেই বলেছে ফার্মটির লাইসেন্স নেই নাকি রিপোর্টারে আবিষ্কার! রিপোর্টারের গাঁজার প্রতিক্রিয়া নাকি সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাদের ঈদ মওসুমে মাল কামানোর ধান্ধা- আমি নিজেই দ্বন্ধে পড়ে গেলাম। তবে ঘটনা যাই হোক আমি মইনের উপর কিছুটা মনক্ষুণ্ণ হয়েছিলাম একটি পালিত হরিণকে বন্দী অবস্থায় শিকার করার জন্য।
আশির দশকে আমাদেরও বাড়িতে আমরা একটি হরিণ পালতাম। আমার আব্বা সরকারি বন-পাহাড় লিজ নিতেন। তখন সরকার থেকে এটা লিজ নেওয়ার নিয়ম ছিল। বনে যে সব লোক গিয়ে কাঠ এবং বাঁশ নিয়ে আসতো তারা আমাদেরকে সরকার নির্ধারিত টোল দিতো। একবার এক কাঠুরে একটি হরিণ ছানা ধরে এনেছিল, সেটা তাকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল আমরা পালবো বলে।
ছোট হরিণটির নাম রাখা হয়েছিল বিউটি। সে আমাদের ঘরে ঘরে হাঁটতো। দুধ খেতো, ভাতের মাড় খেতো, ভাত খেতো। সবজি ছিল সবচেয়ে প্রিয়। সবাইকে চিনতো। এক সময় বড় হয়ে গেলে গলায় রশি পড়লো। কিন্তু তাকে কিছুতেই বেঁধে রাখা যেত না। কি প্রচণ্ড শক্তি ছিল তার বুঝাতে পারবো না। দাঁত দিয়ে আস্তে আস্তে কেটে ফেলতো রশি। তারপর দৌঁড়। অনেক দূরদূরান্তে চলে যেত। এইখানে ওইখানে দৌঁড়াদৌড়ি, আমাদের ক্ষেতের বা মানুষের ক্ষেতের সবজি খেয়ে আবার নিজের ঘরে ফিরে আসতো। প্রায় দুই বছর পর একবার বাড়ি থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে এক মাইল দূরে চিনকির হাট নামের একটা জায়গায় গিয়ে কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়। বাড়িতে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে বিউটি। দিন দিন অবস্থা খারাপ দেখলে আব্বা কাঁদতে কাঁদতে একদিন তাকে জবাই করে দেন সবার অনুরোধে। কিন্তু পালিত হরিণ বিউটির দূঃখে তিনি এক টুকরা মাংসও খাননি।
মইনের রিপোর্ট পড়ে আমার বিউটির কখা মনে পড়ে। আমি তার কথিত নৃশংসতা দেখার জন্য অনলাইনে যাই। পত্রিকাটির রিপোর্টের সঙ্গে ইউটিউবে দেওয়া ভিডিও লিঙ্ক দেওয়া আছে। দেখলাম ফার্মে উন্মুক্ত হরিণ দলকে আকৃষ্ট করতে তারা বরবটি খাওয়াচ্ছে। এরমধ্যে স্বল্পমাত্রার সাউন্ডের একটি বন্দুক দিয়ে মইন একটি হরিণকে গুলি করে। গুলির পরও হরিণগুলো সেখানে আছে। কিছুক্ষণ পর একটি মাটিতে পড়ে গেলে এবং সেটাকে ধরার জন্য ওরা এগিয়ে গেলে অন্য হরিণরাও পালায়। মইন হরিণটিকে ইসলামি কায়দায় ছুরি দিয়ে জবাই করে। ‘গুড শ্যুটার’ বলে কেউ কেউ তাকে নিয়ে ফান করে। তারা শ্যুট করার এবং জবাই করার কয়েক মিনিটের ভিডিওতে ধারণ করে। দূর থেকে তোলা। ঘটনার মধ্যে বিভৎসতার কিছু নেই। কাটার মধ্যেও না। কথিত পশুপ্রেমীদের আপসেট হওয়ার মতো কিছু পেলাম না। দেড় হাজারের বেশি লোক ভিডিওটা দেখেছে, ১৫ জন অপছন্দ করেছে। পছন্দ নেই, কোনও মন্তব্যও নেই। ভিডিও লিংক:
https://www.youtube.com/watch?v=YA2nflr088cভিডিও দেখার পর বুঝলাম গাঁজাখোরি রিপোর্টে যেটা বলা হয় এই ধরনের রিপোর্ট হয়তো তার একটা। হরিণগুলো বন্দী নয়, অনেকটা অভয়ারণ্যে রয়েছে।
এই অবস্থায় ধরা এবং শিকার সহজ নয়। আর মূল তথ্যই অসত্য। মইন ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই থানার করের হাট ইউনিয়নে তার ‘হিলসডেল মাল্টি ফার্ম’-এ বাণিজ্যিকভাবে হরিণ পালনের লাইসেন্স পেয়েছে। আমার জানা আছে বাণিজ্যিক লাইসেন্স প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে সে ১২টি হরিণ কিনেছিল রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে। প্রতিটির দাম ২৫ হাজার টাকা করে। এখন তারাই বেড়ে হয়েছে ১৮টি। আমি তার কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়ে মেইল করি। তার পাঠানো কাগজে দেখতে পাচ্ছি চলতি ২০১৫ সালের জন্যও ২৯ জানুয়ারি তার ফার্মে থাকা ১৭টি চিত্রল হরিণের বিপরীতে সে সরকারকে ১৯৫৫ টাকা ট্যাক্স দিয়েছে। এর আগের বছরও দিয়েছে। সে কাগজে স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের যেমন স্বাক্ষর রয়েছে তেমনি স্বাক্ষর করেছেন বন রক্ষক ড. তপন কুমার দে। উনিই দেশে এ সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা।
আমি একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললাম। তিনি বলেছেন, ফার্মের কর্মচারি তাৎক্ষণিকভাবে লাইসেন্স না দিতে পারায় হয়তো পুরোটাই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। তবে পত্রিকাটির পুরো রিপোর্টটাই অতিরঞ্জিত, বিকৃত তথ্যে ভরা। কারণ ওই ফার্মটি যেমন অবৈধ না তেমনি, সেখান থেকে আমরা কোনও হরিণও জব্দ করিনি। সব হরিণ ফার্মেই আছে। বাণিজ্যিক ফার্ম মানেই তিনি নিজে এই হরিণের মাংস খেতে পারবেন, হরিণ বিক্রি করতে পারবেন, এমনকি এক্সপোর্টও করতে পারবেন। তবে সব কিছুর হিসাব দিতে হবে আমাদের। একটি হরিণের জন্ম বা মৃত্যু, বিক্রি বা নিজেরা খেলেন- সবই।
জানাগেছে, দেশে এ রকম আরও ১৫টি ফার্মকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সরকার এই লাইসেন্স দিয়েছে যাতে বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধ হয়। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৭০ হাজার চিত্রল হরিণ আছে। শিকারিদের শিকারের প্রধান টার্গেট এই প্রাণীটিই।
মইন ১২ জুলাই তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছে হিলসডেল ফার্মের হরিণ পালার লাইসেন্স রয়েছে। তার ফেইসবুকের ৪ জুলাই আপলোড করা হরিণ শিকারের ভিডিওটি কারো খারাপ লাগলে তার জন্য আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা করেছে সে। অন্যদিকে, সেদিন পত্রিকাটিতে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে তাদের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে। ব্যাখ্যার সঙ্গে মইন লাইসেন্স সংক্রান্ত তার যেসব ডকুমেন্ট পাঠিয়েছে তার সব ফেইসবুকেও পোস্ট করেছে এবং পাবলিক করে রেখেছে। সেটা কেন তারা ছাপায়নি আমি জানি না। তবে পরদিন ১৩ জুলাই তারা আবার লিখেছে- মইনের বিরুদ্ধে মামলা করবে বন বিভাগ। অবশ্য, কথিত মামলার হুমকি-ধামকি সে সরকার থেকে পায়নি। পাওয়ারও কোনও রিজন নেই।
ইংরেজিতে লেখা স্ট্যাটাসটির সারসংক্ষেপ হচ্ছে- সে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান। সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সে খামারটি করেছে। যার মধ্যে এখন ১০২টি গরু, ১৮টি হরিণ, ৮০০ আম গাছ এবং ৫০০০টি কাঁঠাল গাছ আছে। ২০০৬ সাল থেকে ৩০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেছে সে খামারটি। আর তার লাইসেন্সে স্পষ্ট বলা আছে পূর্ণবয়স্ক হরিণের মাংস সে খেতে পারে। তারপরও গত ২৬ জুন দেশে এসে মাংস খাওয়ার জন্য সে যে হরিণটি শিকার করেছে তার ভিডিও ক্লিপ দেখে কেউ ব্যথিত হলে সে ক্ষমাপ্র্রার্থী। ভবিষ্যতে এমনটি আর হবে না বলেও কথা দিয়েছে। সে এটিও জানিয়েছে- অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডে ফার্মে হরিণ শিকার অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। বিস্তারিত https://www.facebook.com/moin.uddin.125/posts/1032885623420942?pnref=story
মইন আসলে বাংলাদেশের হালচাল জানে না। এই রিপোর্ট দিয়ে তাকে ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে- অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের উদাহরণ আমরা আমাদের সুবিধামতো ব্যবহার করবো। সেখানে বাণিজ্যিক ফার্মে শিকারিরা শখ করে নিজের টাকার বিনিময়ে হরিণ শিকার করে নিতে পারলেও আমাদের এখানে সম্ভব না। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আশা করবো কিন্তু বিনিয়োগকারীকে হতাশ করার সব চেষ্টা করবো। সেতো তা জানে না, এখানে এক শ্রেণির লোকজন এতো বেশি পশুপ্রেমী ভাব ধরেছে যে কুরবানীতে গরু জবাই করলেও তারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফেইসবুক ভাসিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে এটাতো মোক্ষম হাতিয়ার- বন্যপ্রাণী হরিণ শিকার। হোকনা সেটা তোমার হরিণ।
আমাদের এখানকার মানসিকতা হচ্ছে খরখোশ পালা যাবে, হত্যা করা যাবে, খাওয়াও যাবে- কোনও সমস্যা নেই কারণ ওইটা বন্যপ্রাণীও আবার গৃহপালিত প্রাণীও। কিন্তু হরিণ গৃহে পাললেও হত্যা করা যাবে না, ওইটা বন্যপ্রাণী। সরকার অনুমতি দিলেও তথাকথিত প্রেমীদের ধারণা হরিণ খাওয়া অন্যায়। হরিণ বেড়ে গেলে কি করবে ফার্মের মালিক, তুমি জানো। পারলে বনে ছেড়ে দাও। কিছু লোক বন থেকে অবৈধভাবে প্রতিদিন হরিণ মেরে খাচ্ছে, সে ঘাটতি পূরণ হবে। সেটা খেলেও তেমন খবর হবে না কিন্তু ফেইসবুকে নিজের ফার্মের হরিণ মারা ছবি দিলে গাঁজার কলকির জোরে তাকে মহান খবর হিসেবে আমরা প্রকাশ করবো। পুরো ৫ কলাম কেন, দরকার হলে ব্যাঁনার হেডলাইন দিয়ে পুরো পাতা।
লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক
[email protected]
এইচআর/আরআইপি