ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আগামী দিনের জয়ের জন্যও জমা থাকছে শুভেচ্ছা

প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ১৪ জুলাই ২০১৫

পৃথিবী খুব দ্রুত বদলায়। মানুষ বদলায় তার চেয়েও দ্রুত। কিন্তু সাংবাদিক? তারা যে আরো দ্রুত একশ’ আশি ডিগ্রি বিপরীতে অবস্থান নিচ্ছে! গত মাসে ভারতকে যখন বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজে হারালো তখন  ভারতীয় মিডিয়ায় কি তোলপাড়! কতো কিছু লেখা হলো। কতোকিছু বলা হলো। ভারতের সেই মিডিয়াও এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করছে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে দাপটে ম্যাচ জেতার পর। ‘তোমাদের দলটা কি ক্রিকেট খেলছে গো!’ মোবাইলে ওপার বাংলা থেকে এক সাংবাদিকের উচ্ছ্বাস।

অথচ ক’দিন আগেও তাঁরা ধোনির দলের মুণ্ডুপাত করেছেন কেন তারা বাংলাদেশের মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ হারালো! সেই বাংলাদেশের এখন সাউথ আফ্রিকাকে হারানো মানে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলা! আর ভারতের বিপক্ষে জেতা মানে ধোনিদের খারাপ খেলা- কোন সমীকরণে মেলাবেন এই মন্তব্যগুলোকে! অন্ধ দেশপ্রেমজাত হতাশা নাকি অন্যের হারে অন্যরকম এক পরিতৃপ্তি! হতাশা বা পরিতৃপ্তি যাই হোক ক্রিকেট বিশ্বে এখন বাংলাদেশকে নিয়ে অনেককে অনেক কিছু বলতে হচ্ছে। লিখতে হচ্ছে। আবার একটু অন্যভাবে বললে বলতে হবে, বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অন্যদের দিয়ে বলিয়ে নিচ্ছে। লিখিয়ে নিচ্ছে। এটাই আপাতত বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় সাফল্য।

সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের আপাত স্বস্তি তাঁরা এখনো মিডিয়ার উন্মাদনার শিকার হননি। যে কারণে  বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারের পরও খানিকটা নিরুদ্বিগ্ন থাকতে পেরেছেন। নিরুদ্বিগ্ন মেজাজে চট্টগ্রামে যেতে পেরেছেন সিরিজের তৃতীয ম্যাচ খেলতে। ওদের দেখে আবার ভারতীয় ক্রিকেটারদের ঈর্ষা হতে পারে ; আহ! কতো ভাগ্যবান আমলা-ডিকক-ডুমিনি-ডুপ্লিসি-রা!

হ্যা, আপাত ভাগ্যবান বলতে পারেন সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের। কিন্তু তাঁদেরও দুর্ভাগ্যের ইতিহাসতো কম লম্বা নয়। কতো ম্যাচে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন তারা। কতো ম্যাচে বৃষ্টি কফিনবন্দী করেছে তাদের স্বপ্নকে! বিশ্বকাপের মতো আসরে বৃষ্টির কারাগারে বন্দী হয়েছে বহুবার সাউথ আফ্রিকানদের ভাগ্য! তা নিয়েও সেদেশে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। সেই চাপান-উতারের শিকার হয়ে অধিনায়কত্ব হারাতে হয়েছিল শন পোলককে। সেখানেই থেমে ছিল না সেদেশে ক্রিকেটারদের নিয়ে সমালোচনা। ২০০৩ এর বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর সে দেশের ক্রিকেটাররা বাধ্য হয়েছিলেন অদ্ভুত একটা বিজ্ঞাপন সেদেশের কাগজে দিতে। পাতাজোড়া সেই বিজ্ঞাপনে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে একটা আবেদন রাখা হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোনো ক্রিকেট টিমকে এভাবে বিজ্ঞাপন দিতে হয়েছে বলে জানা নেই। আর সেই বিজ্ঞাপনে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের তরফ থেকে বলা হয়েছিল; ‘ভাগ্য সব সময় অনিশ্চিত হতে পারে। কিন্তু আমরা জানি আপনাদের সমর্থনের ওপর  আমরা ভরসা রাখতে  পারি। কঠিন সময়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সামনে যে সব জয় অপেক্ষা করছে তার জন্য শুভেচ্ছা চেয়ে রাখছি।’

আমলা-ডুমিনি-মিলার-ডুপ্লিসি-রা সেই সাউথ আফ্রিকান টিমের উত্তরসূরি। তারা জানেন পৃথিবী বদলে যেতে বেশি সময় লাগে না। তাই  ওরা নিজেদের বদলাতেও খুব বেশি সময় হয়তো নেবে না। বাংলাদেশ দলের উচিৎ হবে সেটা মনে রাখা। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে দুটো দলই তাই খুব চাপে আছে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখে খেলতে নামছে। আর সাউথ আফ্রিকা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয় আর হারের সমান সম্ভাবনা নিয়ে তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামছে। টেনশনের জমাট বাধা মেঘ দুটো দলের ভাগ্যাকাশেই!

সাগরিকায় বুধবার যেন বৃষ্টি না হয়, সেই প্রার্থনা  গোটা দেশ জুড়ে।বৃষ্টিতে ভেসে যাক এরকম রোমাঞ্চকর  সিরিজের শেষ ম্যাচটা তা চাইচ্ছে না কেউ-ই। তবে আগাম একটা জিনিস চেয়ে রাখতে পারে বাংলাদেশ দল। তা হচ্ছে ভাগ্যের সহায়তা। ক্রিকেটে ভাগ্যের ছোঁয়া একটু লাগে। ভাগ্য যেন বিশ্বাসঘাতকতা না করে বাংলাদেশের সাথে। আর আত্মতুষ্টি যেন ভর  না করে দলের মধ্যে। এই আত্মতুষ্টি আর বাড়তি আত্মবিশ্বাস অনেককে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে। নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন অনেকে। দলকে চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। সেরকম অবস্থায় যেন পড়তে না হয় বাংলাদেশকে।

আবার অগ্রিম দোয়া চেয়ে রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশের দর্শকদের জন্যও। তারা যেন হঠাৎ করে ধৈর্য্যহারা হয়ে  না যান! সব ম্যাচ বাংলাদেশ জিতবেই এমনটা আশা করাও ঠিক না। খেলাটা ক্রিকেট। দুটো দল জিতবে না। একটা দলই জিতবে। সেই জয়ী দলটার নাম হোক বাংলাদেশ, বুধবারের ম্যাচের আগে সেটা এদেশের মানুষের চাওয়া। কিন্তু না হলে সব শেষ, তেমনটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ ভাল ক্রিকেট খেলছে। এটাও অনেক বড় পাওয়া। বছর আটেক আগে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের কাগজে দেয়া সেই বিজ্ঞাপন থেকে কিছু শব্দ ধার করে নিয়ে লিখছি;‘ চট্টগ্রামে যদি বাংলাদেশ নাও জিততে পারে হতাশ হবেন না। আগামীতে আরো অনেক বিজয় অপেক্ষা করছে। তারজন্য শুভেচ্ছা জমা রাখুন।’

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘ইনজুরি টাইম’ ‘এক্সট্রা টাইম’ ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। তিনি কাজ করেছেন দেশের নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে, টেলিভিশন এবং দেশি-বিদেশি রেডিওতে।

এইচআর/আরআই