কে ঠকবে আগামী নির্বাচনে?
লক্ষণ ভালো। আগামী নির্বাচনে হারার শঙ্কা নেই কারোই। বড় জয়ের আশা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি এবং সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টিরও। এরইমধ্যে রংপুর সিটি নির্বাচনে সবাই জিতেছেও যার যার মতো। ভোটের যোগফলে সেখানে মেয়র হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের প্রার্থী মোস্তফা। এরশাদের আশা আগামী সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে তার দল এভাবেই বাজিমাৎ করবে। তার আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে ক্ষমতার মিতালি করতে হবে না। একাই আবার গদিমাত করবেন তিনি।
বড় দুই দলকে মানুষ আর চায় না। তার জন্যই উম্মুখ-অপেক্ষমান গোটা জাতি। রংপুরের নির্বাচনের পর এরশাদের কাছাকাছি প্রতিক্রিয়া আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতি নবগঠিত যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীরও। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির জনপ্রিয়তা তলানিতে চলে গেছে। সেইক্ষেত্রে উপচে পড়ছে তার নিজের না এরশাদের জনপ্রিয়তা? সেটা পরিস্কার করেননি বি. চৌধুরী।
রংপুরে মিলিয়েঝিলিয়ে সবাই জিতেছেন। মেয়রের চেয়ারে বসেছেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। জোরাজোরি না করে পার্টনারশিপে জয়ী সরকার। গেলবারের চেয়ে বেশি ভোটের ঢেঁকুরে বিজয়ী বিএনপি। আর পরীক্ষায় পাস নির্বাচন কমিশন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে রংপুর বা কোনো স্থানীয় নির্বাচনের তুলনা মানায় না। জাতীয় নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ একেবারেই আলাদা। সেই আলাদা হিসাবেও আশাবাদী বড় দুদলই। প্রধানমন্ত্রী কনফিডেন্সের সঙ্গে বলেছেন, বিএনপি আর কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বাংলার মানুষ আবারও তার দিকেই মুখিয়ে আছে।
প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও উপদেষ্টা সেই সম্ভাবনার খবর দিয়েছেন ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে। জানিয়েছেন, তার দল আগামীতে আরও বেশি ভোটে ফের মসনদে বসবে। গত ১১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের আবার বিপুল ভোটে বিজয়ের শুভসংবাদটি দেন। দলের নাম্বার ওয়ান না হলেও সেদিন মা শেখ হাসিনার দেশে অনুপস্থিত অবস্থায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকে নিয়ে বৈঠক করেন নাম্বার ওয়ান স্টিয়ারিংয়ে বসেই। পরে সংবাদ সম্মেলনে নিজস্ব আয়োজনে জনমত জরিপে তা নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানান। আরেকটা সুখবর জানাতে আমি এসেছি উল্লেখ করে বলেন, দলকে জানাতে চাই আমার জরিপের রেজাল্ট বলছে, আজ নির্বাচন হলেও আগের চেয়ে বেশি ভোট পাবে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের চেয়েও বিপুল বিজয় আসবে।
বিজয়ের আগাম তথ্য রাখে বিএনপিও। দলের চেয়ারপারসন বলেছেন, ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে জনগণ আওয়ামী লীগকে চিরতরে ছুঁড়ে ফেলবে। ক্ষমতার অলি-গলি চেনা বিএনপির হেভিওয়েট নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আগামী নির্বাচন ৫০% নিরপেক্ষ হলেও বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসবে। মওদুদের চেয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উচ্চাশার পারদ আরো তুঙ্গে। দলের একটি টিম অবিরত প্রচার করছে, নানান জরিপের তথ্য। তাদের তথ্যের সারকথা হচ্ছে, আগামীতে আওয়ামী লীগের ২০/২২টি আসন পাওয়াও কঠিন হবে। কারণ, সব জনগণ বিএনপির জন্য অপেক্ষমান। আওয়ামী লীগের পক্ষে এবার ভারতও গেলবারের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে না।
তো কেউ কারো চেয়ে কম নন। আগামীতে তারা সবাই জিতবেন। পরাজয়ের গ্লানি তবে তাদের কাউকেই স্পর্শ করবে না। কিন্তু কোন ভরসায়? কোন পুঞ্জিতে? কোন ম্যাজিকে তারা জিতবেন সবাই? তবে, ঠকবেটা কে? বিরোধীদল কী ফাঁকাই থেকে যাবে? এসব প্রশ্নের জবাব কঠিন। আবার সহজও। গোটা দেশের জনগণ যখন কাউকে চায় তখন তার নিশ্চিৎ জয়ই স্বাভাবিক। এ নিয়ে বিতর্ক না করে, কারো দোষ-ত্রুটি, বদনাম টোকাটুকি না করে সম্ভাব্য জয়ের কারণগুলো দেখাই ভালো।
বিএনপির আগামীতে জয়ের অনেক কারণই রয়েছে। দলটি আগামীতে কতো ভোটে জিতবে, অংক কষে শেষ করার মতো নয়। মানুষ তাদের মেজবানির জন্য উতলা। তাই ভোট ভিক্ষাও করতে হবে না তাদের। তারা বড় গণতন্ত্রী। কখনো কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে না। আর আগুন, পেট্রল বোমার ধারেকাছেও তারা যায়নি। এগুলো আওয়ামী লীগ করে বদনাম দিয়েছে বিএনপির নীরিহ কর্মীদের ওপর। নিয়ম করে দৈনিক পিটিয়েছে জিয়ার সৈনিকদের। এতে বিএনপির প্রতি মানুষের মায়া ও খাস মহব্বত জন্মেছে। তাই ভোটই চাইতে হবে না তাদের। প্রার্থী হওয়া লাগবে না। মানুষই চারহাতে ভোট দিয়ে তাদের জিতিয়ে পার্লামেন্টে নিয়ে যাবে দুলহার নমতো।
এছাড়া বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি, জালিয়াতি, বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। সরকারসহ কিছু মিডিয়া বিএনপির প্রতি জেলাসিতে এসব আজগুবি অভিযোগ পয়দা করেছে। এছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা ভীষণ সংগঠিত। নানা যৌক্তিক ইস্যুতে রাজপথ কাঁপিয়ে ফেলে তারা। দলটির নেত্রী অত্যন্ত পরহেজগার। সেই ভোরে ওঠে এবাদত-বন্দেগি সেরেই সাংগঠনিক কাজে নেমে পড়েন। গোটা জাতির জন্য পানাহ-শাপাহ চান। নেতাকর্মীরা চাইলেই তার কাছে চলে যেতে পারে। বুদ্ধি-পরামর্শ শেয়ার করেন।
দলের অন্যতম কাণ্ডারি তারেক রহমান লন্ডনে হিজরতে আছেন। মাঝেমধ্যে সেখান থেকে মক্কা-মদিনাও যান। কতো নেক হাছিল! শুধু দেশের জন্য, দলের জন্য। তার ক্ষমতাকাল কতো সাফল্যে টইটুম্বুর। দুর্নীতি, ক্ষমতাবাজি থেকে শতভাগ দূরে থেকেছেন তিনি। এখনো কতো ভক্ত-সাহাবা তার। তারাও ভীষণ ছহিশুদ্ধ, ঈমানদার। ঘরের কোনো খবরই তারা বাইরে ফাঁস করেন না। আর ধান্ধাবাজি তো করেনই না। অনেক অর্থকষ্টে ছিদ্দতে আছেন তারা। ক্ষমতাকালে কোনো কামাই-রোজগার না করায় এখন এই কষ্ট। অভাবের চোটে অনেকে রোজাও রাখেন। এমন মজলুমদের তো স্বয়ং আল্লাহপাকও মদদ করবেন। এমন ধৈর্য্যশীলরা আল্লাহর নৈকট্য পান। আল্লাহ নিজ জবানিতেই বলেছেন, তিনি ধৈর্যশীলদের ভীষণ পছন্দ করেন। আর পুরস্কার বা এনাম দেন ভায়া মারফতে নয়। একেবারে নিজ হাতে। ডাইরেক্ট, ওয়ান স্টপ সার্ভিসে। এমন একটি দল ৫০% নিরপেক্ষ নির্বাচনেও ১০০% জয়ী না হয়ে পারে না। তাই গোল্ডেন জিপিএ মার্কসে ক্ষমতা এখন তাদের নাকের ডগায় নড়েচড়ে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ জয়ের বাজিমাত ঘটাবে উন্নয়নের তোড়ে। গত পৌনে এক যুগে তারা দেশকে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। সাথে নিশ্চিত করেছে সুশাসন। এতে দেশের সবাই মুগ্ধ-বিমুগ্ধ। সমালোচনা করে কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষ। যারা বিএনপি-জামায়াত, আইএস, স্বাধীনতাবিরোধী। পাকিস্তানের আস্ত দালাল। গত কয়েকবছর দেশে গুম-খুন বলতে কিচ্ছু নেই। এ নিয়ে কিছু মিডিয়া ও ব্যক্তি বিশেষ মিথ্যা রটায়। গুম-খুন বিএনপির লোকেরাই বিদেশে বসে নিয়ন্ত্রণ করে। আর গুমের আওয়াজ দিয়ে কিছু বাজে লোক আসলে ঘুমায়। সরকারের ইমেজ নষ্ট করাই এদের মতলব।
বিএনপির ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ুন কবীর পারভেজরা আসলে গুম হননি। কোথাও লুকিয়ে তামাশা করছেন সরকারের সুনাম নষ্টের মতলবে। দেশে বিরাজ করছে মিষ্টিমধূর গণতন্ত্র । মানুষের ভোটাধিকার স্মরণকালের সেরা পজিশনে। বিরোধী দলগুলো অভূতপূর্ব স্বাধীনতায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। কোথাও কোনো বাধা নেই। ধরপাকড়ের ছিটাফোঁটাও নেই। জেলখানাগুলো শূন্য। সেখানে গড়াগড়ি করে কিছু চোর-চেচ্চর, জঙ্গি, বোগাস কিছিমের আদম। আর দুর্নীতি-লুটপাটের কোনো নামগন্ধও নেই।
বিদেশে টাকা পাচার? বাংলঅদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরি? ব্যাংকগুলোর অবস্থা জব্বর ভালো। বাংলাদেশ ব্যাংকে কোন ডাকাতি হয়নি। আওয়ামী দখলবাজরা কেউ ব্যাংকের টাকা মেরে খাচ্ছে না, কারো সম্পদের পাই পয়সাও টাচ করছে না। এগুলো একদম মিথ্যা কথা। বিএনপি-জামায়াতের প্রপাগান্ডা। হচ্ছে কিছু টুকটাক লেনদেন, ট্রানজেকশন। শেয়ার বাজার, ডেসটিনি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের হাজার কোটি টাকার লুটপাট একদম অপপ্রচার। উন্নয়ন বিরোধী রাবিশদের বাকাওয়াজি।
এমপি-মন্ত্রী, নেতা ও তাদের স্বজনদের দিনাতিপাত খোলাফায়ে রাশেদিনদের মতো সাদামাটা। কোথাও চাঁদাবাজি ঠেকবাজির লেশমাত্র নেই। এরপরও যারা এ নিয়ে কথা বলে ওরা আস্ত মিথ্যুক। আর নারী নির্যাতন? কোথাও নেই। তনু-মিতু হত্যা বানোয়াট গল্প। কুমিল্লায় তনুকে ভাল্লুকে খামছে মরহুম করেছে। খাদিজাকে ছাত্রলীগের বদরুলে কোপায়নি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ বড় পরহেজগার। এই লীগকুলের কেউ ধর্ষণ করে না। বগুড়ার তুফান বড় ভালো ছেলে। সোনার টুকরা। আর দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়েছে স্বর্গসুখে। রামু, নাসিরনগর, অভয়নগর, সাথিয়া, গোবিন্দগঞ্জ, পিরোজপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি- ঘরে, মন্দিরে আগুন কেন, কেউ একটা ফুলের টোকাও দেয়নি।
বিশ্বজিতকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে মারেনি। ওই ব্যাটা ছিল শিবির। একটা কাহিনী করে মরে ছাত্রলীগকে ঝামেলায় ফেলেছে। সংখ্যালঘুদের কয়েকটা সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে দোস্তালী করে সরকারের বিরুদ্ধে প্যাজগি লাগাতে পেরেছে। কিন্তু পারেনি। বাজার পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। দ্রব্যমূল্য মানুষের আয়ত্বে। মুরগির দাম পেঁয়াজের চেয়েও কম। দশ টাকা সের চাল, পাঁচ টাকা সের কাঁচা মরিচ খাওয়ার পরও শুকরিয়া নেই আদমদের। এরা নেমক হারাম।
সাংবাদিকরা তো সাংঘাতিক রকমের স্বাধীন। কোন সংবাদ মাধ্যম বন্ধ করা হয়নি। কয়েকটি পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল নিজেরাই বন্ধ করে সরকারকে বদনামে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে। পারেনি। নিজেরাই এখন পস্তাচ্ছে। দেশে মানবাধিকার পরিস্থি তো বিশ্বে রোড মডেল। এরপরও এ নিয়ে কিছু লোক বেহুদা রাস্তায় ফালাফালি করে। সরকারকে বদনামে ফেলতে চায়। কিন্তু পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ঠেঙ্গায় না। কোলে তুলে মেহমানখানা বা আমানে আছানে বাড়িতে পাঠিয়ে বিশ্রামর এন্তেজাম করে দেয়।
উন্নয়নের জোয়ারে ভাসাতে গিয়ে মাঝে মাঝে মাঝারি বৃষ্টিতে তিলোত্তমা নগরীতে নদীর স্বাদ দেয়। ইটপাথর-পোড়া মাটির রাজধানীতে প্রকৃতির স্বাদ দেয়। কিছু অকৃতজ্ঞ লোক এ খামাখা চিল্লায়। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা নিয়ে প্যাঁচাল পাড়ে। একবারও ভাবে না গোলাপ তুলতে গেলে একটুআধটু কাঁটার আঘাত সইতে হয়। সন্তানের মুখ দেখতে গেলে প্রসব বেদনা সইতে রাজি না এই ফুলবাবুরা। এমন অশেষ নেয়ামতে মানুষ কেন ভুতেও দুই হাতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। পাটিগণিতের নিয়মেই আওয়ামী লীগের ভোট এবং সিট আগামীতে বাড়বেই।
আর এরশাদের তো এবার আর কারো লেজ ধরে ক্ষমতার শরীকানা হাতড়ানো না-ও লাগতে পারে। আওয়ামী লীগ তাকে হারাতে চায় না। বিএনপিও চায় কাছে পেতে। বড় দুদল কাউকে চাইলে তার তো আর কাউকে লাগে না। তাই আগামীতে ক্ষমতার আরও বেশি হিস্যা এবং মুরদে কুলালে একাই পুরা ক্ষমতা কব্জার আশা তিনি করতেই পারেন। টানা নয় বছর দেশ শাসনের অভিজ্ঞতা তার। তার হাতে কোনো রক্তের দাগ নেই। বিনা রক্তারক্তিতে শান্তির বারতা নিয়ে তিনি ৮২-তে ক্ষমতায় আসেন।
বিএনপির জাস্টিস সাত্তার সরকার আর দেশ চালাতে না পেরে তাকে ক্ষমতা নিয়ে দেশ উদ্ধারের আবদার করায় করায় প্রিয় দেশবাসীকে আচ্ছালামু আলাইকুম বলে নাজিল হয়েছেন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের অনেকে এতে খুশি হয়েছেন। তার মন্ত্রী হয়েছেন। স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীও খুশি হয়েছেন। বলেছেন, আই এম নট আনহ্যাপি। সেই এরশাদ রাজনীতির ময়দানে এখনো হ্যাপি আইটেম। সেই বিবেচনায় ক্ষমতা তো তারই হক। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা একদিনে তিনচার রকম কথা বলে হাসির আইটেম হলেই বা কি? এটা তার সৌন্দর্য্যও বটে। এই সার্কাসে মানুষকে তিনি নিয়মিত বিনোদন দিয়ে একটা বিশেষ জায়গা করেছেন।
নিয়মিত বলছেন, তার সামনে সুদিন অপেক্ষা করছে। বাংলার মানুষের চরিত্র-বৈশিষ্ট তিনি বুঝে ফেলেছেন। নব্বইতে কেসটা ঠিক মতো বুঝলে ক্ষমতাটা ছাড়তে হয় না। সেই কনফিডেন্স থেকে রমনে করেন গোটা দেশের মানুষ তার জন্য নফল ইবাদত করে। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র এরশাদই সেরা একজন দলীয় প্রধান, যিনি এখনো নিজের গড়া দলের আলোতে আলোকিত। বাপ বা দাদার নামে রাজনীতি করতে হয় না তাকে। নিজেকে মার্কোস, পিনেশোর, আইয়ুব খান, পারভেজ মোশারফ, গাদ্দাফি, হোসনে মোবারক, সাদ্দাম হোসেনের লেভেলে ভাবেন নিজেকে। তাই তো সাহস করে বলে যাচ্ছেন আই অ্যাম দ্য জাতীয় পার্টি। তাই তারা অপেক্ষায়, কবে আবার গদিনশীল হবেন এই পতিত রাষ্ট্রপতি?
আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ জামায়াতি-বামাতিরা মিলে স্বৈরাচার কলঙ্ক দিয়ে এই বেগুনাহগার-মাসুম লোকটারে গদিহারা করেছে। তারা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে কিসের স্বৈরাচার তিনি। আম- জলপাই-তেঁতুলের আচারের চেয়েও বেশি স্বাদ এরশাদের। নইলে নির্বাচনে প্রার্থী না হয়েও কিভাবে তিনি এমপি হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে উজির মর্যাদা দিয়ে বিশেষ দূত করেন? এখানে শেষমেষ আচারের ভাগে না মিললে খালেদাও তাকে কাছে নিতে আগাম পয়গাম দিয়ে রেখেছেন তাকে। এ রকম স্বাদযুক্ত আচার তো একাই আগামীতে মসনদে যাবেন-তা বুঝতে কি জিনাত, মেরি, নীলা, রাজিয়া, সবিতা, সালসাবিল, নাশিদ, শাকিলা বা বিদিশাদের মতো দুনিয়াবি হুর লাগে?
রংপুরের মফিজ, কুমিল্লার আবুল, পাবনার হেমায়েত, নেত্রকোনার মদনরাও তা ভালো মতো জানে। বোঝে। মানেও। এরপরও তার সন্দেহ আওয়ামী লীগ সরকার আগামীতে তাকে গেলবারের মতো গুরুত্ব না-ও দিতে পারে। কিন্তু এ রকম সময়েই প্রকাশ্য সভায় এরশাদের প্রশংসা এসেছে বিএনপি থেকে। তা-ও স্বয়ং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে। তার ওপর স্বৈরাচার পতন দিবস ৬ ডিসেম্বরে। এরশাদের জন্য তা পুলকের। এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, তার স্ত্রী সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। মন্ত্রিসভায় আছেন জাতীয় পার্টির তিন সদস্য। ক্ষমতার পিঠাভাগ করতে গিয়ে বিএনপিও ভবিষ্যতে তেমন কিছু করবে কি-না?–এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। নাথিং ইজ ইমপসিবল।
গোটা ব্যাপারটা এরশাদের জন্য পুলকের। আশা জাগানিয়া। এরমাঝেই যোগ হলো রংপুর টনিক। এর ভাগ এরশাদের ভাণ্ডে বেশি জুটলেও অন্যদের পাত একেবারে খালি থাকেনি। আশাবাদে মত্ত থাকা সবার জন্যই ভালো। দেশের জন্য আরো ভালো। পরাজয় আতঙ্কে না ভুগে সবাই জয়ের আশায় মত্ত থাকলে শব্দদূষণ হবে। তবে, রাজনীতিতে বায়ুদূষণটা কমতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক; বাংলাভিশন।
এইচআর/আইআই