ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

জীবনের মূল্যে কাপড়!

প্রকাশিত: ০৬:৪২ এএম, ১২ জুলাই ২০১৫

সকালে ঘুম থেকে জেগে দুঃসংবাদ শুনতে কার ভালো লাগে? সকাল শুরু হবে নরম রোদের মতো, সবুজ ঘাসে শিশিরের হালকা চাদরে ঢাকা, এটাই সবাই চায়। তাই অনেকেই দিন শুরু করে শুভ প্রার্থনায়, কেউ কেউ সুন্দর সংগীতে। ভালো আশা, মনোরম শব্দাবলি, হৃদয় ছোঁয়া সুর দিনকে করবে সাবলীল, মনমতো –এটাই বোধ করি অধিকাংশ মানুষের কামনা। তাই সকালে ভালো কিছু জানতে চায়, মন। যদিও বাস্তবতা কখনো কখনো বেশ আলাদা হয়। নিজেকে মন খারাপ করা সংবাদ জানতে হয়, দেশের অসংখ্য মানুষকে তা জানাতেও হয়। এমনি একটি ঘটনা হলো সম্প্রতি ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় পেতে  পদদলিত হয়ে ২৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর।

একটা শাড়ি কিংবা লুঙ্গি কিংবা দুই চারশ টাকা জীবনের চেয়ে দামি হয়ে গেলে মন ভালো করার যুক্তি কমে যায়। পাঁচশ লোককে জাকাত দেওয়া, ধরে নেই উপহার দেওয়া, একটা উৎসব হতে পারতো। অথচ হলো, মৃত্যুর মিছিল। নতুন জামা পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর চোখ পদদলিত হয়ে শীতল হলো, মানা যায় ? এই অবমাননাকর মৃত্যু, মানা যায়?

জাকাত পেতে পদদলিত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম না। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ১৯৮০ সালে ঢাকার জুরাইনে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ১৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৮৩ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জাকাতের টাকা নিতে গিয়ে ভিড়ের চাপে পড়ে ৩ শিশু মারা যায়। ১৯৮৯ সালের ৫ মে চাঁদপুরে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত মারা যায় ১৪ জন। এসময় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। জাকাত নিতে গিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রামে। ১৯৯০ সালের ২৬ এপ্রিল পাহাড়তলীর আবুল বিড়ি ফ্যাক্টরিতে জাকাত নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৩৫ জন নিহত হয়। এসময় আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ।

গত বছরের ২৫ জুলাই রমজানের ঈদের দুইদিন আগে মানিকগঞ্জের গার্লস স্কুল রোডে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে জাকাত প্রদানের সময় পদদলিত হয়ে জামেলা খাতুন ও হাসনা বেগম নামে দুই হতদরিদ্র নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। একই দিন বরিশালের কাঠপট্টি এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে জাকাত প্রদানের সময় হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে ফিরোজা ও নুপুর নামে দুই নারীর মৃত্যু হয়। (তথ্য ইত্তেফাক)

তারপরো কেন সচেতন হয় না, লোকগুলো। যারা জাকাত পেতে যায়, তারা কি শেষ সম্বল পেতে যায়?এতো গরীব তারা? না খেয়ে থাকে? কাপড় ছাড়াই থাকে? প্রশ্ন হলো তারা কি এতোটাই গরীব যে, একটা শাড়ির জন্য মরে যেতে পারে? মনে রাখতে হবে জাকাত হিসাবে খাবার দেওয়া হয় না। কাজেই পদদলনে মারা যাওয়া মানুষগুলো, খেতে না পাওয়া মানুষ নয়। কাপড়ের অভাবে সম্মান যায়, জীবন যায় না। কাজেই অভাবে জীবন বিপন্ন কোনো জনগোষ্ঠির খোঁজ এই হতাহতের ঘটনায় আমরা পাইনি। যা পেয়েছি তা হলো অব্যবস্থাপনার এক হৃদয়বিদারক উদাহরণ। আরেক ভাবে দেখলে ধনী এবং গরীবের মধ্যকার বেড়ে চলা বৈষম্যেরও প্রদর্শন।

অবাক করা ব্যাপার, ১৯৯০ সালে আবুল বিড়ি ফ্যাক্টরিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলো। এবার ময়মনসিংহের নুরানী জর্দা কারখানায় ঘটলো একই ট্র্যাজেডি। ঘটনা বিস্ময়কর।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশসূত্র মতে, প্রতি বছরের মতো এবারও জাতাকের কাপড় নেয়ার জন্য শুক্রবার (১০ জুলাই) মধ্যরাত থেকেই ময়মনসিংহ পৌরসভার সামনে অতুল চক্রবর্তী রোডে নুরানি জর্দা ফ্যাক্টরির মালিক মোহাম্মদ শামীমের বাসার সামনে শহর ও বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক শিশু, নারী ও পুরুষ ভিড় করে। ফজরের নামাজের পর বাসার ছোট গেইটটি খোলার সাথে সাথেই উপস্থিত জাকাত প্রত্যাশিরা একযোগে বাসার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এ সময় তাদেরকে নিবৃত্ত করতে বাসার ভেতরে ফ্যাক্টরির কর্মচারিরা ব্যাপক লাঠিপেটা করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বল্প জায়গায় একজন আরেকজনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবং ধাক্কা সামলাতে না পেরে শিশু ও বয়স্ক নারীরা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পদদলিত হতে থাকে। এদেরকে উদ্ধার করতে গিয়ে অনেকের স্বজনরাও পদদলিত হন। এভাবেই ঘটনাস্থলে কয়েকজনের মৃত্যু ও অর্ধশত নারী আহত হন।

হুড়োহুড়ি, লাঠিপেটা এসব জাকাতের মতো একটি বিষয়ের সঙ্গে যায় না। এখানে আইন ভঙ্গের অনেক ঘটনা আছে। আমরা জানি এরইমধ্যে আইন নিজস্ব গতিতে চলতে শুরু করেছে। হয়েছে তদন্ত কমিটি, কীভাবে জাকাত দেওয়া যাবে তারও নানা পদ্ধতিও এখন সামনে আসবে। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন লেখালেখি হবে তুমুল। এই যেমন আমি লিখছি। কিন্তু এসব সফল হলো কী ব্যর্থ হলো তা বোঝা যাবে আগামি বছর। আগামিতে যদি এমন পদদলনের ঘটনা না হয় তবেই এসব সফল হলো ভাবা যাবে।

তদন্ত কমিটি বিষয়ে দুয়েক লাইন না বললেই নয়। অভিযোগ আছে অনেক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। আলোর মুখ দেখলেও সুপারিশ মানা হয় না।

এবারের ঘটনা সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির হাহাকারের চিত্র। আমরা আশা করবো তাদের হাহাকার আরেকটু বাড়িয়ে দেবে না প্রশাসন। সাজা পাবে দোষীরা।    

যাহোক, মাটিতে মরদেহ পড়ে থাকার ফুটেজ দেখে করোটির ভেতর কেমন কেমন লাগে। নরম সকাল বিবর্ণ হয়, বিষন্ন হয়। এ কেমন আচরণ? আমরা কি স্মার্টভাবে কিছুই করতে পারবো না?

sadi

এইচআর/পিআর