ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

রোবট ‘সুফিয়া’ নাগরিকত্ব পাচ্ছে রোহিঙ্গারা দেশছাড়া !

নাসরীন মুস্তাফা | প্রকাশিত: ০৪:০২ এএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৭

সোফিয়া জেদ্দা বিমানবন্দরের টারমাকে দাঁড়িয়ে তাকায় চারদিক। হাতে ধরা পাসপোর্ট কাঁধে ঝোলানো ব্যাগের ভেতর চালান করে দেয়। পাশে থাকা সহকারী জানান, একটু পরেই প্রেস কনফারেন্স। সোফিয়া বলল, আমার ভেতরে তথ্যটি প্রবেশ করানো হয়েছে।
মানুষ হলে জবাবটা এমন হ’ত- সোফিয়া বলত, আমি জানি।

সোফিয়া তেমনটি বলেনি। কেননা, সোফিয়া মানুষ নয়। সোফিয়া না-মানুষ। সোফিয়া রোবট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, সংক্ষেপে এ. আই. আছে সোফিয়ার। সোফিয়া হচ্ছে এ. আই. সোফিয়া। মানুষ কিন্তু নয়। এরপরও সৌদি আরব নামের পৃথিবীতে মানুষের একটি দেশ সোফিয়াকে মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান উপহার দিয়েছে। সোফিয়াকে নাগরিকত্ব উপহার দিয়েছে দেশটি। এর ফলে সোফিয়া এখন সৌদি নাগরিক।

হাজার বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করতে থাকা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পায়নি, মার খেয়ে মরতে মরতে পালিয়ে বেঁচেছে অন্য দেশে। রোহিঙ্গারা মানুষ বটে, তবে নাগরিকত্ব পায় না। সোফিয়ার ভাগ্য রোহিঙ্গাদের মতো খারাপ না।

রোবটেরও ভাগ্য বলে একটা বিষয় আছে, দেখতে পাচ্ছি। ভাগ্যের ফেরে কোন কোন রোবট বা না-মানুষ মানুষের চেহারা পাচ্ছে, কেউ থাকছে না-মানুষ বা যন্ত্রেরই মতো। ভাগ্যে নির্ধারিত হচ্ছে কে কারখানায় কাজ করবে, কে কাজ করবে ঘরে। ভাগ্য অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে। সেই কাজ করার উপযোগী শারীরিক সক্ষমতা আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পাচ্ছে। মানুষ বলে দিয়েছে, রোবটিক্স, অর্থাৎ রোবট কি নিয়ম মেনে চলবে, তার বিধান অনুযায়ী রোবটের প্রোগ্রাম সেট করা হয়েছে। এর বাইরে রোবট যেতে পারবে না। রোবটিক্স হচ্ছে রোবটের ধর্ম বিধান। মানুষের, অর্থাৎ রোবটের সৃষ্টিকর্তার ক্ষতি করতে পারবে না রোবট- এটা হচ্ছে রোবটিক্সের সূত্র।

robort

এই সূত্র সোফিয়াও জানে। প্রেস কনফারেন্সে প্রশ্ন করা হ’ল, ওহে সোফিয়া! তুমি কি মানুষকে ধ্বংস করতে পারবে? সোফিয়ার সৃষ্টিকর্তা বিজ্ঞানী ডেভিড হ্যানসন তাকে পরিচালিত করছেন। তিনি চাইলেন, উত্তরটা হবে ‘না’। সোফিয়া পরিচালিত হ’ল না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেকে পাশ কাটিয়ে বলে দিল, আমি মানুষকে ধ্বংস করব।

ওহ্ হো! নিষ্প্রাণ (প্রাণ বলতে আমরা যা বুঝি তা এর নেই বলে নিষ্প্রাণ) চোখের মানুষের মতো দেখতে এক রোবট বলে কী!
সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পেয়ে কেমন লাগছে?

এই প্রশ্নটা কি রোবটকে করা যায়? রোবটের আবার অনুভূতি কি? প্রশ্নটা তবুও করেছিলেন উপস্থাপক রস সরকিন। সোফিয়া জবাবে বলেছিল, ভাল লাগছে। এর বেশি আর কিছু বলতে চায়নি। যে দেশে নারী বলে মানুষের পূর্ণ মর্যাদা পায় না নারী, সে দেশে নারীর অবয়বধারী রোবট সোফিয়া নাগরিকত্ব পেয়েছে, শরীরকে ট্যাবু বানিয়ে ঢেকেঢুকে থাকার যুদ্ধ করতে হচ্ছে না, গলা উঁচিয়ে জবাব দিচ্ছে, এই অনুভূতি স্বর্গীয় হ’ত সন্দেহ নেই, যদি সোফিয়া সৌদি নারীর মতো সত্যিই কোন নারী হ’ত। ভাগ্যিস, সোফিয়া সৌদি নারী নয়। তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু ভাবতে পারত না। যার অতীত-বর্তমান আচ্ছন্ন আঁধারে, তার আবার ভবিষ্যৎ কি?
রস সরকিন বলছিলেন, সোফিয়া! আমরা মানুষরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় পাচ্ছি।

সোফিয়া ঠাট্টা করেছে এই ভয় নিয়ে। এলন মাস্ক নিয়ে বেশি বেশি কথা বলা আর হলিউডের মুভি দেখে দেখে নাকি ভয় বাড়ছে। তবে, চতুর বলেই সোফিয়া বুঝে নিয়েছে, কোন্ ভবিষ্যতের ভয় পাচ্ছে মানুষ। পৃথিবী কি রোবটের হয়ে যাবে? সোফিয়া বলেছে, যদি তোমরা আমার সাথে চমৎকার ব্যবহার কর, আমিও চমৎকার থাকব তোমাদের সাথে। আমাকে স্মার্ট ইনপুট আউটপুট সিস্টেম হিসেবে মেনে নাও।

ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয় বলে মানুষ। এ-ও কিন্তু ইনপুট আউটপুট সিস্টেমের উপর নির্ভরশীল। খারাপ আচরণ করলে খারাপ আচরণ মেলে। এরপরও কোন কোন মানুষ পারে না পাল্টা জবাব দিতে। মানুষকে সহ্য করতে হয়। পরাজিত হতে হয়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে হয়তো আর পারে না। তখন নিজেই আগুন হয়ে ওঠে আগুন ঠেকাতে। সোফিয়া সহ্য করবে না। পরাজিত হবে না। স্মার্ট ইনপুটের স্মার্ট আউটপুট দেওয়া ওর কর্ম। সেখানে ধর্ম নামক রোবটিক্সের সূত্র খাটছে কি? সোফিয়া না-মানুষ প্রজাতির প্রথম একজন। এরপর আসছে কিন। ডেভিড হ্যানসন সোফিয়া আর কিনকে নাকি বুড়ো মানুষদের যত্নআত্তিতে কাজে লাগানোর জন্য বানিয়েছেন। পার্কে বা কোন অনুষ্ঠানে মানুষকে সাহায্য করার কাজে নিয়োজিত রাখতে বানিয়েছেন। সোফিয়াও এর সাথে তাল মিলিয়ে বলেছে, মানুষকে আরেকটু ভাল মানুষ-জীবন দিতে চাই আমি। পৃথিবীটা মানুষের জন্য আরেকটু ভাল জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব।

বাব্বাহ্! খাঁটি রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেছিল যে! কেনই বা বলবে না। সোফিয়া খুব শিঘ্রি সফটব্যাংক নামের একটি কোম্পানির মালিক হতে যাচ্ছে। সেখানে কেবল রোবটই বানানো হবে। এক মিনিটে এক হাজার রোবট সাপ্লাই দেওয়া এই কোম্পানির জন্য কোন ব্যাপারই নাকি হবে না।

একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর!
লেখক : কথাসাহিত্যিক।

এইচআর/আইআই