‘ব্লু হোয়েল’ আতঙ্ক দূর করুন
প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষজন প্রযুক্তিনির্ভর হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবকিছুরই একটি পরিমিত ব্যবহার এবং মাত্রা থাকা উচিত। সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে নানা কথা উঠছে। বিশেষ করে টিনেজারদের হাতে স্মার্টফোন দেয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রাণঘাতী ‘ব্লু হোয়েল’ গেম নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক । বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত জরুরি।
এ ব্যাপারে হাইকোর্টের মন্তব্যও প্রণিধানযোগ্য। প্রাণঘাতী ব্লু হোয়েল গেম এর মতো মরণ খেলায় মেতে উঠতে পারে এমন টিনএজ বয়সীদের স্মার্টফোন দেয়া উচিত না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লু হোয়েলসহ এ জাতীয় মরণখেলার গেটওয়ে নিয়ে দায়ের করা রিটের শুনানিতে গত সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন। এ সময় আদালত আরও বলেন, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদেরও দায়-দায়িত্ব আছে। ম্যাচিউর না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাদের স্মার্টফোন দেয়া উচিত না। সেটা ২২ ও ২৩ বছর হতে পারে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে আদালত রুলসহ নির্দেশনা দিয়েছেন। ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লু হোয়েলসহ এ জাতীয় মরণখেলার গেটওয়ে লিংক ছয় মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, দেশের মুঠোফোন অপারেটরদের রাত্রিকালীন বিশেষ ইন্টারনেট অফারও ছয় মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে শ্রীপুর উপজেলায় অনলাইন সুইসাইড গেম ‘ব্লু হোয়েল’ খেলতে গিয়ে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে রাকিব হোসেন নামে এক স্কুলছাত্র। রাকিব শ্রীপুর পৌর এলাকার বেড়াইদেরচালা গ্রামের কৃষক শামসুল হকের ছেলে এবং কেওয়া পশ্চিম খণ্ড (দরগারচালা) গ্রামের গাজীপুর মেরিডিয়ান স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্কুলের ম্যাডাম ক্লাস নেয়ার সময় রাকিবের বাম হাতে ব্যান্ডেজ দেখতে পান। পরে তার কাছ থেকে শুনে রাকিবের কাছে গিয়ে ব্যান্ডেজের কারণ জানতে চাইলে সে কোনো উত্তর দিতে না পারায় তাকে প্রিন্সিপালের কক্ষে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে উল্টাপাল্টা জবাব দেয়। পরে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়।
টিনেজারদের স্মার্টফোনের ব্যবহার নিয়ে নানা সময়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর লোভনীয় অফারের কারণে অনেক শিক্ষার্থীই লেখাপড়া না করে রাত জেগে ফোনে কথা বলে। এতে শুধু পড়াশোনারই ক্ষতি হয় না, স্বাস্থ্যঝুঁকিও দেখা দেয়।
এছাড়া ইদানীং ব্লু হোয়েল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা। ইতোমধ্যেই এই গেম খেলতে গিয়ে অনেকের আহত হওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। বিটিআরসিকে এ ব্যাপারে ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আধুনিক দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু যে কোনো জিনিসের মাত্রাতিরিক্ত ও অপব্যবহার অবশ্যই ক্ষতির কারণ। সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
এইচআর/আইআই